রোকেয়া হলের ছাত্রীদের অনশনে একাত্মতা ভিপি নুরের
১৪ মার্চ ২০১৯ ১৪:৫২
।। ঢাবি করেসপন্ডেন্ট ।।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) রোকেয়া হল সংসদের পুনঃনির্বাচন ও হল প্রাধ্যক্ষের পদত্যাগসহ চার দফা দাবিতে পাঁচ শিক্ষার্থীর অনশনে একাত্মতা জানিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) নবনির্বাচিত সহসভাপতি (ভিপি) নুরুল হক নুর।
তিনি বলেন, এত কারচুপির পর ডাকসুর ভিপি নির্বাচিত হয়েও আমি আমার বোনদের এই চারটি দাবির সঙ্গে সহমত পোষণ করছি। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে আমি আমার এই বোনদের দাবিগুলো বিবেচনা করার দাবি জানাব। অতি দ্রুত তারা আমার এই বোনদের সঙ্গে কথা বলে তাদের এই দাবি-দাওয়াগুলো মেনে নেবেন।
বৃহস্পতিবার (১৪ মার্চ) দুপুরে রোকেয়া হলের গেটে উপস্থিত হয়ে অনশনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে একাত্মতা জানান তিনি।
আরও পড়ুন- রাজু-রোকেয়ায় অনশন চলছেই
ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের এই নেতা এসময় বলেন, আপনারা দেখেছেন, রোকেয়া হলের আমার এই বোনেরা গতকাল রাত ৯টা থেকে তারা অনশনে বসেছেন। তাদের চারটি মৌলিক দাবি। প্রাধ্যক্ষের পদত্যাগ, হল সংসদের পুনরায় নির্বাচন, ছাত্রীদের নামে মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার ও আন্দোলনকারীদের নিরাপত্তা— এই চারটি দাবির সঙ্গেই আমি একমত পোষণ করছি।
নুর আরও বলেন, আমরা শুনেছি, গতকাল আমাদের বোনদের নাকি লাঞ্ছিত করা হয়েছে, তাদের নাকি হেনস্থা করা হয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এ ধরনের অপসংস্কৃতির চর্চা বাস্তবায়ন করতে চায়, তাদের বিরুদ্ধে যেন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ব্যবস্থা নেয়।
আরও পড়ুন- ফের নির্বাচন দেওয়ার এখতিয়ার আমার নেই: রোকেয়া হলের প্রাধ্যক্ষ
রোকেয়া হলের প্রাধ্যক্ষ মিথ্যাচার করছেন অভিযোগ করে নুরুল হক নুর বলেন, আমার সহযোদ্ধা ফারুক হাসান, প্রগতিশীল ছাত্র জোটের নেতা লিটন নন্দী, স্বতন্ত্র ভিপি প্রার্থী অরণি সেমন্তি খানসহ আমরা সেদিন (সোমবার, ডাকসু নির্বাচনের দিন) হলে (রোকেয়া হল) গিয়েছিলাম। অভিযোগ ছিল, গোপনে ব্যালটে সিল মারা হচ্ছে। সেটিই দেখতে গিয়েছিলাম। কিন্তু তিনি আমাদের দেখতে দেননি। বরং তিনি আমাদেরকেও নানাভাবে হুমকি-ধমকি দিয়েছিলেন। এক পর্যায়ে তিনি আমাদের মারার জন্য ছাত্রলীগের লেডিমাস্তান বাহিনীসহ কেন্দ্রীয় প্রেসিডেন্ট, সেক্রেটারিকে ডেকেছিলেন। আর আমার বোনেরা যখন অন্যায়-অনিয়মের বিরুদ্ধে স্লোগান দিচ্ছিল, তখন তাদেরও দেখে নেওয়ার হুমকি দিয়েছিল।
আরও পড়ুন- ব্যালট বাক্স ‘গায়েব’, রোকেয়া হলে ভোট স্থগিত
নুর বলেন, তাকে নাকি আমরা তার কক্ষে লাঞ্ছিত করেছি। সেই মিথ্যা অভিযোগে মামলা হয়েছে। যদিও তিনি বলেছেন, তিনি নাকি মামলা করেননি। মামলা করেছে অন্য একজন। কিন্তু মামলা যারা করেছে, অবশ্যই তারা তার সঙ্গে যোগাযোগ করেই করেছে। আমি মনে করি, শিক্ষক হিসেবে তিনি তার নৈতিকতার পরিচয় দিতে পারেননি। উনি এই পদে থাকার যোগ্য নন। তাই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে অনুরোধ জানাব, ছাত্রদের দাবানল জ্বলে ওঠার আগেই আপনারা যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবেন এবং এই হলের প্রাধক্ষ্যের অবশ্যই পদত্যাগ করতে হবে।
আরও পড়ুন- রোকেয়া হলে পুনরায় নির্বাচনের দাবিতে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের সমর্থন
অনশনরত ছাত্রীদের হুমকি দেওয়ার প্রসঙ্গ টেনে ডাকসু’র ভিপি বলেন, আজকে আমার বোনেরা আন্দোলন করছে, তাদেরও নানাভাবে হুমকি-ধমকি দেওয়া হচ্ছে। এর আগেও আমরা দেখেছি, কোটা সংস্কারসহ বিভিন্ন আন্দোলনকারীদেরও হুমকি দেওয়া হয়েছে। কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় সুফিয়া কামালের বোনদেরও হয়রানি করা হয়েছে। আমরা ছাত্রদেরকে সঙ্গে নিয়ে কিন্তু তার উচিত জবাব দিয়েছি।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের উদ্দেশে নুর বলেন, আমরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে একটি কথাই বলতে চাই, শিক্ষার্থীদের জন্যই এই বিশ্ববিদ্যালয়। সুতরাং শিক্ষার্থীদের ওপর আপনারা কোনো স্বৈরতান্ত্রিক সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করবেন না। তাহলে ছাত্ররা প্রতিহত করবে সেটা।
আরও পড়ুন- প্রভোস্টের পদত্যাগের দাবিতে রোকেয়া হলে বিক্ষোভ
এর আগে, বৃহস্পতিবার দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে রোকেয়া হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক জিনাত হুদা বলেন, হল সংসদের পুনঃনির্বাচন দেওয়ার এখতিয়ার তার নেই। তিনি শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলেছেন, তার সঙ্গে দেখা করতে বলেছেন। তবে শিক্ষার্থীরা হলের বাইরে থাকায় তিনি তাদের সঙ্গে দেখা করতে যেতে পারবেন না। মামলা বিষয়ে ছাত্রীদের ভুল তথ্য সরবরাহ করা হয়েছে বলেও সংবাদ সম্মেলনে জানান তিনি।
উল্লেখ্য, বুধবার (১৩ মার্চ) রাত ৯টা থেকে ঢাবি রোকেয়া হলের পাঁচ শিক্ষার্থী চার দফা দাবিতে হলের গেটে অনশন শুরু করেন। তাদের দাবিগুলো হলো— রোকেয়া হল সংসদের পুনঃনির্বাচন দেওয়া, হলের প্রাধ্যক্ষের পদত্যাগ, শিক্ষার্থীদের নামে দায়ের করা মামলা প্রত্যাহার করা এবং আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।
আরও পড়ুন- রোকেয়া হলের বাইরে অনশন, ভেতরে বিক্ষোভ
এদিকে, অনশনরত ছাত্রীদের অভিযোগ, বুধবার দিবাগত রাতে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় ও ডাকসুর নবনির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক (জিএস) গোলাম রাব্বানীর নেতৃত্বে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা তাদের হুমকি দিয়েছেন। অনশনরত শ্রবণা শফিক দিপ্তি সারাবাংলাকে বলেন, রাতে জিএস গোলাম রাব্বানী নেতাকর্মীদের নিয়ে এখানে আসেন। এখান থেকেই তিনি উপাচার্য স্যারকে ফোন দিয়ে বলেন, এখানে শিবিররা আন্দোলন করছে, ক্যাম্পাস অস্থিতিশীল করতে চাচ্ছে। পরে রাব্বানী চলে গেলে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা বেশ কয়েকটি বাইক নিয়ে এসে মহড়া দেয়, আমাদের টিজ করে।
সংবাদ সম্মেলনে রোকেয়া হলের প্রাধ্যক্ষের বক্তব্য সম্পর্কে জানতে চাইলে দিপ্তি বলেন, আমরা তার কাছে যাব না। তিনি হল প্রভোস্ট, তিনি আমাদের অভিভাবক। তাকে আমাদের কাছে আসতে হবে।
সারাবাংলা/কেকে/আরএ/টিআর
অধ্যাপক জিনাত হুদা অনশন ডাকসু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ভিপি নুর রোকেয়া হল রোকেয়া হলের প্রভোস্ট