২৯ উপজেলায় সব প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত
১৮ মার্চ ২০১৯ ১০:২২
।। গোলাম সামদানী, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট ।।
ঢাকা: পঞ্চম উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে দেশের ২৯টি উপজেলায় সব প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হচ্ছেন। এইসব উপজেলায় চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান তিনটি পদেই একক প্রার্থী থাকায় নির্বাচন করতে হচ্ছে না। তবে এই সংখ্যা আরও বাড়তে পারে, বিশেষ করে কয়েকটি উপজেলার নির্বাচন স্থগিত থাকায় ওইসব উপজেলার হিসাব আমলে নেওয়া হয়নি বলে সারাবাংলাকে জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশন (ইসি) সূত্র।
দ্বিতীয় ধাপে ১১৬ উপজেলায় ভোট চলছে
এ ব্যাপারে ইসি সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ সারাবাংলাকে বলেন, প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী না থাকায় বিভিন্ন উপজেলায় বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় অনেকে নির্বাচিত হচ্ছেন। তিনি বলেন, কেউ বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হলে ইসির কোনো করণীয় নেই।
ইসি সূত্র জানায়, পঞ্চম উপজেলা পরিষদ নির্বাচন পাঁচ ধাপে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এর মধ্যে প্রথম চার ধাপে ৪৬০টি উপজেলা নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়েছে। ইতোমধ্যে প্রথম ধাপে ১০ মার্চ, দ্বিতীয় ধাপে ১৮ মার্চ, তৃতীয় ধাপে ২৪ মার্চ এবং চতুর্থ ধাপে ৩১ মার্চ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এছাড়াও পঞ্চম ধাপে আগামী ১৮ জুন ২০টি উপজেলার নির্বাচন হবে। ইতোমধ্যে চার ধাপে ৩৬০টি উপজেলায় তফসিল ঘোষণা করা হলেও এর মধ্যে ২৯টি উপজেলায় নির্বাচন হচ্ছে না। মূলত এসব উপজেলার সব প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়ায় নির্বাচন করার প্রযোজন নেই। এছাড়াও ১০৮টি উপজেলায় ১০৮ জন চেয়ারম্যান বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হচ্ছেন। শুধু তাই নয় চার ধাপের উপজেলা নির্বাচনে প্রায় শতাধিক ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান বিনা ভোটে নির্বাচিত হয়েছেন।
প্রথম ধাপে তিন উপজেলায় সবাই বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত: প্রথম ধাপের ৮৭টি উপজেলায় তফসিল ঘোষণা করা হলেও নির্বাচন হয়েছে ৭৮টিতে। বাকি ৯টি উপজেলার মধ্যে ৬টি উপজেলার নির্বাচন স্থগিত করা হয়। আর তিনটি উপজেলার সব প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। উপজেলা তিনটি হলো, জামালপুর জেলার মেলান্দহ ও মাদারগঞ্জ ও নাটোর জেলার নাটের সদর। ফলে উপজেলা তিনটিতে কোনো নির্বাচন হয়নি।
দ্বিতীয় ধাপে ৬ উপজেলায় সবাই বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত: দ্বিতীয় ধাপের ১২৯টি উপজেলা নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হলেও নির্বাচন হচ্ছে ১১৬টিতে। অবশিষ্ট ১৩টি উপজেলার মধ্যে গোপালগঞ্জ জেলার পাঁচটি, দিনাজপুর সদর উপজেলার নির্বাচন পিছিয়ে দেওয়া হয়েছে। গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার নির্বাচন আদালত কর্তৃক স্থগিত করা হয়েছে।
