Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

সুদখোর ও এক এডিটর আমাদের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালায়: প্রধানমন্ত্রী


২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ১৬:১২

।। সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট।।

ঢাকা: পদ্মাসেতুতে দুর্নীতি নিয়ে বিশ্বব্যাংকের অভিযোগের কঠোর সমালোচনা করলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘আমাদের দুর্ভাগ্য যে, আমাদের দেশের লোকই আমাদের বদনাম করে। কিছু পত্রিকার এডিটর প্লাস মালিক ও চট্টগ্রামের এক সুদখোর সন্তান আছে, সেই সুদখোর আর এডিটর মিলে স্টেট ডিপার্টমেন্টে আমাদের বিরুদ্ধে সমানে অপপ্রচার চালায়।’ রবিবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে চট্টগ্রামে এক সুধী সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন।

বিজ্ঞাপন

এরআগে চট্টগামে ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল’-এর বোরিং কার্যক্রম ও শহরের লালখান বাজার থেকে শাহ্ আমানত বিমানবন্দর পর্যন্ত এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

এদিন, সকাল পৌনে এগারোটায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দুটি প্রকল্পের নির্মাণ কাজের উদ্বোধন ও সুধী সমাবেশে যোগ দিতে ঢাকা থেকে চট্টগ্রামে পৌঁছান।  দুটি প্রকল্পের উদ্বোধনের পর মোনাজাত ও দোয়ায় অংশ নেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘পদ্মাসেতুর টাকা যখন তারা বন্ধ করেছে, এটা একটা চ্যালেঞ্জ হিসাবে নিয়েছিলাম। এরপর কানাডা কোর্টে মামলা হয়, কিন্তু সেই মামলায় কোনো প্রমাণ ওয়ার্ল্ড ব্যাংক দেখাতে পারেনি।  এখানে কোনো দুর্নীতি হয়েছে। সেই মামলার রায়ে বলে দেন, এখানে কোনো দুর্নীতি হয়নি, বিশ্বব্যাংক যা যা বলেছে, সব ভুয়া, বানোয়াট।’

তখন দুটি বছর সময় নষ্ট হয় উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের অনেকেরই ধারণা ছিল, ওয়ার্ল্ড ব্যাংক ছাড়া বাংলাদেশের কোনো উন্নয়ন সম্ভব নয়।  এরকম একটা চিন্তা নিয়ে সবাই চলতো। আর আমার কথা ছিল, আমরা নিজেরা করব। আমার একজন উপদেষ্টা ও তৎকালীন অর্থমন্ত্রীও আমাকে খুব চাপ দিচ্ছিলেন।’ তিনি আরও বলেন, ‘তাদের (বিশ্বব্যাংক) নানারকম শর্ত, অমুককে অ্যারেস্ট করো, আমরা টাকা দেব।  অমুককে বের করো, আমরা টাকা দেব।’

বিজ্ঞাপন

শেখ হাসিনা বলেন, ‘পদ্মাসেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করে দিয়ে গিয়েছিলাম ২০০১ সালে।  কিন্তু দুঃখের বিষয় বিএনপি ক্ষমতায় আসার পর এই পদ্মাসেতু নির্মাণ কাজ বন্ধ করে দেয়। তারা অ্যালাইনমেন্ট চেঞ্জ করে। তারা বলে, এখানে হবে না, এটা অন্য জায়গায় হবে।  এভাবে তারা কালক্ষেপণ করে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমরা ২০০৮ সালের নির্বাচনে জয়ী হয়ে ২০০৯ সালে যখন সরকার গঠন করি, আবার উদ্যোগ নেই ওই সেতুটি নির্মাণের জন্য। তখন সবাই খুব উৎসাহ দেখায়, এগিয়ে আসে। ওয়ার্ল্ড ব্যাংক, এডিবিসহ প্রত্যেকেই আর্থিক সহায়তা দেওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করে। সবেচেয়ে বেশি উৎসাহ দেখিয়েছিল বিশ্বব্যাংক। ’

এত উৎসাহ নিয়ে এগিয়ে এসেও বিশ্বব্যাংক দুর্নীতির অভিযোগ আনে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘তখনো কোনো টাকা ছাড় নাই, কিছু নাই; তো দুর্নীতিটা হলো কোথায়? যখন এই প্রশ্ন করলাম, তখন উত্তর দিতে পারে না। আমি চ্যালেঞ্জ দিয়েছিলাম, কোথায় দুর্নীতি হয়েছে, সেটা তাদের প্রমাণ করতে হবে, দেখাতে হবে।’ তিনি বলেন, ‘আপনারা শুনলে অবাক হবেন, একটা ছোট কাগজে চিরকুট, এখান থেকে অমুক এত শতাংশ পাবে, অমুক এত শতাংশ পাবে—এভাবে নানা অপপ্রচার চালাতে শুরু করে। তাদের কিছু অফিসার বাংলাদেশে আসতো। বিভিন্ন জায়গায় বসে বসে একটা মিথ্যা অপপ্রচার চালাতো।  আমি নাকি বাংলাদেশের সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত লোক! আমার পুরো পরিবার নাকি দুর্নীতিতে জড়িত! পদ্মাসেতুর টাকা নাকি আমরা লুটে খেয়েছি। টাকাটা তারা দিলো কোথায়, টাকাটা লুটে খাওয়া হলো? আমি এখানে থেমে যাইনি। একটা চ্যালেঞ্জ দিয়েছিলাম, তোমাদের এটা প্রমাণ করতে হবে। তোমাদের টাকা আমি নেবো না।  যদি পারি নিজের টাকায় করবো।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি যখন চ্যালেঞ্জ দিলাম, তখন এটা তাদের পছন্দ হয়নি। তখন আমাদের পক্ষ থেকে ছিলেন ড. মসিউর রহমান। আমি তাকে বললাম, আপনি ওয়ার্ল্ড ব্যাংককে চিঠি দিন, তারা বলেছে দুর্নীতি হয়েছে, তাদের দুর্নীতির প্রমাণ দিতে হবে।’

বারবার চিঠি লেখা সত্ত্বেও তারা প্রমাণ দিতে পারেনি উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘মাঝে মাঝে তাদের ভাইস প্রেসিডেন্ট আসতো, সঙ্গে একজন অফিসার নিয়ে। হাতে একখানা ব্যাগ বগলদাবা করে বসে থাকতো, আর বলতো দুর্নীতি হয়েছে। আমি বলতাম, আপনার ব্যাগের মধ্যে কী কাগজ আছে, বের করুন, দেখান।  আমি দেখতে চাই, কী দুর্নীতি হয়েছে, আমার কে দুর্নীতি করেছে বা আমি কী দুর্নীতি করেছি? আমি নিজে প্রমাণ চাই। তখন বলে, এখন না পরে দেবো।  আমাদের চাপাচাপিতে তারা একবার দুইখানা চিঠি পাঠালো।  চিঠিটা পড়ে আমি বললাম, এটা ২০০২ সালে বিএনপির আমলে, এই মন্ত্রী বিএনপির মন্ত্রী। সেটাও হচ্ছে ঢাকা-ময়মনসিংহ সড়ক এবং আরেকটা হচ্ছে সিদ্ধিরগঞ্জ পাওয়ার প্ল্যান্ট। এই দ্ইুটা নিয়ে। এটার ব্যাপারের সঙ্গে তো পদ্মাসেতুর যোগাযোগ নাই।  পদ্মা সেতুতে কী দুর্নীতি হয়েছে, সেটা আপনাকে প্রমাণ করতে হবে।  বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্টকেও আমি বললাম, এটা প্রমাণ করুন।’

কর্ণফুলীর তলদেশে টানেল নির্মাণ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘২০১০ সালে চট্টগ্রামে এই কর্ণফুলী নদীর তলদেশে টানেল নির্মাণের ঘোষণা দিয়েছিলাম। আর আপনারা জানেন যে, মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি মহিউদ্দিন চৌধুরী, যিনি চট্টগ্রামের মেয়র ছিলেন; তিনি এই টানেল নির্মাণের দাবিতে আন্দোলনও করেছিলেন। কারণ কর্ণফুলী নদীর ওপর দিয়ে ঘন ঘন ব্রিজ করলে পরে নদীর ক্ষতি হবে। আর টানেল করতে পারলে পরে নদীর সেই ক্ষতিটা হবে না, এটাই ছিল তার যুক্তি এবং এটা ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ যুক্তি।’

প্রয়াত মহিউদ্দিন চৌধুরীর কথা স্মরণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘তিনি থাকলে সব চেয়ে বেশি আনন্দিত তিনিই হতেন। কারণ, সবসময় আন্দালনে সংগ্রামে মুক্তিযুদ্ধে তার যথেষ্ট অবদান রয়েছে। কিন্তু আজকে তিনি আর যেটা দেখে যেতে পারলেন না, সেটাই হচ্ছে সবচেয়ে দুঃখজনক।’

কর্ণফুলী টানেল নির্মাণে চীন সরকারের সহযোগিতা করার উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘চীন সাধারণত যদি কোনো দেশকে কনসেশন রেটে কোন সহায়তা দেয় বা ঋণ দেয়, সেটা সাধারণত ৮৫ ভাগ দিয়ে থাকে। কিন্তু বাংলাদেশের জন্য এই ঋণ সহায়তা শতভাগ চীন সরকার দিয়েছে। আমাদের আগ্রহ দেখে তারা এই কনসেশনটা দিয়েছে।’ এই টানেল ২০২২ সালে শেষ হবে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

সারাবাংলা/এনআর/এমএনএইচ

যেভাবে টানেলের যুগে ঢুকে পড়েছে বাংলাদেশ
যেভাবে তৈরি হচ্ছে কর্ণফুলী টানেল
সব প্রস্তুত, উদ্বোধনের অপেক্ষায় কর্ণফুলী টানেলের নির্মাণ কাজ
কর্ণফুলীর তলদেশে বঙ্গবন্ধু টানেল
রূপালি রেখার তলে কর্ণফুলী টানেল, কাজ চলছে পুরোদমে
কর্ণফুলী টানেল (ভিজ্যুয়াল)
বঙ্গবন্ধুর নামে কর্ণফুলী টানেলের নামকরণ প্রস্তাব
দেশের জন্য কাজ করতে চাই সেটাই বড় কথা

পদ্মাসেতু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর