দুষ্টচক্রে জিম্মি জাপা, চলছে ‘সার্কাস’
৬ এপ্রিল ২০১৯ ২২:০৮
ঢাকা: সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টিতে এখন সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড নেই বললেই চলে। জাতীয় ইস্যুতে দলটি নির্বিকার, ব্যস্ত অভ্যন্তরীণ কোন্দলে। দলীয় চেয়ারম্যান হুসেই মুহম্মদ এরশাদের ঘন ঘন সিদ্ধান্ত বদলের কারণে জাপায় চরম অসন্তোষ বিরাজ করছে। দলটির সিনিয়র নেতারা বলছেন, জাতীয় নির্বাচনের সময় জাপার রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড যাও বা ছিল, চলমান উপজেলা নির্বাচনের প্রথম চার ধাপে ভরা ডুবির পর এখন তাও নেই। তাদের ভাষ্য, জাপা এখন দুষ্টচক্রের কাছে জিম্মি। দলের ভেতরে রীতিমতো ‘সার্কাস’ চলছে বলেও তারা মন্তব্য করেন।
জাপার শীর্ষ পর্যায়ের কয়েকজন নেতা সারাবাংলাকে বলেন, একটি বৃহৎ পাার্টি ধীরে ধীরে ছোট হয়ে আসছে। উপজেলা নির্বাচনে ভরাডুবি ঘটেছে। ইতোমধ্যে অনুষ্ঠিত চার ধাপের উপজেলা নির্বাচনে মাত্র চারজন উপজেলা চেয়াম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। খোদ দলের চেয়ারম্যান এরশাদ ও জিএম কাদেরের উপজেলায়ও জাপা হেরেছে। এদিকে, শীর্ষ নেতৃত্বে আসছে ঘন ঘন সিদ্ধান্ত পরিবর্তন। এসব কারণে বিষণ্নতায় ভুগছেন নেতাকর্মীরা। হারিয়ে ফেলছেন মনোবলও।
দলটির কয়েকজন নেতা বলেন, জাতীয় ইস্যুতে জাপার কোনো কর্মকাণ্ড নেই। দলটি গৃহবিবাদেই ব্যস্ত। গত ২২ মার্চ (শুক্রবার) গোলাম মোহাম্মদ (জিএম) কাদেরকে জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান পদ থেকে অব্যাহতি দেন এরশাদ। এরপর ৪ এপ্রিল (বৃহস্পতিবার) আবারও জিএম কাদেরকে জাপার কো-চেয়ারম্যান পদে পুনর্বহাল করেন দলটির চেয়ারম্যান।
বিষয়টিকে দলের সিনিয়র নেতারা ভালোভাবে নেননি। তারা বলছেন, একের পর এক ঘন ঘন সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে এরশাদ নিজেই নিজের দলকে ভাঙনের দিকে নিয়ে যাচ্ছেন। তাদের অভিযোগ, এরশাদ সকাল-বিকাল সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করেন।
দলীয় বিভিন্ন প্রেস রিলিজে থাকা এরশাদের স্বাক্ষর নিয়েও জাপারা কয়েকজন সিনিয়র নেতা নেতা প্রশ্ন তুলেছেন। তাদের অভিযোগ, এরশাদের হাত কাঁপে। তিনি ঠিকমতো কলমও ধরতে পারেন না। স্বাক্ষর করে কীভাবে?
এসব বিষয় নিয়ে মুখ খুলতে রাজি হননি দলের কোনো সিনিয়র নেতাই। তবে, নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন শীর্ষ নেতা বলেন, জাতীয় পার্টির শুরু থেকেই নেতাকর্মীরা আতঙ্কে থাকতেন। এরশাদ যখন রাষ্ট্রক্ষমতায়, তখনো তিনি সকালে এক সিদ্ধান্ত নিতেন, বিকালে আরেক সিদ্ধান্ত নিতেন। এরই ধারাবাহিকতায় দলটি চলে আসছে। এভাবে চলতে থাকলে এরশাদের অবর্তমানে এই পার্টির কোনো ভবিষ্যৎ নেই।
জানতে চাইলে দলটির ভাইস চেয়ারম্যান জহুরুল হক জহির বলেন, ‘জাতীয় নির্বাচনের আগে জাপা রাজনৈতিক কর্মসূচি নিয়ে তৎপর ছিল। নির্বাচন শেষে সেই তৎপরতাও ভাটা পড়েছে। নির্বাচনে হয়েছে মনোনয়নবাণিজ্য, এখন চলছে সার্কাস। দলটি দুষ্টচক্রের কাছে জিম্মি। আমরা এখন আর আগের মতো পার্টি অফিসে যাই না, পার্টির খোঁজ-খবরও রাখি না। আমাদের সঙ্গে অনেক বেঈমানি করা হয়েছে। এরশাদের অবর্তমানে দলটি নিঃস্ব হয়ে যাবে। ’
জাপার এই নেতা বলেন, ‘গত ৩৫ বছর ধরে জাপার পেছনে শ্রম দিয়েছি। এবার নির্বাচনে আমাদের সঙ্গে দলটি বেঈমানি করেছে। যখন এরশাদ জেলে ছিলেন, তখন থেকে আমরাই তার কারামুক্তি দাবি জানানো এবং দলকে শক্তিশালী করার ক্ষেত্রে কাজ করেছি। বিনিময়ে আমরা কিছুই পাইনি।’ এরশাদের ঘন ঘন সিদ্ধান্ত বদলানোর ফলে দলটি শিগগিরই ভাঙনের মুখে পড়বে বলেও তিনি মন্তব্য করেন।
সারাবাংলা/এএইচএইচ/এমএনএইচ