Thursday 05 Jun 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

‘আহারে আমার মা’


১১ এপ্রিল ২০১৯ ০০:৫২ | আপডেট: ১১ এপ্রিল ২০১৯ ০৮:৩৮
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

ঢাকা: ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটের দুই তলায় নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র। সেখানে লোহার গেটের উল্টোদিকে স্বজনদের বসে থাকার চেয়ার। সেখানেই বসে ছিলেন এ কে এম ‍মুসা-নুসরাতের বাবা। ডান পাশে বড় ছেলে রায়হান বাবার কাঁধে মাথা দিয়ে চোখ বন্ধ করে আছেন। তার পাশে রয়েছেন আরেক স্বজন। সে স্বজনের পাশে বসে আছে নুসরাতের ছোট ভাই নোমান। সেও চোখ বন্ধ করে আছে। মাঝে মাঝেই চোখ খুলে হতবিহ্বল চোখে তাকাচ্ছে চারপাশে। তারপর নোমান একসময় হেলে পড়লো পাশের স্বজনের কাঁধে। নোমানকে স্বজনরা ধরাধরি করে লোহার গেট পার হয়ে আইসিইউর পাশের কক্ষে নিয়ে গেলেন।

বিজ্ঞাপন

আর নুসরাতের বাবা কিছুক্ষণ পরপর হাহাকার করে কেঁদে উঠছেন। বিড়বিড় করে বলছেন, ‘আমার মা নুসরাত। আহারে আমার মা, আহারে আমার মা’।
তিনি বলছেন, ‘আমার একমাত্র মেয়ে ‍নুসরাত,মেয়েটা কত সুন্দর ছিল, কত বড় বড় বিয়ের পাত্র এসেছিল। আমার মাকে আমি লেখাপড়া শেখাতে চেয়েছিলাম-সেই মা আমার’।

আর কিছু বলতে পারেন না ফেনীর কোম্পানিগঞ্জের জামিয়া শরাফাতিয়া ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসার এই শিক্ষক। এবার তিনি শব্দ করে কেঁদে ওঠেন।
এরইমধ্যে নুসরাতের বড় ভাই রায়হান বাবার কাঁধেই অনেকটা অজ্ঞানের মতো হয়ে পরেন। তাকেও ভেতরে নিয়ে যাওয়া হয়।

বাঁচানো গেলো না নুসরাতকে

এদিকে, নুসরাতকে যেদিন প্রথম ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসা হয় সেদিন প্রথম থেকে তাকে চিকিৎসায় ছিলেন ঢামেক মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটের সহকারী অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ নাসিরুদ্দীন।

সারাবাংলাকে তিনি বলেন, নুসরাতের ঘটনা শোনার পর থেকেই হাসপাতালে আমরা চিকিৎসকরা প্রস্তুত ছিলাম। প্রথমেই অস্ত্রোপচার কক্ষে নিয়ে যাবার পর আমি কথা বলি। সেখানে মেয়েটা কেবল একটা কথাই বলছিল, ‘স্যার আমাকে বাঁচান, আমি বাঁচতে চাই’। ওর এই কথা এখনো কানে বাজছে।

ডা. নাসিরুদ্দীন বলেন, এরপর থেকে যতবার কাছি গিয়েছি, ততবার সে এ কথাটাই বলেছে, ‘স্যার আমি বাঁচবোতো’।

নুসরাতের অবস্থা কখন থেকে খারাপ হলো জানতে চাইলে তিনি বলেন, ভেন্টিলেটরে দেবার আগ পর্যন্ত সে পুরোপুরি সজাগ ছিল, প্রতি মুহূর্তে সে আমাদের সঙ্গে কথা বলছিল। আজ রাত আটটার দিকে হঠাৎ করেই মেয়েটার অবস্থা খারাপ হবার সংবাদ শুনে আমরা প্রতিটা চিকিৎসক হাসপাতালে ছুটে এসেছি। আমরা আমাদের যথাসম্ভব সব ধরনের চিকিৎসা দিয়েছি, কিন্তু দেখা গেল তার হৃৎস্পন্দন কাজ করছে না।

নুসরাতের মৃত্যুতে প্রধানমন্ত্রীর শোক

হঠাৎ করেই কেন এতোটা খারাপ হলে জানতে চাইলে ডা. নাসিরুদ্দীন বলেন, সাধারণত ৭০ শতাংশ বার্নের ক্ষেত্রেই যে কোন সময়েই কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট বা হৃৎস্পন্দন বন্ধ হয়ে যাবার আশংকা থাকে। যখনই বড় ধরণের বার্নের ঘটনা ঘটে তখন অন্যান্য কিছু হবার আগেই হৃদপিণ্ডের কাজ করার ক্ষমতা কমতে থাকে।

আজ সকালেও যখন চিকিৎসকরা তাকে দেখেছেন তখন তা কিডনি, শ্বাস-প্রশ্বাস সব ঠিক ছিল। কিন্তু হৃদপিণ্ডের কার্যক্ষমতা যে কোনও সময়েই বন্ধ হয়ে যেতে পারে, ‘বলতে পারেন বিট্রে করে’, বলেন ডা. নাসিরুদ্দীন।

এটাই হয়েছে নুসরাতের বেলাতেও। আমরা সবাই মিলে চেষ্টা করেছি, কিন্তু সব বৃথা গেল-বলেন ডা. নাসির।

উল্লেখ্য, গত ২৭ মার্চ ফেনীর সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদরাসার অধ্যক্ষ মাওলানা সিরাজ-উদদৌলা নুসরাতকে নিজ কক্ষে ডেকে নিয়ে যৌন হয়রানি করেন বলে অভিযোগ ওঠে। এ ঘটনায় নুসরাতের মা বাদী হয়ে মামলা করেন। পরে শনিবার (৬ এপ্রিল) ওই মাদরাসার পরীক্ষাকেন্দ্রে পরীক্ষা দিতে গেলে অধ্যক্ষের অনুসারী কয়েকজন দুর্বৃত্ত হত্যার উদ্দেশ্যে নুসরাতের শরীরে পেট্রোল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয়।

লাইফ সাপোর্টে যাওয়ার আগে রোববার চিকিৎসকদের কাছে জবানবন্দি দেন নুসরাত। তিনি বলেন, নেকাব, বোরকা ও হাতমোজা পরিহিত চারজন তার গায়ে আগুন ধরিয়ে দেয়। ওই চারজনের মধ্যে একজনের নাম শম্পা বলেও উল্লেখ করে নুসরাত।

বুধবার (১০ এপ্রিল) রাত সাড়ে ৯টার দিকে নুসরাত মারা যান। আগামীকাল (বৃহস্পতিবার) ময়নাতদন্ত শেষে নুসরাতের মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে বলে সারাবাংলাকে জানিয়েছেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটের সহকারী অধ্যাপক ডা. হোসাইন ইমাম

সারাাবংলা/ জেএ/এসবি

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ফেনী

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর