Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

একটি সুন্দর বাংলাদেশের গল্পে পুলিশি হয়রানির কথা লিখলেন যুবক


১১ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০২:১৫

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট ।।

ঢাকা: ‘একটি সুন্দর বাংলাদেশের গল্প’ শিরোনামে পুলিশের দ্বারা হয়রানি ও শারীরিক নির্যাতনের ছবি ফেসবুকে প্রকাশ করে স্টাটাস দিয়ে বাংলাদেশ পুলিশের যথাযথ কর্তৃপক্ষের নিকট সুষ্ঠু তদন্ত করে যথাযত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন আশরাফুল আলম সুমন ওরফে আনন্দ কুটুম। পেশায় তিনি একজন প্রধান সহকারী বিজ্ঞাপন নির্মাতা বলে পরিচয় উল্লেখ করেছেন। বরিবার (১০ ফেব্রুয়ারি) রাতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ঘটনার বিবরণ তুলে ধরে স্টাটাস দেন আশরাফুল আলম সুমন।

বিজ্ঞাপন

তবে গুলশান-১ এর ঘটনার বিষয়ে পুলিশ কিছু জানে না বলে জানিয়েছে। ঘটনার বিষয়ে জানতে চাইলে গুলশানের ওসি আবু বকরসিদ্দীক সারাবাংলাকে বলেন, এরকম কোনো ঘটনা ঘটে থাকলে কমপ্লেইন দিতে হবে তো, কমপ্লেইন না পেলে কি ব্যবস্থা নেবো? ডিসি মোস্তাক আহমেদও এরকম কিছু ঘটেছে বলে জানেন না।

ভিকটিম আশরাফুল আলম সুমন ওরফে আনন্দ কুটুম ‘একটি সুন্দর বাংলাদেশের গল্প…” গল্পে ফেসবুক স্টাটাসে ঘটনার বিবরণ তুলে ধরেন।

পাঠকদের জন্য তার স্টাটাসটি হুবহু তুলে ধরা হলোঃ 

আমি আশরাফুল আলম সুমন ওরফে আনন্দ কুটুম। একজন প্রধান সহকারী বিজ্ঞাপন নির্মাতা। আজ আনুমানিক দুপুর চারটার (৪:০০) দিকে গুলশানের একটি অফিসে মিটিং শেষে আমি মহাখালী গুলশান রাস্তা দিয়ে পায়ে হেটে গুলশান ১ এর দিকে আসছিলাম। পথিমধ্যে চেকপোস্ট-২ (ব্রিজের উপর) এ আমাকে পুলিশ আটকে তল্লাসি করতে চাইলে আমি দাঁড়িয়ে অনুরোধ করি যে আমার হাতের জ্বলন্ত সিগারেটটা শেষ করার জন্য দুই মিনিট সময় দেওয়া হোক। দায়িত্বপ্রাপ্ত পুলিশ সময় দিলে আমি পাশে আইল্যান্ডের উপর দাঁড়িয়ে সিগারেট শেষ করে তার কাছে ফিরে এসে জিগ্যেস করি, বলুন।

বিজ্ঞাপন

তিনি আমাকে তল্লাসি করতে চাইলে আমি তাকে আমার কাধের ব্যাগ খুলে হাতে দেই। তিনি আমাকে ব্যাগের চেন খুলে দিতে বলেন, আমি চেইন খুলে দেই। তিনি ব্যাগ তল্লাসি শেষে আমাকে পকেট থেকে মোবাইল, মানিব্যাগ বের করতে বলেন। আমি মোবাইল এবং মানিব্যাগ বের করার পর তিনি আমার শরীর তল্লাসি করেন এবং বাজে ভাবে শরীরের বিভিন্ন অঙ্গে হাত দেন। যেটা অনেকটা সমকামী আচরণ বলেই আমার মনে হয়েছে।

আমি তাকে বিনয়ের সাথে বলি, আপনি চেক করবেন করেন, কিন্তু শরীরের সেন্সেটিভ স্থানে চাপ দিচ্ছেন কেন? তিনি আমার প্রশ্নে রেগে গিয়ে আমাকে বলেন এটা তার ডিউটির অংশ। আমি বলি, মানুষকে শারীরিক ভাবে অসম্মান করা কিভাবে আপনার ডিউটির অংশ হতে পারে? তিনি তার সিনিয়র ‘কাদির’ সাহেবকে ডেকে আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ করে। কাদির সাহেব এসে বলেন, ‘আপনি তো মেয়ে নয়, আপনাকে চাপ দিলে সমস্যা কী?’

