নুসরাত হত্যা: অধ্যক্ষ সিরাজসহ ২ শিক্ষকের এমপিও স্থগিত
২৯ এপ্রিল ২০১৯ ০৩:৩৮
ঢাকা: ফেনীর সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদরাসার শিক্ষার্থী নুসরাত জাহান রাফিকে যৌন হয়রানি ও আগুনে পুড়িয়ে হত্যা মামলার আসামি ওই মাদরাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলার এমপিও (মান্থলি পেমেন্ট অর্ডার) স্থগিত করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। একইসঙ্গে নুসরাতকে আগুনে পুড়িয়ে হত্যার ঘটনায় জড়িত মাদরাসার ইংরেজি বিষয়ের প্রভাষক আফসার উদ্দীনের এমপিও-ও স্থগিত করা হয়েছে।
রোববার (২৮ এপ্রিল) শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানানো হয়ছে।
বিবৃতিতে বলা হয়, অভিযুক্ত সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদরাসার অধ্যক্ষ এস এম সিরাজ উদ দৌলা (ইনডেক্স নম্বর ৩০৪১১১) ও প্রভাষক আফসার উদ্দীনের (ইনডেক্স নম্বর ২০৩০৫০৮) এমপিও স্থগিত করা হয়েছে। রোববার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী এ সংক্রান্ত এক নথি অনুমোদন করেছেন।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান (মাদরাসা) জনবল কাঠামো ও এমপিও নীতিমালা ২০১৮-এর অনুচ্ছেদ ১৮-এর উপানুচ্ছেদ ১৮.১, ১৮.২-এর আলোকে এই দুই শিক্ষকের বিরুদ্ধে এই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
নুসরাতের মৃত্যুর পর গত ১১ এপ্রিল এই দুই শিক্ষকের এমপিও স্থগিতের পদক্ষেপ নিতে মাদরাসা শিক্ষা অধিদফতর থেকে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতরে চিঠি পাঠানো হয়েছিল।
অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলা ও প্রভাষক আফসার উদ্দিন— দু’জনেই নুসরাত হত্যা মামলায় বর্তমানে কারাগারে আছেন। এর মধ্যে রোববার বিকেলে ফেনীর সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট জাকির হোসাইনের আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন অধ্যক্ষ সিরাজ। জবানবন্দিতে তিনি বলেন, কারাগার থেকেই নুসরাতকে হত্যার নির্দেশ দিয়েছিলেন সহযোগীদের। তবে হত্যাকাণ্ডটি এমনভাবে সাজাতে বলেন যেন হত্যার পর একে আত্মহত্যা হিসেবে চালিয়ে দেওয়া যায়।
সোনাগাজীর ইসলামিয়া ফাজিল মাদরাসার আলিম পরীক্ষার্থী ছিলেন নুসরাত জাহান রাফি। গত ৬ এপ্রিল পরীক্ষা দিতে গেলে তাকে কৌশলে মাদরাসার ছাদে ডেকে নিয়ে যান অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলার অনুসারী শামীম, জাবেদ, জোবায়ের, পপি ও মনি। তারা নুসরাতের গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয়। শরীরের প্রায় ৮০ শতাংশ দগ্ধ নুসরাতকে সংকটাপন্ন অবস্থায় ওই দিনই ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটে ভর্তি করা হয়। চার দিন মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ে ১০ এপ্রিল রাত সাড়ে ৯টার দিকে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন নুসরাত।
এর আগে, নুসরাতকে নিজ কক্ষে ডেকে নিয়ে যৌন হয়রানির অভিযোগে গত ২৭ মার্চ অধ্যক্ষ সিরাজকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এ ঘটনায় নুসরাতের মা বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেন অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে। অধ্যক্ষ সিরাজ কারাগারে থেকেই সহযোগীদের মাধ্যমে মামলা তুলে নিতে চাপ ও হুমকি দেন নুসরাতের পরিবারকে। নুসরাতের পরিবার মামলা তুলে নিতে রাজি না হলে নুসরাতকে গায়ে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা করেন সিরাজ।
নুসরাতকে আগুনে পোড়ানোর ঘটনায় গত ৮ এপ্রিল হত্যাচেষ্টা মামলা দায়ের করেছিলেন তার ভাই। নুসরাতের মৃত্যুর পর সেটি হত্যা মামলায় রূপান্তরিত হয়। গত ১০ এপ্রিল থেকে মামলাটির দায়িত্ব পায় পিবিআই। এ পর্যন্ত ২১ জন আসামিকে গ্রেফতার করা হয়েছে, আদালতে জবানবন্দি দিয়েছে ৯ জন। পিবিআই প্রধান জানিয়েছেন, এ হত্যাকাণ্ডে ১৬ জন জড়িত। মে মাসেই মামলার চার্জশিট জমা দেওয়া হবে।
সারাবাংলা/জিএস/টিআর
অধ্যক্ষ সিরাজ অধ্যক্ষ সিরাজ উদদৌলা নুসরাত নুসরাত হত্যা মামলা