বিজ্ঞাপন

এবারও মৌসুমের আগেই বাজারে পাকা আম

May 10, 2019 | 2:22 pm

এমদাদুল হক তুহিন, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: মৌসুম শুরু না হতেই প্রতিবছরের মতো এবারও রাজধানীর বাজারগুলোতে উঠতে শুরু করেছে ‘অপরিপক্ক’ পাকা আম। ‘সাতক্ষীরার গোবিন্দভোগ’ হিসেবে দেদারছে বিক্রি হচ্ছে সে আম। যদিও সাতক্ষীরার বাজারেই সে আম এখনো উঠতে শুরু করেনি। আমের ক্যালেন্ডারের হিসাবে সে আম বাজারে উঠতে শুরু করবে চলতি মে মাসের ১২ তারিখের পর। আবার আমের আমদানিও বন্ধ রয়েছে। তাহলে এই পাকা আমের উৎস কী?

বিজ্ঞাপন

রাসায়নিক দিয়ে এসব আম পাকানো হয়েছে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। আর রাসায়নিক ব্যবহার করে পাকানো হলে তা কতটা স্বাস্থ্যসম্মত, তা নিয়েও রয়েছে প্রশ্ন। স্বাস্থ্যঝুঁকি বিবেচনায় এমন পরিস্থিতিতে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বাজারে ওঠা এসব আম ল্যাবে পরীক্ষা করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত। তবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বলছে, এসব আমে কেমিক্যাল পাওয়া গেলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, রোজার প্রথম দিন মঙ্গলবার রাজধানীর কারওয়ান বাজারে পাকা আমের আধিক্য ছিল খুবই কম। দ্বিতীয় দিন বুধবার পাকা আমে ভরপুর হয়ে উঠে কাওরানবাজারের ফলের আড়ত। সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত বিক্রি হতে দেখা যায় হলুদ-সবুজ আম। প্রতিটি ফলের দোকানেই সাতক্ষীরার গোবিন্দভোগ নামে এসব আম বিক্রি হতে দেখা গেছে। রোজার তৃতীয় দিন বৃহস্পতিবারও একই চিত্র দেখা গেছে। রাজধানীর ফার্মগেট ও মহাখালীতেও ছিল একই চিত্র। আর প্রতিটি স্থানেই আম কিনতে ক্রেতাদের মধ্যে বাড়তি আগ্রহ লক্ষ্য করা গেছে।

১০ বছর ধরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে ফলের ব্যবসা করেন নোয়াখালীর জয়নাল আবেদীন (৭০)। তার দোকানেও বিক্রি হচ্ছিল হলুদ-সবুজ রঙের পাকা আম, তথা ‘সাতক্ষীরার গোবিন্দভোগ’। জয়নাল সারাবাংলাকে বলেন, ‘বাজারে প্রকৃত গোবিন্দভোগ আসতে আরও ১৫ দিন সময় লাগবে। সবাই বিক্রি করছে। তাই বাধ্য হয়ে আর দশ জনের মতো অমাকেও বিক্রি করতে হচ্ছে। নতুবা ক্রেতা এসে ঘুরে যাবে।’

বিজ্ঞাপন

আমের আরেক বিক্রেতা হোসেন বলেন, ‘সবাই জানে মৌসুম শুরু হয়নি। তারপরও কিনছে। আমরাও বিক্রি করছি। আর বলার সময় বলে বিক্রি করছি যে এখনো আম মিষ্টি নয়।’ জাফর নামের আরেক বিক্রেতা বলেন, আড়তে পাকা আমের অভাব নেই। সবাই লাভের জন্য বিক্রি করছে। কাস্টমারও নিয়ে যাচ্ছে। রোজার দুই দিন আগে থেকে এসব আম বিক্রি শুরু হয়েছে।

কী আম বিক্রি করছেন— জানতে চাইলে পান্নু নামের মহাখালীর এক আম বিক্রেতা আমের নামই জানাতে পারেননি। তবে তিনি এগুলোকে সাতক্ষীরার আম বলে দাবি করছিলেন। আর নুরুজ্জামান নামে এক বিক্রেতা ভারতীয় ‘তোতাহার’ নামের এক ধরনের আম বিক্রি করছিলেন। নুরুজ্জামানের দাবি, সারাবছরই এসব আম বিক্রি হয়।

