নুসরাতের হত্যাকারীদের কাউকে ছাড় নয়: প্রধানমন্ত্রী
১২ এপ্রিল ২০১৯ ১৭:৩০
ঢাকা: নুসরাতকে আগুনে পুড়িয়ে হত্যার নিন্দা জানানোর ভাষা নেই বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘যারা বোরখা পরে নুসরাতের শরীরে আগুন লাগিয়ে হত্যা করেছে, তারা কেউ ছাড় পাবে না। তাদের সবাইকে বিচারের আওতায় আনা হবে।’ শুক্রবার (১২ এপ্রিল) বিকালে গণভবনে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে তিনি এসব কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এই যে মানুষকে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে মারা;এর নিন্দা করার ভাষা আমার নেই। আমি চেষ্টা করেছিলাম। মেয়েটিকে বাঁচানো যায় কি না? সিঙ্গাপুরে চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলা, ভিডিও কনফারেন্সিং করা, তাদের প্রয়োজনীয় মতামত নেওয়া, তারা যদি একটু আশ্বাস দিত, তাকে পাঠাতে প্রস্তুত ছিলাম। কিন্তু সে আমাদের ছেড়ে চলে গেছে।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘মেয়েটিকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে। যারা অপরাধী, ইতোমধ্যে আমরা গ্রেফতার করেছি। শুধু বোরকা পড়ে নয়, বোরকায় মুখ-চোখ-নাক ঢেকে হাতের মধ্যে মোজা পড়ে তারপরে তাকে আগুন লাগিয়ে দিয়েছে। ইতোমধ্যে কয়েকজন ধরা পড়েছে। তারা ধরা পড়বে। এরা ছাড়া পাবে না। এদের আমরা ছাড়ব না। আমি মনে করি, তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি পেতে হবে। যাতে এই ধরনের ঘটনা আর কেউ না ঘটায়।’
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, বিএনপি ক্ষমতায় থাকতে জঙ্গিবাদ সন্ত্রাসের দেশে পরিণত করেছিল। কঠোরভাবে তা দমন করে আমরা মানুষের ভেতর শান্তি নিয়ে এসেছি। তারপরেও কিছু দুর্ঘটনা ঘটে। সামাজিক সমস্যাও দেখতে পাই। সবচেয়ে দুর্ভাগ্য যে নিরীহ মানুষগুলো এর শিকার হন।
জীবন্ত মানুষ পুড়িয়ে হত্যা করার জন্য বিএনপিকে দায়ী করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই বিএনপির কারণে দেখলাম জীবন্ত মানুষ পোড়ানো। তাদের রাজনৈতিক জোটে আছে স্বাধীনতাবিরোধী, যুদ্ধাপরাধীদের দল জামায়াত। তারাই জীবন্ত মানুষ পুড়িয়ে হত্যা করার পথ দেখিয়ে দিয়ে গেছে। ২০১৩ সালে নির্বাচন বন্ধ করার জন্য তারা অগ্নিসন্ত্রাস করেছিল। ২০১৪ সালে তারা নির্বাচন ঠেকাতে চেয়েছিল। জানুয়ারি মাসে নির্বাচন হয়ে যাওয়ার পরেও তারা অহেতুক দুই মাস মানুষকে পুড়িয়ে হত্যা করে। ২০১৫ সালেও আওয়ামী লীগ সরকার উৎখাত করার নামে তারা অগ্নিসন্ত্রাস করে। এমন বীভৎস ঘটনা আমরা পাকিস্তান আমলে দেখেছি। তারা বস্তিতে আগুন দিত। আগুন দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মানুষ চিৎকার করে বের হয়ে আসলে তাদের গুলি করে হত্যা করত।
বৈঠকে উপদেষ্টা পরিষদ সদস্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, এইচ টি ইমাম, অ্যাডভোকেট ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন, সৈয়দ রেজাউল রহমান, ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেন, প্রফেসর আব্দুল খালেদ, প্রফেসর হামিদা বানু, মুকুল বোস, অ্যাম্বাসেডর জমির, মশিউর রহমান, মহীউদ্দিন খান আলমগীরসহ অন্যরা।
আরও পড়ুন: সাগর-রুনি-তনুর মতো নুসরাতের মামলাটি যেন হারিয়ে না যায়: হাইকোর্ট
উল্লেখ্য, নুসরাতকে যৌন হয়রানির অভিযোগে তার মায়ের দায়ের করা মামলায় গত ২৭ মার্চ অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দোলাকে গ্রেফতার করে পুলিশ। কিন্তু কারাগার থেকেই তিনি মামলা তুলে নেওয়ার জন্য নুসরাতের পরিবারকে চাপ দিতে থাকেন। এর মধ্যে গত ৬ এপ্রিল সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসায় আলিম পরীক্ষার কেন্দ্রে গেলে মাদ্রাসার ছাদে ডেকে নিয়ে নুসরাতের গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন লাগিয়ে পালিয়ে যায় মুখোশধারী দুর্বৃত্তরা।
অগ্নিদগ্ধ নুসরাতকে প্রথমে স্থানীয় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়া হয়। তার অবস্থার অবনতি হওয়ায় তাকে নিয়ে যাওয়া হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে। সেখানে বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটের ৯ সদস্যের একটি মেডিকেল বোর্ডের অধীনে নুসরাতের চিকিৎসা চলে। কিন্তু সব চেষ্টা ব্যর্থ করে দিয়ে বুধবার (১০ এপ্রিল) রাত সাড়ে ৯টায় নুসরাত মৃত্যুবরণ করেন।
সারাবাংলা/এসবি/একে/এমএনএইচ/এনআর
আরও পড়ুন
নুসরাত হত্যা মামলা: পৌর কাউন্সিলরসহ ২ আসামি গ্রেফতার
মাদরাসাছাত্রীকে হত্যাচেষ্টা: বোরখা পরা ৪ জনকে খুঁজছে পুলিশ
নুসরাতের জানাজায় হাজারও মানুষ, দাদির পাশেই চিরঘুম
থানার ভেতরে নুসরাতের ভিডিওধারণ সাইবার ক্রাইম, বললেন আইনজীবীরা
নুসরাতের লড়াইটা কে চালাবে এখন?
‘ডিপ বার্নে’র কারণেই নুসরাতের মৃত্যু
সাগর-রুনি-তনুর মতো নুসরাতের মামলাটি যেন হারিয়ে না যায়: হাইকোর্ট
নুসরাত হত্যা মামলায় আসামিপক্ষে থাকায় আ.লীগ নেতা বহিষ্কার
নুসরাতের মৃত্যু কি আমাদের চোখের পর্দা এখনো সরাবে না?
নুসরাতের হত্যায় কারা জড়িত, তা সবাই জানে: নাসিম