‘উত্তেজিত’ টাস্কফোর্সের ঢিলেঢালা অভিযান
২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ১৮:০৯
।। সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট ।।
ঢাকা: রাজধানীর চকবাজারের চুড়িহাট্টা এলাকায় অগ্নিকাণ্ডে ৭০ জনের প্রাণহানির পর পুরান ঢাকা থেকে সব ধরনের কেমিক্যাল গোডাউন সরাতে তড়িঘড়ি করে টাস্কফোর্স গঠন করে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন। হুংকার, হুমকির পর ঢাকঢোল পিটিয়ে অভিযানেও নেমেছে সেই টাস্কফোর্স। কিন্তু সেই হুংকার-হুমকির ছিটেফোটাও উপস্থিত দেখা গেল না অভিযানে। কিছু কেমিক্যালের গোডাউন পাওয়া গেলে সেগুলো থেকে মালামাল সরিয়ে নিতে সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছে রোববার (৩ মার্চ) পর্যন্ত। এর মধ্যে না সরালে তাদের বিরুদ্ধে ফের কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারি দেন টাস্কফোর্সের নেতৃত্বে থাকা কর্মকর্তারা।
কেমিক্যাল গোডাউন সরানোর এই অভিযান শুরু হয় বৃহস্পতিবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) সকাল ১১টায়, রাজধানীর পুরান ঢাকার ইসলামবাগ এলাকা থেকে।
আরও পড়ুন- ‘অবৈধ কেমিক্যাল গোডাউন পাওয়া গেলে পানি-গ্যাস-বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন’
অভিযানে কেমিক্যাল গোডাউনের সন্ধান তেমন একটা না পাওয়া গেলেও বেশ কয়েকটি প্লাস্টিকের দানার গোডাউন পাওয়া যায়। ওইসব গোডাউন রাখা যাবে না মর্মে মালিককে আগামী রোববার পর্যন্ত সময় দেন টাস্কফোর্স কর্মকর্তা। বলেন, এই সময়ের মধ্যে মালামাল সরিয়ে নিতে হবে। আর আবাসিক ভবনে গোডাউন রাখার অভিযোগে ওইসব ভবনের গ্যাস, বিদ্যুৎ ও পানির লাইন বিচ্ছিন্ন করা হয়। বলা হয়, মালপত্র সরিয়ে নেওয়ার পর ফের এসব সংযোগ নিতে পারবেন ভবন মালিকরা।
অভিযানে ইসলামবাগ এলাকার ১১/৪ নম্বর ভবনের নিচ তলায় পাওয়া যায় ক্যালসিয়ামের গোডাউন। ফরিদ আহমেদ এই গোডাউনের মালিক। গোডাউন রাখায় ছয় তলা এই ভবনের গ্যাস, বিদ্যুৎ ও পানির সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়। একইভাবে ১২/৪ নম্বর ভবনেও বিচ্ছিন্ন করা হয় সব ধরনের সেবার সংযোগ।
এদিকে, ৭০/৩ নম্বর ভবনে গিয়ে গোডাউন তালাবদ্ধ পাওয়া যায়। স্থানীয়রা বলছিলেন, অভিযানের খবর পেয়ে গোডাউনের মালিক পালিয়েছে। মালিককে না পেয়ে পাশের এক দোকানদারকে টাস্কফোর্সের কর্মকর্তারা বলেন, মালিককে গোডাউন সরাতে বলবেন। না হলে রোববারের পর কোমরে রশি পড়িয়ে নিয়ে যাওয়া হবে।
আরও পড়ুন- কেমিক্যাল গোডাউন ৩ মার্চের মধ্যে সরিয়ে নেওয়ার নির্দেশ
এরপর টাস্কফোর্সের কর্মকর্তারা চিপাগলির ভেতর একটি বহুতল ভবনে যান। সেখানে বাইরে আরবি পড়ানোর মক্তবের সাইনবোর্ড লাগানো থাকলেও ভেতরে এবং আশপাশের সব বাসার নিচে বেশ কয়েকটি গোডাউনের সন্ধান মেলে। সবগুলো বাসাতেই বিদ্যুৎ, গ্যাস ও পানির লাইন বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয়।
অভিযানের নেতৃত্বে থাকা ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল রশীদ আহমেদ সাংবাদিকদের বলেন, আমরা আটটি গোডাউনের সন্ধান পেয়ে অভিযান শুরু করি। এর মধ্যে ছয়টি গোডাউনের মালিককে পেয়ে আগামী রোববার পর্যন্ত মালামাল অপসারণের জন্য সময় দিয়েছি। আমরা ওই ভবনগুলোর বিদ্যুৎ, গ্যাস ও পানির লাইন বিচ্ছিন্ন করেছি। আজ প্রথম সতর্ক করা হচ্ছে। আমরা বলছি, কোনো আবাসিক ভবনে গোডাউন থাকবে না। সেটা কেমিক্যাল হোক আর দাহ্য পদার্থের হোক। এরপর না সরালে রোববারের পর কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। যেকোনো মূল্যে মানুষের জানমালের নিরাপত্তা রক্ষা করাই এ অভিযানের মূল লক্ষ্য বলে জানান তিনি।
ওই স্বাস্থ্য কর্মকর্তা আরও বলেন, এলাকাবাসীর সহযোগিতা চাই। তাদের এগিয়ে আসতে হবে। তা না হলে আগুন লাগলে সবার আগে এলাকাবাসীরই বেশি ক্ষতি হয়। ৬৮ জনের প্রাণহানি হয়েছে। এখানকার মানুষজনই মারা গেছে।
আরও পড়ুন- কেমিক্যাল গোডাউন সরাতে টাস্কফোর্স মাঠে নামছে ২৮ ফেব্রুয়ারি
এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, পুরো ইসলামবাগ এলাকায় যত বাসাবাড়ি আছে, তার অন্তত ৯৫ ভাগ বাড়ির নিচ তলাতেই এরকম ছোট-বড় গোডাউন আছে। কোথাও কেমিক্যাল, কোথাও প্লাস্টিকের দানা, কোথাও জুতার কারখানা, কোথাও প্লাস্টিক ভাঙার কারখানা, কোথাও পলি তৈরির কারখানা, কোথাও প্লাস্টিকের আসবাবপত্র তৈরির কারখানা রয়েছে। দুয়েকটি গোডাউন সরিয়ে দিয়ে এ সমস্যার সমাধান হবে না। সময় নিয়ে কঠোরভাবে সব কারখানা তুলে দিতে হবে। তুলে দেওয়ার পরও মনিটরিং করতে হবে। তা না হলে ফের বাসাবাড়িতে জায়গা করে নেবে এসব গোডাউন।
ইসলামবাগ এলাকার বড়টেক গলিতে অভিযানের সময় স্থানীয় বাসিন্দা নুর ইসলাম বলেন, ‘গত ৪০ বছরে বহু দেখেছি। সবাই হুংকার দেয়, আবার থেমে যায়। কেউ সরাতে পারেনি এসব গোডাউন। দু’মাস পর সব আগের মতো হয়ে যাবে। শুনেছি, টাস্কফোর্স নাকি সব গোডাউন ম্যাসাকার করে দেবে। কিন্তু টাস্কফোর্স তো অনেক ঢিলেঢালা অভিযান করছে।’ এমনভাবে অভিযান চললে কেউ গোডাউন সরিয়ে নেবে না বলেই মনে করেন স্থানীয় এই বাসিন্দা।
আরও পড়ুন- কেন পুরান ঢাকার কেমিক্যাল গোডাউন সরানো হবে না?
উল্লেখ্য, ২০ ফেব্রুয়ারি রাতে চকবাজার চুড়িহাট্টায় হাজী ওয়াহেদ ম্যানসনে আগুন লাগলে ৬৭ জন মারা যান। পরে আগুনে দগ্ধ একজন চিকিৎসাধীন অবস্থায় প্রাণ হারান। দগ্ধ হয়েছেন আরও ৪০ জন।
ওই ভয়াবহ আগুন দুর্ঘটনার পর গত ২৫ ফেব্রুয়ারি দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন পুরান ঢাকার আবাসিক এলাকা থেকে কেমিক্যাল গোডাউন বা কারখানা অপসারণে টাস্কফোর্স গঠন করেন। গোয়েন্দাদের তথ্য অনুযায়ী, যেখানেই কেমিক্যাল গোডাউন পাওয়া যাবে সেখানেই অভিযান চালিয়ে গোডাউন সরিয়ে দেবে টাস্কফোর্সের কর্মকর্তারা।
সারাবাংলা/ইউজে/টিআর
কেমিক্যাল গোডাউন অপসারণ চুড়িহাট্টায় আগুন টাস্কফোর্স টাস্কফোর্সের অভিযান পুরান ঢাকায় অভিযান