অন্যদিকে নওগাঁ সদর, পাবনা সদর, ফরিদপুর সদর, নোয়াখালির হাতিয়া, চট্টগ্রামের মীরসরাই ও রাউজান এই ৬টি উপজেলায় তিনটি পদেই প্রার্থীরা বিনা প্রতি প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছে। ফলে এই ছয় উপজেলায় কোনো নির্বাচন হচ্ছে না।
তৃতীয় ধাপে ৫টি উপজেলায় সব প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত: আগামী ২৪ মার্চ তৃতীয় ধাপে ১২৭ উপজেলায় নির্বাচন। এর মধ্যে ৫টি উপজেলায় সব প্রার্থীরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। ফলে এসব উপজেলায় নির্বাচনের কোনো প্রয়োজন নেই। উপজেলা পাঁচটি হলো, বরিশালের গৌরনদী, আগৈলঝড়া, নরসিংদীর পলাশ, চট্রগ্রামের আনোয়ারা ও মাদারিপুরের শিবচর।
চতুর্ধ ধাপে ১৫ উপজেলায় সব প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত: আগামী ৩১ মার্চ চতুর্থ ধাপের ১২২ উপজেলায় নির্বাচন। এর মধ্যে রেকর্ড সংখ্যাক ১৫টি উপজেলায় চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে একক প্রার্থী রয়েছে। ফলে এসব উপজেলায় প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী না থাকায় কোনো নির্বাচন হচ্ছে না। উপজেলাগুলো হলো, ভোলা সদর, মনপুরা, চরফ্যাশন উপজেলা। এছাড়া ময়মনসিংহের গফরগাঁও, যশোরের শার্শা, কুমিল্লার লাকসাম, মনোহরগঞ্জ, নাঙ্গলকোট, চৌদ্দগ্রাম, দেবিদ্বার উপজেলা, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা, ঢাকার কেরানিগঞ্জ ও সাভার, নোয়াখালির কোম্পানিগঞ্জ ও ফেনির পরশুরাম।
চার ধাপে ১০৮ জন চেয়ারম্যান বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত: পঞ্চম উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে রেকর্ড পরিমাণ ১০৮ জন উপজেলা চেয়ারম্যান বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হচ্ছেন। এর মধ্যে প্রথম ধাপে ১৫ জন, দ্বিতীয় ধাপে ২৩ জন, তৃতীয় ধাপে ৩০ জন এবং চতুর্থ ধাপে ৪০ জন চেয়ারম্যান বিনা প্রতিদ্বদ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। প্রথম চার ধাপে নির্বাচন হবে ৪৬০ উপজেলার মধ্যে এর মধ্য ২৪ শতাংশ উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী না থাকায় এই পদে নির্বাচন হচ্ছে না। এছাড়াও ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদেও চারধাপে আরও শতাধিক প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন।
অন্যদিকে প্রথম ধাপে ৬ জন ভাইস চেয়ারম্যান এবং ৭ জন মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান, দ্বিতীয় ধাপে ভাইস চেয়ারম্যান ১৩ এবং মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান ১২ জন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। এছাড়াও তৃতীয় ও চতুর্থ ধাপসহ চার ধাপে মোট শতাধিক ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন।
দেশে উপজেলা পরিষদের সংখ্যা: ১৯৮৫ সালে দেশে প্রথমবারের মতো উপজেলা পরিষদ গঠিত হয়। উপজেলা পরিষদ গঠিত হওয়ার সময় দেশে উপজেলার সংখ্যা ছিল ৪৬০টি। ১৯৮৫ ও ১৯৯০ সালে অনুষ্ঠিত প্রথম ও দ্বিতীয় ধাপে উপজেলা নির্বাচন হয় ৪৬০টি উপজেলায়। পরর্তীতে দেশে উপজেলার সংখ্যা বাড়তে থাকায় ২০০৯ সালে ৪৮১টি এবং ২০১৪ সালে ৪৮২টি উপজেলায় নির্বাচন হয়। চলতি মার্চ মাস থেকে সারাদেশের ৪৯২টি উপজেলার মধ্যে ৪৮০টিতে ভোট গ্রহণ করা হবে। বাকি ১২টি উপজেলায় মেয়াদ শেষ না হওয়া এবং আইনি জঠিলতা থাকায় নির্বাচন করা যাচ্ছে না।
সারাবাংলা/জিএস/এমআই