বিজ্ঞাপন

এদিকে, গত বুধবার কারওয়ান বাজার থেকে ‘পাকা আম’ কিনছিলেন আব্দুল করিম। প্রগতি লাইফ ইনস্যুরেন্সের এই কর্মী সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমের মৌসুম আসেনি এটা জানি। তারপরও আম কিনলাম। রোজার মাস। মহিলারা খেতে চায়।’ এসব আম কী স্বাস্থ্যকর?— এমন প্রশ্নের উত্তরে করিম বলেন, ‘সরকার বিক্রি করতে না দিলে এসব আম কেনার ক্ষমতা কি আমার আছে? যে বিক্রি করছে, তার কী বিক্রি করার ক্ষমতা আছে? আম বিক্রি বন্ধ করতে হলে সরকারকেই করতে হবে।’

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর বলছে, দেশের কোথাও আমের চূড়ান্ত ফলন শুরু হয়নি। কিছু কিছু গাছে দুয়েকটি আম পাকতে শুরু করেছে। যে পরিমাণে আম পাকছে, তা কেবল পরিবারের সদস্যদের চাহিদা মেটানোর উপযোগী। সাতক্ষীরার নাম করা হলেও জেলাটিতে এখনো আম উত্তোলন শুরুই হয়নি। আমের রাজধানী হিসেবে খ্যাত চাঁপাইনবাবগঞ্জেও আমের মৌসুম শুরু হবে এ মাসের শেষ দিকে।

জানতে চাইলে সাতক্ষীরা জেলার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক অরবিন্দ বিশ্বাস সারাবাংলাকে বলেন, ‘সাতক্ষীরায় আগাম জাতের আম গোবিন্দভোগ চলতি মাসের ১২ তারিখের পর থেকে উত্তোলন শুরু হবে। গোপালভোগ উত্তোলনের সময় নির্ধারণ করা হয়েছে ১৫ মে এবং হিমসাগর ২২ মে। অর্থাৎ নির্দিষ্ট তারিখের আগে ওই জাতের আম উত্তোলন করা হবে না।’

বিজ্ঞাপন

এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘সাতক্ষীরার বাজারে কোনো আম নেই। এখানে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হচ্ছে। বাজারের কোথাও কোনো আম ওঠেনি। তারপরও বিভিন্ন যায়গা থেকে হয়তো আম সংগ্রহ করে সাতক্ষীরার নামে চালিয়ে দিচ্ছে। হয়তো আদতে সেগুলো সাতক্ষীরার কোনো আমই নয়।’

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের এই কর্মকর্তা আরও জানান, এবার জেলাটিতে ৪ হাজার ১০০ হেক্টর জমিতে আমের আবাদ হয়েছে। সমপরিমাণ জমি থেকে ৪০ থেকে ৪৫ হাজার মেট্রিক টন আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। তবে ঘূর্ণিঝড় ফণী ও শিলা-বৃষ্টিতে আমের কিছুটা ক্ষতি হয়েছে বলেও জানান তিনি।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক মঞ্জুরুল হুদা সারাবাংলাকে বলেন, ‘জেলাটিতে এবার পৌনে ৩ লাখ টন আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এখানে মে মাসের শেষ সপ্তাহ থেকে আম উত্তোলন শুরু হবে। তবে কিছু কিছু আম তো আগেই খাওয়ার উপযোগী হয়ে উঠতে পারে।’ এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি জানান, রাজধানীর বাজারে যেসব আম উঠতে শুরু করেছে, সেসব আম ধ্বংস না করে ল্যাবে পরীক্ষা করে তারপর করণীয় নির্ধারণ করা উচিত।

জানতে চাইলে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের মহাপরিচালক কৃষিবিদ মীর নূরুল আলম সারাবাংলাকে বলেন, ‘দেশের বাইরে থেকে আম আমদানির অনুমতি দেওয়া হয়নি। জানুয়ারিতে কিছু আম আমদানি হয়েছিল, কিন্তু এরপর বৈধপথে আর কোনো আম আসেনি।’ তিনি  আরও বলেন, ‘আমের মৌসুম এখনো শুরু হয়নি। কিন্তু তারপরেও কিছু কিছু আম তো পাকতে পারে। এখন বাজারে যেসব আম উঠেছে এগুলো পরিপক্ক আম নাকি বিশেষভাবে পাকানো হয়েছে, তা পরীক্ষা করে দেখা দরকার।’

বাজারে ওঠা আমের বিষয়ে মন্তব্য জানতে চাইলে র‌্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারোয়ার আলম সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমরা বাজার মনিটরিং করছি। যদি কেমিক্যাল দিয়ে পাকানো আম বাজারে পাওয়া যায়, তাহলে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

তবে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের সহকারী পরিচালক আরেফিন মাসুম সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমের মান পরীক্ষার জন্য আমাদের কোনো ল্যাব নেই। ফলে আমরা চাইলেও অভিযান পরিচালনা করতে পারছি না।’

সারাবাংলা/ইএইচটি/এমআই

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন