Friday 16 May 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

কেন্দ্রে ব্যর্থ হয়ে তৃণমূলে কঠোর হচ্ছেন শিক্ষকরা


২৪ জানুয়ারি ২০১৮ ০৯:০১ | আপডেট: ১৪ অক্টোবর ২০১৮ ১৮:৫৩

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: শিক্ষা ব্যবস্থা জাতীয়করণের দাবিতে গত ১০ জানুয়ারি থেকে রাজধানীর জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে অবস্থান কর্মসূচি শুরু করেন বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান জাতীয়করণ লিয়াজোঁ কমিটি। সারাদেশের মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের সহস্রাধিক শিক্ষকের দাবি না মানায় গত ১৫ জানুয়ারি থেকে তারা আমরণ অনশনে যান। তাদের নির্দেশনা অনুযায়ী দেশের প্রতিটি জেলা উপজেলায়ও কর্মসূচি পালিত হয়েছে। তবে তাতেও সরকারের পক্ষ থেকে কোনো সাড়া না পাওয়ায় এবার সারাদেশের প্রায় ২৭ হাজার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে লিয়াজোঁ কমিটি। মঙ্গলবার থেকে শুরু হওয়া এ কর্মসূচি কঠোরভাবে পালিত হচ্ছে তৃণমূলে।

বিজ্ঞাপন

পিরোজপুরের নাজিরপুর উপজেলার বরইবুনিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়। মঙ্গলবার সকালে শিক্ষার্থীরা এসে জানতে পারেন কোনো ক্লাস পরীক্ষা হবেনা। কারণ হিসেবে শিক্ষকরা জানিয়ে শিক্ষার্থীদের জানিয়ে দেন ঢাকায় আন্দোলন হচ্ছে, ধর্মঘট চলছে, ক্লাস হবেনা। এ বিষয়ে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সুব্রত কুমার রায় সারাবাংলাকে বলেন, কেন্দ্রের ঘোষণা অনুযায়ী আমরা ধর্মঘট পালন করছি। ২৫ তারিখ পর্যন্ত কোনো ক্লাস-পরীক্ষা হবে না। তবে অফিস খোলা থাকছে। শিক্ষকরা অফিসে আসছেন।

ঢাকায় আন্দোলনরত শিক্ষকরা বলছেন, ন্যায্য দাবিতে তারা আন্দোলন করলেও সরকারের দিক থেকে কোনো প্রকার সাড়া না পাওয়ায় তারা বাধ্য হয়ে এমন কর্মসূচি নিয়েছেন। দেশের ৯৭ ভাগ এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে পেছনে রেখে, আমাদের বঞ্চিত করে শিক্ষার উন্নয়ন হবেনা। আমরা ক্লাসে ফিরে যেতে চাই তবে তার আগে আমাদের একদফা দাবি সরকারকে মেনে নিতে হবে।

বিজ্ঞাপন

কেন্দ্রের এমন কঠোর সিদ্ধান্তকে অনুসরণ করছে সারাদেশের হাজারো প্রতিষ্ঠান। পাঠদান থেকে বিরত রয়েছেন কয়েকলাখ শিক্ষক। বছরের শুরুতে পাঠ বঞ্চিত হচ্ছে লাখ লাখ শিক্ষার্থী। এ অবস্থায় সরকারের পক্ষে দেশের সব এমপিওভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান একসঙ্গে জাতীয়করণ করা সম্ভব কী না এমন প্রশ্নও সামনে এসেছে। এমনকী এর যৌক্তিকতা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে আন্দোলনকারী শিক্ষকদের মধ্যেও। তবে আপাতত কেন্দ্রের সিদ্ধান্তকেই গুরুত্ব দিচ্ছেন তারা।

এতোগুলো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান একসঙ্গে জাতীয়করণ করতে গেলে যে সামর্থ্যের প্রয়োজন আপনি কি মনে করেন সে সামর্থ্য সরকারের রয়েছে? এমন প্রশ্নে বরইবুনিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সুব্রত কুমার রায় হেসে দেন। পরে তিনি বলেন, আপনিতো জানেন দীর্ঘদিন ধরে আমরা বঞ্চিত হয়ে আসছি। সরকারের পক্ষ থেকে অনেকবার আমাদের আশ্বাসও দেয়া হয়েছে। কিন্তু বাস্তবে তার ফল পাইনি।

বাগেরহাটের চিতলমারী উপজেলার শেরেবাংলা ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ মো. মহসীন রেজার কাছে জানতে চাওয়া হয়, তার প্রতিষ্ঠানে ধর্মঘট চলছে কি না। সারাবাংলাকে তিনি জানান, তার কলেজে ডিগ্রি পরীক্ষার কেন্দ্র, তাই পরীক্ষা হচ্ছে। কিন্তু ক্লাস হচ্ছেনা। তিনি বলেন, মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতি সবচেয়ে বড় সংগঠন তারাই মূল আন্দোলন করছে। কেন্দ্র থেকে যে কর্মসূচি দেওয়া হয়েছে তার জানামতে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেই মানা হচ্ছে।

এদিকে মঙ্গলবার জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে গিয়ে দেখা গেছে, গেল কয়েকদিনের তুলনায় আন্দোলনকারী শিক্ষকের সংখ্যা বেড়েছে। মঞ্চের মাইকে শিক্ষক নেতারা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ধর্মঘটের পক্ষে জোরালো বক্তব্য দিচ্ছেন। সেইসঙ্গে সরকারের প্রতি দাবি মেনে নেওয়ার আহ্বানও জানাচ্ছেন শিক্ষকনেতারা।

এ বিষয়ে ঢাকার মাতুয়াইল হাজি আব্দুল লতিফ ভুঁইয়া কলেজের শিক্ষক আব্দুল হালিম সারাবাংলাকে বলেন, আজ প্রায় দুই সপ্তাহ তারা রাস্তায় দিনরাত পড়ে আছেন কিন্তু তাদের দাবির প্রতি সরকারের কোনো দৃষ্টি নেই। আমরা কঠোর কর্মসূচির মাধ্যমে দাবি আদায় করেই ঘরে ফিরতে চাই।

আমরণ অনশনের নবম দিনে এসে ২০জনের মতো শিক্ষক অসুস্থ হয়েছেন বলে শিক্ষক নেতারা জানিয়েছেন।

সারাবাংলা/এমএস/টিএম

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর