ঢাকায় চলাচলের লাইসেন্স ছিল না সুপ্রভাতের, মামলা ছিল ২৭টি!
২১ মার্চ ২০১৯ ১৩:২৮
ঢাকা: রাজধানীর বসুন্ধরা গেট এলাকায় বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালসের (বিইউপি) শিক্ষার্থী আবরার আহমেদ চৌধুরীকে চাপা দিয়ে মেরে ফেলা সুপ্রভাত পরিবহনের বাসটির ঢাকায় চলাচলের অনুমতি ছিল না। ঢাকা-ব্রাহ্মণবাড়িয়ার রুট পারমিট ছিল ওই বাসটির। শুধু তাই নয়, ওই বাসটির নামে এর আগে ২৭ বার মামলা দেওয়া হয়েছিল।
বৃহস্পতিবার (২১ মার্চ) দুপুর মহানগর নাট্যমঞ্চে এক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব তথ্য জানান ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া।
এসময় কমিশনার প্রশ্ন রাখেন, ‘তাহলে সুপ্রভাত পরিবহনের এই বাসটি রাজধানীতে কিভাবে চলাচল করছিল?’ এই অনিয়মের জন্য সংশ্লিষ্ট সবাইকে দায়ী করেন তিনি।
ডিএমপি কমিশনার বলেন, যে জেব্রা ক্রসিং মানুষকে রাস্তা পারাপারে নিরাপদ করে, সেই জেব্রা ক্রসিংয়েই প্রাণ দিতে হলো আবরারকে। সুপ্রভাত গাড়িটি এই অপরাধই করেছে। আবরারের মৃত্যু চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে, ঢাকা শহরের পরিবহন সেক্টরে শৃঙ্খলা আনতে আমরা ব্যর্থ হয়েছি। এর জন্য সংশ্লিষ্ট সবাই দায়ী। গণপরিবহনে শৃঙ্খলা ফেরানোর চূড়ান্ত সময় এখন এসেছে।
মালিক শ্রমিকদের প্রতি অনুরোধ জানিয়ে আছাদুজ্জামান মিয়া বলেন, টিকিট কাউন্টার করে বাস চালান, লক্কর-ঝক্কর ও মডেলবিহীন গাড়ি রাস্তায় নামাবেন না। চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ বাতিল করুন। এসব না করলে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। রাস্তার পাশে স্টপজে গাড়িগুলোকে দাঁড় করান। সেখানে আড়াআড়িভাবে দাঁড়াবেন না। এটি করলে রেকারিং করে ডাম্পিং করা হবে। আমাদের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে। অনেক ছাড় দেওয়া হয়েছে, আর নয়।
পথচারীদের উদ্দেশে কমিশনার বলেন, শুধু চালকদের দোষ দিলে হবে না। পথচারীরাও কানে হেডফোন লাগিয়ে যত্রতত্র রাস্তা পার হচ্ছেন। জেব্রা ক্রসিং ব্যবহার করছেন না। ফুটওভারব্রিজ ব্যবহার করছেন না। এসব পথচারীদের আটক করে মিডিয়া ডেকে দেশবাসীকে দেখানোর জন্যও বলেন তিনি।
কমিশনার বলেন, এক রুটে আছে ৫০টি গাড়ি, চলছে ৮০টি গাড়ি। এমন হলে চলবে না। প্রয়োজনে সিলিং বাড়িয়ে দেন। তবুও আইন মেনে চলুন। ড্রাইভিং লাইসেন্স না থাকলে ফৌজদারি মামলার নির্দেশ দেন তিনি। আরও বলেন, মেইন রোডে লেগুনা ও অটোরিকশা চলবে না। শিশুরা কিভাবে গাড়ি চালায়, তা খতিয়ে দেখার জন্যও ট্রাফিক বিভাগকে নির্দেশনা দেন কমিশনার।
শ্রমিকদের উদ্দেশে ডিএমপি কমিশনার বলেন, জাবালে নূরের দুইটি ও সুপ্রভাতের একটি গাড়ির রুট পারমিট ও নিবন্ধন বাতিল করা হয়েছে। বাকি বাসগুলোর পারমিট আপাতত স্থগিত করা হয়েছে। বিআরটিএ’তে সব কাগজপত্র জমা দিতে বলা হয়েছে। কাগজে গড়মিল থাকলে সেগুলোর রুট পারমিটও বাতিল করা হবে। যেগুলোর কাগজপত্র ঠিক থাকবে, সেসব গাড়ি অচিরেই চালুর ব্যবস্থা করা হবে।
শিক্ষার্থীদের প্রতি অনুরোধ জানিয়ে ডিএমপি কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া বলেন, সড়ক অবরোধ করে কোটি কোটি মানুষের দুর্ভোগ তৈরি করবেন না। দায়িত্বশীল আচরণ করুন। আপনারা ক্লাসে ফিরে যান। আমাদের কাজ করতে সহযোগিতা করুন। চালক ও গাড়ি আটক হয়েছে। গাড়ির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। যেহেতু জেব্রা ক্রসিংয়ে মানুষ মেরেছে, তাই চালকের সর্বোচ্চ শাস্তি হতে পারে।
সারাবাংলা/ইউজে/টিআর
ডিএমপি কমিশনার ডিএমপি কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া বাসের ধাক্কায় বিইউপি শিক্ষার্থীর মৃত্যু