৮ জুন ঐক্যফ্রন্ট ছাড়ার আল্টিমেটাম কাদের সিদ্দিকীর
৯ মে ২০১৯ ১২:৩৪
ঢাকা: আগামী ৮ জুন জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ছাড়ার আল্টিমেটাম দিলেন কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী। জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের ৮ জন (৭জন) সংসদ সদস্যের শপথ নেয়ার প্রতিবাদেই এই আল্টিমেটাম বলে জানান তিনি।
বৃহস্পতিবার (৯ মে) দুপুরে মতিঝিলে দলীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এই সিদ্ধান্তের কথা জানান কাদের সিদ্দিকী।
কাদের সিদ্দিকী বলেন, গত ৩০ ডিসেম্বর বাংলাদেশে একটি নির্বাচনী জঘন্য নাটক হয়েছে। বাংলাদেশ-তো বটেই পৃথিবীর ইতিহাসে এই রকম জঘন্য নির্বাচন হয়নি। পৃথিবীতে প্রহসনের এই রকম কোনো নজির খুঁজে পাওয়া যাবে না। তিনি বলেন, ওই নির্বাচনে ভোটারদের ভোট দিতে হয়নি। নির্বাচন দিনে নয়, আগের দিন রাতে হয়েছে।
তিনি বলেন, নির্বাচন পরবর্তী সময়ে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট থেকে বলা হয়েছিল, এই নির্বাচন আমরা প্রত্যাখান করেছি। শুধু ঐক্যফ্রন্ট নয় দেশের সমস্ত মানুষ এই নির্বাচন প্রত্যাখান করেছেন। এটা ছিল যথার্থ রাজনীতিক সিদ্ধান্ত। পরবর্তীতে গণফোরামের সদস্য সুলতান মনসুর সংসদে যাবেন বলে পায়তারা করলেন, তাকে বারংবার বলা হলো না যাওয়ার জন্য, কিন্তু কয়দিন পর তিনি গেলেন, শপথ নিলেন। কিছুদিন পর গণফোরামের আরেকজন সদস্য মোকাব্বির খান শপথ দিলেন। তাকে নোটিশ দেওয়া হল। পরে তাকে আবার দলের প্রেসিডিয়ামের সদস্য হিসাবে রাখা হল।
কাদের সিদ্দিকী বলেন, সর্বশেষ বিএনপির তথাকথিত নির্বাচিত ৬ জন সংসদ সদস্যর একজন প্রথমে শপথ নিলেন। তাকে দল থেকে বহিস্কার করা হল। পরবর্তীতে চারজন শপথ নিলে তাদেরকে স্বাগত জানানো হল। আবার বিএনপির মহাসচিব শপথ নেয়া থেকে বিরত থাকলেন। এইসব সিদ্ধান্ত মানুষকে বিভ্রান্ত করেছে। আমাদের এই বিভ্রান্তির জবাব দিতে হয়। আমরা সেই জবাব দিতে পারছি না। তাই আজ কৃষক শ্রমিক লীগের বর্ধিত সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছে, জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠনের পরবর্তী পর্যায়ে ফ্রন্টটিকে সঠিকভাবে পরিচালনা করা যায়নি। বিশেষ করে নির্বাচন প্রত্যাখান করে সেই ফ্রন্টের ৮ জন (৭ জন) যেভাবেই হোক তারা শপথে নিয়েছেন। জোটের এই অসঙ্গতি দূর করার জন্য আমরা এক মাস সময় দিয়েছি। এই সময়ের মধ্যে এই অসঙ্গতি দুর করতে না পারলে কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ছেড়ে দিবে।
তিনি বলেন, ভোটারবিহীন নির্বাচনে ভোটার ছাড়া যারা যেভাবে হোক সংসদে গিয়েছেন, শপথ নিয়েছেন এরা সকলেই ভাবী কালের কাছে নবাব সিরাজের মীর জাফরের চাইতেও নিন্দিত ও ঘৃনিত মানুষ হিসাবে বিবেচিত হবেন।
কাদের সিদ্দিকী বলেন, ৩০ ডিসেম্বর জাতীয় নির্বাচনে মানুষের ভোটের অধিকার তছনছ করে দিয়েছে। ওই নির্বাচনের পর যে কয়টি স্থানীয় নির্বাচন হয়েছে ভোটার ভোট দিতে উৎসাহ পায়নি।
তিনি বলেন, যে দেশ গণতন্ত্রের জন্য, মানুষের জীবনের নিরাপত্তার জন্য রক্ত ঝরিয়ে স্বাধীন হয়েছে। সে দেশ যখন ধংবস হয়ে যায় তখন আর কিছু বলার সুযোগ থাকে না। আজ দেশে গণতন্ত্র ধবংস হচ্ছে, এই গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে হবে। সেজন্য সংগ্রাম করতে হবে। সেখানে আমরা বহুক্ষেত্রে ব্যর্থ হয়েছি। জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নির্বাচনের পরবর্তীতে কিছু কিছু কাজে মানুষের কাছে ভীষণভাবে প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে।
তিনি বলেন, গত ৩০ এপ্রিল নুসরাত হত্যার প্রতিবাদে শাহবাগের চত্বরে একটি জমায়েতের সিদ্ধান্ত হয়েছিল। সেই জমায়েত ঐক্যফ্রন্ট করতে পারেনি।
এক প্রশ্নের জবাবে কাদের সিদ্দিকী বলেন, আমরা খালেদা জিয়ার মুক্তি চাই। তার মুক্তি চাওয়ার বিষয়টি আজ জাতীয় দাবিতে পরিণত হয়েছে। আমরা প্যারোলে নয় খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তি চাই
উল্লেখ্য, ২০১৮ সালের ১৩ অক্টোবর ড. কামাল হোসের নেতৃত্বে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠিত হয়। একই বছরের ৫ নভেম্বর কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে যোগ দেন।
সারাবাংলা/জিএস/জেএএম