পুনঃতফসিলে ডাকসুর নতুন ভোটের দাবিতে অনশনে ৪ স্বতন্ত্র প্রার্থী
১২ মার্চ ২০১৯ ১৯:৩১
।। স্টাফ করেসপন্ডেন্ট ।।
ঢাকা: সদ্য অনুষ্ঠিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনকে ‘প্রহসনের নির্বাচন’ আখ্যা দিয়ে নতুন করে এই নির্বাচনের দাবিতে আমরণ অনশনে বসেছেন অনুষ্ঠিত নির্বাচনের চার স্বতন্ত্র প্রার্থী।
তারা বলছেন, দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর ডাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলেও বিভিন্ন অনিয়মের মাধ্যমে এই নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে, কলঙ্কিত হয়েছে। নির্বাচনের দিন যেভাবে ভোটারদের বাধা দেওয়া হয়েছে, তা গণতান্ত্রিক চেতনার বিরোধী। তাই তারা সোমবার (১১ মার্চ) অনুষ্ঠিত নির্বাচন বাতিল করে পুনঃতফসিল ঘোষণার মাধ্যমে নতুন করে ডাকসু নির্বাচন আয়োজনের দাবি জানিয়েছেন।
আরও পড়ুন- ফের ডাকসু নির্বাচনের দাবিতে ৫ প্যানেলের অবস্থান বুধবার
মঙ্গলবার (১২ মার্চ) সন্ধ্যায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র (টিএসসি) এলাকার রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে অনশন শুরু করেন। অনশনে বসা চার জন হলেন— তাওহীদ তানজিম, শোয়েব মাহমুদ, অনিন্দ্য মণ্ডল ও মাইন উদ্দিন। এর মধ্যে তাওহীদ তানজিম ডাকসু নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে স্বতন্ত্র জোট থেকে পরিবহন সম্পাদক পদে নির্বাচন করেছেন। বাকি তিন জনই হল সংসদের বিভিন্ন পদে প্রার্থী ছিলেন।
অনশনরত তাওহীদ তানজিম ঢাবি কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং (সিএসই) বিভাগের শিক্ষার্থী। ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ হলের এই শিক্ষার্থী সারাবাংলাকে বলেন, আমি নির্বাচনে জিএস পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলাম। কিন্তু নির্বাচনে জিততেই হবে, এমনটা কখনও চাইনি। চেয়েছিলাম যেন সুষ্ঠু একটি ভোট হয়।
আরও পড়ুন: ছাত্রলীগের সঙ্গে আলোচনা শেষে ক্লাস বর্জন কর্মসূচি প্রত্যাহার
ডাকসু নির্বাচনের ভোটগ্রহণে নিজ হলেই বিভিন্ন অনিয়ম হয়েছে বলে অভিযোগ করেন তানজিম। তিনি বলেন, শহীদুল্লাহ হলের অনাবাসিক শিক্ষার্থীরা এই নির্বাচনে ভোট দিতে পারেনি। ভোটের লাইন দখলে নিয়ে ছাত্রলীগের ছেলেরা লুডো খেলেছে। আমি স্বতন্ত্র প্রার্থী ছিলাম, হয়তো তাদের মতো শক্তিমত্তা নেই। তাই দুর্বল প্রার্থী হিসেবে আমাকে টিজ করেছে, হয়রানি করেছে। এই পুরো বিষয়টি আমাকে প্রচণ্ডভাবে আহত করেছে। আমি কান্না পর্যন্ত করেছি। কোনোভাবেই মানতে পারিনি, এতদিন পর অনুষ্ঠিত ডাকসু নির্বাচন শেষ পর্যন্ত এইরকম একটি প্রহসনের নির্বাচনে পরিণত হবে।
নতুন করে নির্বাচনের দাবি তুলে স্বতন্ত্র এই প্রার্থী বলেন, এখন আমাদের দাবি, আমরা পুনঃতফসিলের মাধ্যমে নতুন করে ডাকসু নির্বাচন চাই। আমরা এমন একটি নির্বাচন চাই, যেখানে সব ভোটার তার নিজের পছন্দমতো প্রার্থীদের ভোট দিতে পারবে। নতুন করে নির্বাচন হোক, তাতে আমি না জিতলে, ভোট না পেলেও কোনো আফসোস নেই। সুষ্ঠু ভোট হোক, এটাই আমার চাওয়া।
আরও পড়ুন- ভিসির বাসার সামনে থেকে নেতাকর্মীদের সরে যাওয়ার নির্দেশ শোভনের
তানজিমের সঙ্গে একমত পোষণ করে বাকি তিন প্রার্থীও বলেন, তারা নতুন করে ডাকসু নির্বাচনের জন্য পুনঃতফসিল ঘোষণা না হওয়া পর্যন্ত অনশন চালিয়ে যাবেন। কিন্তু সুষ্ঠু একটি নির্বাচনের মাধ্যমে ডাকসু নির্বাচন কলঙ্কমুক্ত হোক, এটাই তাদের একমাত্র চাওয়া।
উল্লেখ্য, দীর্ঘ ২৮ বছর পর সোমবার অনুষ্ঠিত হয় ডাকসু নির্বাচন। পাশাপাশি ঢাবি’র ১৮টি শিক্ষার্থী হলের হল সংসদ নির্বাচনও অনুষ্ঠিত হয়। তবে সোমবার সকাল থেকেই নির্বাচন ঘিরে বিভিন্ন ধরনের অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া যায়। এর মধ্যে মেয়েদের বাংলাদেশ-কুয়েত মৈত্রী হল থেকে সিল মারা ব্যালট ও রোকেয়া হল থেকে ট্রাংক ভর্তি ব্যালট উদ্ধার করা হয়। ওই দুই হলে দীর্ঘ সময় ভোটগ্রহণ স্থগিত ছিল। মৈত্রী হলের প্রাধ্যক্ষকেও বরখাস্ত করা হয় এ ঘটনায়।
আরও পড়ুন- কারো মিষ্টি কথায় ভুলবো না: অরণী সেমন্তী খান (ভিডিও)
এছাড়া, অন্যান্য হলেও ভোটের লাইনে ধীরগতি, অনাবাসিক শিক্ষার্থীদের ভোট দিতে বাধা দেওয়ার মতো অভিযোগ পাওয়া যায়। এসব অনিয়মের অভিযোগে সোমবার দুপুরে ডাকসু নির্বাচন বয়কটের ঘোষণা দেয় বামজোটসহ চার প্যানেল। তারা নির্বাচন বাতিল ঘোষণা করে নতুন করে নির্বাচন আয়োজনের দাবি জানান।
এদিকে, সোমবার দুপুর ২টায় ১৬টি হল, বিকেল ৫টায় কুয়েত মৈত্রী হল ও সন্ধ্যা ৬টায় রোকেয়া হলের ভোটগ্রহণ শেষ হয়। তবে ডাকসুর ফল পেতে অপেক্ষা করতে হয় দিবাগত রাত সাড়ে ৩টা পর্যন্ত। ডাকসুর প্রেসিডেন্ট ও ঢাবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. আখতারুজ্জামান ফল ঘোষণা করেন। নির্বাচনে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি রেজওয়ানুল হক শোভনকে প্রায় দুই হাজার ভোটের ব্যবধানে পেছনে ফেলে সহসভাপতি (ভিপি) নির্বাচিত হন কোটা আন্দোলনের নেতা ও ছাত্র অধিকার রক্ষা পরিষদের প্রার্থী নুরুল হক নুর। অন্যদিকে সাধারণ সম্পাদক (জিএস) পদে ছাত্রলীগের গোলাম রাব্বানীসহ ১৩ প্রার্থী জয় পান। আর সমাজসেবা সম্পাদক পদে জয়ী হন নুরুল হকের প্যানেলের আখতার হোসেন। ফল ঘোষণা হলে তাৎক্ষণিকভাবেই বিক্ষোভে ফেটে পড়ে ছাত্রলীগ।
আরও পড়ুন- পুনঃনির্বাচন নিয়ে ভিপি নুরের বক্তব্যে ধোঁয়াশা
এদিকে, মঙ্গলবার সকালে ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে ‘প্রহসনের নির্বাচন মানি না’ স্লোগানে মিছিল ও বিক্ষোভ হয়। স্বতন্ত্র ও বাম জোটগুলোও এই নির্বাচন প্রত্যাখ্যানের দাবিতে বিক্ষোভ অব্যাহত রাখে। এর মধ্যে ছাত্রলীগের সভাপতি শোভন ক্যাম্পাসে এসে ভিপি পদে জয়ী নুরকে অভিনন্দন জানান, তার সঙ্গে কোলাকুলি করেন। সর্বশেষ মঙ্গলবার সন্ধ্যায় সংবাদ সম্মেলন করে ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদসহ পাঁচ প্যানেল জানায়, ফের ডাকসু নির্বাচনের দাবিতে বুধবার উপচার্য কার্যালয়ে অবস্থান নেবেন তারা।
সারাবাংলা/টিএস/টিআর