আমি বলি, ‘প্রশ্নটা ছেলে বা মেয়ের নয়। প্রশ্ন হল, আপনি কেউকে প্রকাশ্যে এভাবে শারীরিক ভাবে অসম্মান করে চাপ দিতে পারেন কি না? তখন আগের সেই পুলিশটি আমাকে বাজে ভাষায় গালি দিয়ে আমাকে আঙ্গুল তুলে শাসায়। তখন আমি তাকে আঙ্গুল তুলে বলি, ‘আঙ্গুল তুলে কথা বলবেন না। আর অকারণ গালি দিবেন না।’ এবার সে আমার দিকে বন্দুক তুলে বলে ‘তোকে এখানেই মেরে ফেলব, শুওরের বাচ্চা’।

আমি তখন মোবাইল বের করে ভিডিও করতে গেলে আমার মোবাইল কেড়ে নিয়ে বলা হয় যে আমাকে এরেস্ট করা হল। তার সাথে পুলিশ বক্সে যেতে হবে। যেহেতু আমি একজন আইন মেনে চলা নাগরিক সুতরাং আমি তার সাথে তার নির্দেশে পুলিশ বক্সে যাই। পুলিশ বক্সে নেওয়ার পরে কোন ধরেনের সিগন্যাল ছাড়াই কাদির আমাকে বেধড়ক পেটায়। লাথি মারে আর অকথ্য ভাষায় গালাগাল করে। এরপর আমার মোবাইল আটকে রাখে। আমি তাকে অনুরোধ করে বলি যে, যেহেতু আমাকে এরেস্ট করা হয়েছে আমার ফ্যামিলিকে জানানোর সুযোগ দেওয়া হোক। আমাকে ফ্যামিলির সাথে কোন প্রকার যোগাযোগ করতে না দিয়ে আরেক তরফা মারধর করে। যাতে আমার শরীরের বিভিন্ন অংশ চিড়ে যায়।

এর পর সে আমাকে বলে, ‘আমি ছাত্রলীগ করে এসেছি। তুই আমারে ক্ষমতা দেখাস?’ খুবই দুঃখের বিষয় হল যে আজকাল পুলিশকে ছাত্রলীগের নাম ব্যবহার করতে হচ্ছে অন্যায় কাজের বৈধতা পেতে। আমি প্রতিবাদ করে বলি, ‘আপনি অকারণে ছাত্রলীগের নাম কেন কলুষিত করছেন? তিনি আমাকে আরও অকথ্য ভাষায় গালি দিয়ে প্রায় আধা ঘন্টা পরে আমাকে আমার মোবাইল ফেরত দেয়। তারপর আমি আমার বড় ভাই চলচ্চিত্র পরিচালক ফাখরুল আরেফীন খানকে ফোন করলে তিনি এসে আমাকে ছাড়িয়ে নেন। ততোক্ষণে আরও একজন উর্ধতন কর্মকর্তা এসে হাজির হন। তখন কাদির পুরো বিষয়টা উল্টে দিয়ে আমার ঘাড়েই দোষ চাপায় যা পুরোটাই মিথ্যা।

আমি সবিনয় নিবেদন করছি বাংলাদেশ পুলিশের যথাযথ কতৃপক্ষের নিকট এর সুষ্ঠু তদন্ত করে যথাযত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য। আমি ২৫ বছরের একজন তরুণ। পড়ালেখা করেছি দেশের বাইরে। নিজের দেশে ফিরে এসেই যদি এমন পরিস্থিতিতে পড়তে হয় তবে মনে করছি দেশ থেকে বিদেশই উত্তম।

আমার দাদু একজন মুক্তিযোদ্ধা। আমার মা একজন প্রথম শ্রেণীর সরকারী কর্মকর্তা। আমরা আমাদের প্রতিটি দিন কোন না কোন ভাবে দেশের সেবায় ব্যয় করি। সেই দায়বদ্ধতা থেকেই আমার দেশে ফেরৎ আসা। কিন্তু এ কেমন দেশ আমার??

  •  প্রথমত তিনি শারীরিক ভাবে অপমান করেছে এবং এই নিয়ে তিনি অনুতপ্ত নয়।
  • তিনি আমার বাবা মাকে গালি দিয়েছেন
  • তিনি প্রকাশ্যে আমাকে গুলি করে মেরে ফেলার হুমকি দিয়েছেন
  • তিনি ছাত্রলীগের নাম ব্যবহার করে ক্রাইম করেছেন
  • তিনি কোন প্রকার আইনগত নির্দেশনা ছাড়াই আমাকে পিটিয়েছেন যার নিশানা আমার শরীরে লেগে আছে
  • তিনি সব কিছু অস্বীকার করে মিথ্যা বয়ান দিয়েছেন সিনিয়রের কাছে।

আশা করি বাংলাদেশ পুলিশ বুঝতে সমর্থ হবে যে কতোটা বাজে সিচ্যুয়েশনের মধ্য দিয়ে আমাকে যেতে হয়েছে। এটা কি আমাদের প্রিয় বাংলাদেশের চিত্র? এটাই কি আমাদের প্রিয় পুলিশের চিরায়ত রূপ?? এর কী বিচার হবে না? দুঃখজনক।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশন, বাংলাদেশ পুলিশ হেডকোয়ার্টার এবং বাংলাদেশ পুলিশের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন ভিকটিম আশরাফুল আলম সুমন।

সারাবাংলা/এনআর/ইউজে/টিএস

আশরাফুল আলম সুমন জাতীয় মানবাধিকার কমিশন বাংলাদেশ পুলিশ

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর