মুষলধারের বৃষ্টিতে সন্ধ্যায় বন্ধ হলো মেলার দুয়ার
২৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ২২:০৮
।। হাসনাত শাহীন।।
ঢাকা: বুধবার ফাগুনের ১৫ তম দিনে আর এবারের প্রাণের মেলার শেষদিনের ঠিক আগের দিনে ‘ফাগুনে আগুন’-এর পরিবর্তে ঝরো ঝরো বাদল দিনের মতো বৃষ্টি পাল্টে দিলো সব হিসাব-নিকেশ। নিভিয়ে দিলো জমে ওঠা এবারের ‘অমর একুশে গ্রন্থমেলার ২৭ তম দিনের সম্ভাব্য কোলাহল। মুষলধারের অনাকাঙ্ক্ষিত বৃষ্টি বড় ক্ষতি করে গেল মেলায় অংশ নেওয়া প্রকাশকদের।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়ার পূর্বাভাস থাকায় মেলার আয়োজক বাংলা একাডেমি কর্তৃপক্ষ ২৩ ফেব্রুয়ারির পরে বৃষ্টি-বাদলের সম্ভাবনা আছে বলে অগ্রিম সর্তকা বার্তা দেয়। সেই অগ্রিম সর্তকবার্তার কারণে আগে থেকেই সর্তক হয়েছিলো অমর একুশে গ্রন্থমেলায় অংশ নেওয়া প্রকাশকরা। সেই সঙ্গে গত তিনদিনের রাতের ও দিনের বিভিন্ন সময়ের বৃষ্টির কারণে মেলার শেষ সময়ের পরিস্থিতি নিয়ে শঙ্কায় ছিলেন তারা।
বুধবার মেলার ২৭তম দিনের বিকেলে একটানা ফাগুনে শ্রাবণধারার মতো মুষলধারের বৃষ্টি সেই শঙ্কাকে অবশেষে সত্যে পরিগণিত করল। যার ফলে একেবারে শেষদিকের বইমেলায় চূড়ান্ত বিক্রির বদলে মেলার আয়োজক কর্তৃপক্ষ বাংলা একাডেমি সন্ধ্যা ৬টায় এ দিনের মেলার দ্বার বন্ধ ঘোষণা করতে বাধ্য হলো।
এর আগে বিকেল তিনটায় মেলার প্রবেশদ্বার খোলার পর বইপ্রেমীদের ভিড় বাড়তে থাকে। স্টল ও প্যাভিলিয়ন ঘুরে ঘুরে পছন্দের বইগুলোও কিনছিলেন পাঠকরা। সময় বাড়তে থাকার সঙ্গে সঙ্গে লোক সমাগম এবং বিক্রিও বাড়তে থাকে। প্রফুল্লচিত্তেই ছিলেন প্রকাশক ও বিক্রয়কর্মীরা। কিন্তু বিকেল সাড়ে চারটার হঠাৎ বৃষ্টি লণ্ডভণ্ড করে দেয় মেলার দুই প্রাঙ্গণকেই।
মেলার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আগত বইপ্রেমীরা এ সময় ছোটাছুটি করতে থাকেন এদিক-সেদিক। কেউ কেউ আশ্রয় নেন বিভিন্ন স্টলের ভেতরে, আবার কেউ কেউ আশ্রয় নিরাপত্তাকর্মীদের তাঁবুতে। নিজেদের বইগুলোকে ভেজার হাত থেকে রক্ষায় এ সময় ব্যস্ত হয়ে পড়েন প্রকাশনা সংস্থায় কর্মরতরা। পানি নিরোধক কাপড় ও পলিথিন দিয়ে মুড়িয়ে দেওয়া হয় স্টল ও প্যাভিলিয়নের বইয়ের তাকগুলো।
প্রকাশনা সংস্থা ঐতিহ্যের ব্যবস্থাপক আমজাদ হোসেন কাজল সারাবাংলাকে বলেন, ‘মেলার শুরু থেকে সবকিছু ভালোই চলছিলো। কিন্তু বিকেলের বৃষ্টি সবকিছু লণ্ডভণ্ড করে দিল। বৃষ্টিতে প্যাভিলিয়ন-স্টল কিংবা মেলার প্রধান বিষয় বইয়ের তেমন ক্ষতি না হলেও বৃষ্টিতে ধুয়ে-মুছে গেল আজকের দিনের বিক্রি-বাট্টাও।
ইত্যাদি গ্রন্থপ্রকাশের অন্যতম স্বত্বাধিকারী জহিরুল আবেদিন জুয়েল সারাবাংলাকে বলেন, ‘শেষদিনের আগের দিন মেলায় বিকিকিনি থাকে আশাব্যঞ্জক। কিন্তু আজকের বৃষ্টিতে আমাদের প্রায় সব প্রকাশকদেরই ক্ষতি হয়েছে। ফাগুনের দিনে অপ্রত্যাশিত এই বৃষ্টি না নামলে এবারের মেলার সফলতার চিত্রটা একেবারেই ভিন্ন হতো।’
অন্বেষা প্রকাশনের স্বত্বাধিকারী শাহাদাত হোসেন বলেন, ‘এই সময়টাতে প্রায় সব প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানেই কম বেশি বিক্রি হয়। এ সময়টার জন্য অপেক্ষায় থাকেন প্রকাশকরা।’
বৃষ্টির কারণে মেলার সময় বাড়ানো উচিৎ কি না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি, ফেব্রুয়ারির মেলা ফেব্রুয়ারিতেই শেষ হওয়া উচিৎ। মেলার সময় বাড়ালেই যে ক্ষতি পুষিয়ে যাবে তা কিন্তু ঠিক নয়।’
সারাবাংলা/একে