প্রতিশ্রুতির পরও বাজারে অপরিপক্ব আম, ৪০০ মণ ধ্বংস
২২ মে ২০১৯ ১৭:৪৯
ঢাকা: নির্ধারিত সময়ে আম পাড়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েও তার আগেই অপরিপক্ব আম কার্বাইড দিয়ে পাকিয়ে বাজারে তোলার কারণে ৪০০ মণ আম ধ্বংস করেছে র্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত। একইসঙ্গে তিন ব্যবসায়ী ও ৯ প্রতিষ্ঠানকে ২৪ লাখ টাকা জরিমানা করেছে।
বুধবার (২২ মে) সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত রাজধানীর যাত্রবাড়ি এলাকায় অভিযান চালিয়ে অপরিপক্ক এইসব আম ধ্বংস করা হয়।
ধ্বংস নয়, আম নিয়ে শিগগিরই বৈঠক
এর আগে গত সপ্তাহে রাজধানীর ফল ব্যবসায়ীদের সঙ্গে র্যাবের এক বৈঠক হয়। সেখানে ফল ব্যবসায়ীরা প্রতিশ্রুতি দেন নির্দিষ্ট সময়ের আগে অপরিপক্ব আম তারা বাজারে তুলবে না। তবে প্রতিশ্রুতির পরও বেশি মুনাফার লোভে বাজারে আম বিক্রি করতে শুরু করেছে ব্যবসায়ীরা।
অভিযানের নেতৃত্বে থাকা র্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারোয়ার আলম বলেন, ‘বাজারে এখন শুধু গুটিআম থাকার কথা। ব্যবসায়ীরা ক্যালসিয়াম কার্বাইড মিশিয়ে অপরিপক্ব হিমসাগর আমকে পরিপক্ব করে তুলছে, যা মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। আজ ২২ মে, আরও ১৫ দিন আগে থেকে বাজারে হিমসাগর আম দেখা যাচ্ছে। ল্যাংড়া আসতে আরও আটদিন বাকি। এগুলো সব কেমিক্যাল দিয়ে পাকানো। এ বিষয়ে মহামান্য হাইকোর্ট একটা আদেশও দিয়েছেন। তাই বাজার মনিটরিংয়ের অংশ হিসেবে এই অভিযান।’
সারোয়ার আলম আরও জানান, রাজশাহীর বাগান থেকে হিমসাগর আম পাড়ার কথা আগামী ২৮ মে। এরপর তা ঢাকায় আনার কথা। এমন নির্দেশনা ছিল রাজশাহীর জেলা প্রশাসনের। এছাড়া সাতক্ষীরার ল্যাংড়া ৬ জুনের পর বাজারে আসার কথা। কিন্তু এই হিমাসগর ও ল্যাংড়া আম এখনই ঢাকায় পাওয়া যাচ্ছে।
অভিযানে র্যাবের সঙ্গে ছিলেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক কৃষিবিদ মো. রফিকুল ইসলাম ভূঁইয়া ও বিএসটিআইয়ের প্রতিনিধিরা। তারা জানান, ক্যালসিয়াম কার্বাইড ব্যবহার করে আমগুলো পাকানো হয়েছে। তাদের মতামত পেয়েই মোট ৪০০ মণ আম জব্দ করা হয়। পরে একটি পিকআপ ভ্যানের চাকার নিচে পিষ্ট করা হয় আমগুলো।
সকালে যাত্রাবাড়ীর বিভিন্ন আড়তে অভিযান চলার খবর টের পেয়ে অনেক ব্যবসায়ী দোকান বন্ধ করে পালিয়ে যান। তবে তিন জনকে আটক করে র্যাব।
এবারও মৌসুমের আগেই বাজারে পাকা আম
সাদ্দাম হোসেন নামে অভিযুক্ত এক আম ব্যবসায়ী আমে কেমিক্যাল মেশানোর কথা স্বীকার করে বলেন, ‘আমাদের সাতক্ষীরা থেকে ফোন দিয়ে বলেছে, এখানে আম পেকে গেছে, দ্রুত নিয়ে যাও। আমরা নিজেরাও জানি আম পাকে নাই, কিন্তু তাদের চাপাচাপিতে আমাদের আম কিনতে হয়েছে। আম এনে দেখি এগুলো পাকেনি। তাই কার্বাইড দিয়ে পাকানো হয়েছে।’
অভিযান শেষে সংবাদ সম্মেলনে ম্যাজিস্ট্রেট সারওয়ার আলম বলেন, ‘যারা আমের ব্যবসা করে তারা কেউ চাষি না, তারা ব্যবসায়ী। তারা ইতোমধ্যে আমের বাগান কিনে ফেলেছে। তাদের মধ্যে আগে বাজারে আম নেওয়ার একটি প্রতিযোগিতা কাজ করে। তাই তারা মনে করেছিল আম এখন বাজারে এনে ১৫০ টাকায় বিক্রি করবে। তাই এগুলো এনে বিক্রি করছিল।’
বাজারের অন্যান্য ফলে কেমিক্যালের ব্যবহারের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সব মিলে বাজারে ফলের অবস্থা ভালো। আগে ফরমালিন মেশানোর মতো ঘটনা ঘটতো, সেটা এখন নেই। এ বছর শুধু আমরা মেয়াদোত্তীর্ণ খেঁজুর পেয়েছি।
হাইকোর্টের নির্দেশনা অনুযায়ী রাজশাহী জেলা প্রশাসনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, গুটি আম ১৫ মে, গোপালভোগ ২০ মে, রাণীপছন্দ ও লক্ষ্মা বা লক্ষ্মণভোগ ২৫ মে, হিমসাগর বা ক্ষীরসাপাত ২৮ মে, ল্যাংড়া আম আগামী ৬ জুন এছাড়া আম্রপালি, ফজলি ও সুরমা ১৬ জুন এবং আগামী ১ জুলাই থেকে আশ্বিনা আম পাড়া যাবে।
সারাবাংলা/ইউজে/এমআই