আগুন আতঙ্কে কেটেছে সারারাত!
২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ১৭:০১
।। আবদুল জাব্বার খান, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট।।
ঢাকা: ‘হঠাৎ বিকট শব্দ শুনি। প্রথমে মনে হয়েছিল পটকা ফেটেছে। এরপরই আগুনের দাউ দাউ শব্দ শুনতে পাই। বাসা থেকে বের হয়ে সামনে দিকে দৌড় দেই। সামনে এসে দেখি, আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে। এরপর পেছন দিকে ঘুরে আমার মামা-মামিদের উদ্ধার করি। সব কিছু ফেলে কোনো রকম জীবন নিয়ে দূরে গিয়ে আশ্রয় নেই। এরপর আতঙ্ক ও অজানা ভয়ে কেটেছে সারারাত। আগুনের এমন ভয়ানক রূপ এর আগে কখনো দেখিনি।’ এভাবেই চকবাজারের চুড়িহাট্টার আগুন লাগার বর্ণনা দিচ্ছিলেন স্থানীয় বাসিন্দা জান্নাতুল বৃষ্টি।
বৃষ্টি জানান, ঘটনাস্থলের পাশে বিল্ডিংটা তার মামার। এর পাঁচ-ছয় বাড়ির পরেই তারা থাকেন। রাত আনুমানিক সাড়ে ১০টার দিকে হঠাৎ বিকট শব্দ শুনতে পান তিনি। প্রথমেই মনে হয়েছিল কেউ পটকা ফাটাচ্ছে। কিন্তু কয়েক মিনিট পরেই মানুষের চিৎকার ও বিস্ফোরণের শব্দ শোনেন। তিনি বলেন, ‘তখন আমরা বাসা থেকে বের হয়ে সামনে গিয়ে দেখি আগুন আর আগুন। পেছনের ভিন্ন একটি রাস্তা দিয়ে দ্রুত ঘুরে আসি। কারণ ঘটনাস্থলের পাশেই আমার মামার বাড়ি। মামা বাসার বাইরে থাকায় মামিসহ আত্মীয়-স্বজনদের উদ্ধার করে নিয়ে যাই। এরপর সারারাত কীভাবে কেটেছে, তা ভাষায় বোঝাতে পারবো না।’
আগুন লাগার ঘটনা যখন বৃষ্টি বর্ণনা করছিলেন, তখন পাশেই দাঁড়িয়ে ছিলেন তার মামা হাজী সুলতান। তখনো তার চোখে-মুখে আতঙ্ক। ভাবছেন ওয়াহেদ ম্যানশনের মতো তার ভবনটিও হতে পারতো লাশের স্তূপ। সৌভাগ্যক্রমে বেঁচে গেছে তার পরিবার। কিন্তু ভবনের অনেকাংশই ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে গেছে।
হাজী সুলতান বলেন, ‘ঘটনার সময় আমি বাড়ির বাইরে ছিলেন। আগুনের খবর পেয়ে দৌড়ে বাসার কাছে এসে দেখি, আগুন জ্বলছে। এ সময় পাগলের মতো তার পরিবারের খোঁজ খবর নিতে থাকি। পরে জানতে পারি, তারা নিরাপদে সরে যেতে পেরেছেন।’
ঘটনাস্থল থেকে চারটা ভবন পরে রয়েছে জুতার পাইকারি দোকান। মার্কেটের তত্ত্বাবধানে রয়েছেন আব্দুল হান্নান। তিনি বলেন, ‘সবেমাত্র আমি সব বন্ধ করে গেটে তালা দিতে গেছি। তখনই দেখলাম একটি পিকআপ গাড়ি বিকট শব্দ করে দুই থেকে তিনতলা পর্যন্ত ওপরে উঠে গেছে। মুহূর্তের মধ্যেই আগুন ছড়িয়ে পড়ে চারপাশে। এ অবস্থা দেখেই আমরা যে যার মএতা নিজেকে বাঁচিয়ে দৌড়ে পালাই। তারপর থেকে সারারাত আতঙ্কে কেটেছে। আগুন কখন যেন ছড়িয়ে পড়ে আমাদের ভবনে।’
চুড়িহাট্টির আগুনের আরেক প্রত্যক্ষদর্শী এসএ টিভির সিনিয়র ভিডিও এডিটর শাকিল। তিনি বলেন, ‘ঘটনাস্থল থেকে আমাদের বাসা ১০টা বিল্ডিং পরে হলেও আগুনের বিকট শব্দে বাসার সব কিছু রেখে দৌড়ে পালাতে হয়েছে। বাসার সবাইকে পার্শ্ববর্তী আত্মীয় স্বজনদের বাসায় নিয়ে রেখে আসি।’
পুরনো ঢাকার চকবাজারের চুড়িহাট্টায় হাজী ওয়াহেদ ম্যানসনের সামনে ঘটে ভয়াবহ এ অগ্নিকাণ্ড। এ ঘটনায় সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী, ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) ও ঢামেক হাসপাতালের মর্গে জমা হয়েছে ৮১টি মরদেহ।
সারাবাংলা/এজেডকে/এমএনএইচ
আরও পড়ুন:
সব পুড়ে ছাই, শুধু পড়ে ছিল ৪টি খুলি
ঢামেক-সলিমুল্লায় উদ্বিগ্ন স্বজনদের ভিড়
নিয়ন্ত্রণে চকবাজারের আগুন, ১১ লাশ উদ্ধার
চারটি ভবনে ছড়ায় আগুন, উদ্ধার হচ্ছে লাশ
সন্তানের খোঁজে হাসপাতাল থেকে হাসপাতালে
চকবাজারে আগুনে দগ্ধ ১৮, নিয়ন্ত্রণে ৩৩ ইউনিট
চকবাজারে একটি পাঁচতলা ভবনে আগুন, দগ্ধ ১৮
বড় হচ্ছে চকবাজারের আগুন, সরু গলি নিয়ন্ত্রণে বড় বাধা
ধসে পড়তে পারে ওয়াহেদ ম্যানসন, মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৬৭
চারতলা ভবনের নিচতলায় ২৪ লাশ, দীর্ঘ হচ্ছে মৃত্যুর মিছিল
‘বিকট শব্দ শোনা যায়, এরপরই জ্বলে ওঠে দাউ দাউ আগুন’
কেমিক্যালের উৎস সরাতে সমন্বিত উদ্যোগ দরকার: আইজিপি
‘আগুনে ক্ষতিগ্রস্তদের পূর্ণ পুনর্বাসন পর্যন্ত পাশে থাকবে সরকার’
মর্গ উপচে লাশের সারি বারান্দায়, ব্যাগের ছাইয়ে প্রিয়জনের খোঁজ
ফের বাড়ছে চকবাজারের আগুন, নিয়ন্ত্রণে যোগ দিলো বিমান বাহিনী