বিজ্ঞাপন

স্থিতিশীল, নিরাপদ ও নিষ্কলুষ বুয়েট আমাদের কাম্য

April 24, 2024 | 7:29 pm

ড. মো. মিজানুর রহমান

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদের মৃত্যুর পর তৎকালীন শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন দাবির মধ্যে প্রধান দাবিটি ছিল বুয়েটে সাংগঠনিক ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ করতে হবে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির ছাত্রকল্যাণ পরিদপ্তরের পরিচালক হিসেবে বুয়েট শহিদ মিনারে আমি যখন শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলতে যাইতখন তাদের প্রশ্ন ছিল ‘স্যার বুয়েটে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ হোক এটা আপনি চান কি না?’ তাদের প্রশ্নের উত্তরে আমি বলেছিলাম, ‘বর্তমান বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে ছাত্ররাজনীতির কোনো প্রয়োজন নাই।’ শিক্ষার্থীরা তখন বুয়েটে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ হোক এই প্রশ্নের সরাসরি উত্তর দিতে বললে জবাবে আমি বলেছিলাম, ‘বুয়েটে ছাত্ররাজনীতির কোনো প্রয়োজন নাই।’

বিজ্ঞাপন

শিক্ষার্থীরা তখন প্রশ্ন করে, ‘স্যার আপনি কি আমাদের এই দাবির সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেন?’ উত্তরে আমার জবাব ছিল, ‘তোমাদের এই দাবির প্রতি আমার পূর্ণ সমর্থন আছে এবং দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত তোমাদের সঙ্গে থাকব। শহিদ মিনারে শিক্ষার্থীদের দাবির সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশের পর বেশকিছু সময় সেখানে অবস্থান করে আমি চলে আসি। আমিই ছিলাম প্রথম ব্যক্তি যিনি ‘বুয়েটে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ হোক’ শিক্ষার্থীদের এমন দাবির সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেছিলাম। পরবর্তী সময়ে বুয়েট শিক্ষক সমিতি, বুয়েট অ্যালামনাইসহ অনেকে এই দাবির সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে।

একইদিনে এক অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বুয়েটে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধের বিষয়ে সাংবাদিকদেরকে বলেছিলেন, ‘আমি ছাত্ররাজনীতি করে আজকের অবস্থানে এসেছি। আমি তো ছাত্ররাজনীতি বন্ধের কথা বলতে পারি না। তবে বুয়েট চাইলে তারা নিজেরা সিদ্ধান্ত নিতে পারে।’ এরপর ১১ অক্টোবর ২০১৯ তারিখে বুয়েট কর্তৃপক্ষ এক জরুরি বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে সেখানে সাংগঠনিক ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ করে। সেই থেকে চলতি ২০২৪ সালের ৩১ মার্চ পর্যন্ত বুয়েট ক্যাম্পাসে সাংগঠনিক ছাত্ররাজনীতিমুক্ত পরিবেশ বজায় ছিল। কিন্তু গত ২৮ মার্চ দিবাগত রাতে একটি ছাত্রসংগঠনের কেন্দ্রীয় নেতাদের বুয়েট ক্যাম্পাসে আসার ঘটনাকে কেন্দ্র করে নানা ঘটনা ঘটতে শুরু করে। এর পর বুয়েটের বর্তমান শিক্ষার্থীদের আন্দোলন, পরীক্ষা বর্জন, ছাত্রকল্যাণ পরিদপ্তরের পরিচালকের পদত্যাগ দাবি, ওই রাতের ঘটনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কতিপয় বুয়েট শিক্ষার্থীর বহিষ্কার দাবির জের ধরে বুয়েটের একজন শিক্ষার্থীর (যার হলের সিট বাতিল করা হয়) আদালতে রিটের পরিপ্রেক্ষিতে ১ এপ্রিল হাইকোর্ট বুয়েট কর্তৃপক্ষের ২০১৯ সালের ১১ অক্টোবর জারি করা জরুরি বিজ্ঞপ্তিটির কার্যকারিতা স্থগিত করে আদেশ দেন।

বিগত সাড়ে ৪ বছরের বেশি সময়ে বুয়েটের শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও সংশ্লিষ্ট সবার ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় ক্যাম্পাসে স্থিতিশীল, নিরাপদ ও নিষ্কলুষ পরিবেশ বজায় রাখা সম্ভব হয়েছিল। কিন্তু সেই পরিবেশ আজ হুমকির মুখে। যে অপপ্রচারের মাধ্যমে ২৮ মার্চ পরবর্তী সময়ে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের উত্তেজিত করা হয় সেটি হলো– ‘বুয়েটে ছাত্রলীগের কমিটি দেওয়ার জন্য দলটির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব বুয়েট অডিটোরিয়ামের সেমিনার কক্ষে মিটিং করেছে।’ আর তাদের এই মিটিং করার অনুমতি দিয়েছে ছাত্রকল্যাণ পরিদপ্তরের পরিচালক। যেটি সর্বৈব মিথ্যা প্রচারণা। আমার পরিদপ্তর থেকে মিটিংয়ের ব্যাপারে কোনো ধরনের লিখিত বা মৌখিক অনুমতি দেওয়া হয়নি।

বিজ্ঞাপন

অথচ পুরোপুরি অসত্য ও বানোয়াট বিষয়টি নিয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদের আবেগকে পুঁজি করে প্রতিক্রিয়াশীল একটি চক্র ছাত্রকল্যাণ পরিদপ্তরের ওপর দোষ চাপানোর চেষ্টা করছে। এখানে একটি বিষয় স্পষ্ট করা প্রয়োজন যে, ক্যাম্পাসের নিরাপত্তার যে বিষয়টি শিক্ষার্থীরা সবার নজরে এনেছে সেটির দায়িত্ব বুয়েট রেজিস্ট্রারের। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি সব শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তাকর্মচারীসহ বুয়েট ক্যাম্পাসের সার্বিক নিরাপত্তার দায়িত্ব বুয়েট রেজিস্ট্রারের। যাদের অতি উৎসাহ, অপতৎপরতা, অপপ্রচার ও উসকানিমূলক আচরনের কারণে ৬ হাজারেরও বেশি শিক্ষার্থীর শিক্ষাজীবন আজ অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়ল। ক্যাম্পাসের স্থিতিশীল, নিরাপদ ও নিষ্কলুষ পরিবেশ অশান্ত হলো। বুয়েট কর্তৃপক্ষ চাইলে বা যথাযথ মনে করলে বিষয়টি তদন্ত করে সংশ্লিষ্টদের চিহ্নিত করতে পারেন। ভবিষ্যতের স্থিতিশীল, নিরাপদ ও নিষ্কলুষ ক্যাম্পাসের জন্য যেটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

বুয়েটের নাম ব্যবহার করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কিছুসংখ্যক পেইজ ও গুটিকয়েক ব্যক্তি তাদের প্রোফাইল থেকে প্রতিনিয়ত বুয়েটের বর্তমান শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিভ্রান্তিকর তথ্য, মিথ্যাচার, ঘৃণা ও বিদ্বেষ ছড়িয়ে ক্যাম্পাসের শান্ত পরিবেশকে অস্থিতিশীল করার অপতৎপরতায় চেষ্টা করে যাচ্ছে। বুয়েট কর্তৃপক্ষের এই বিষয়টির প্রতিও নজর দেওয়া উচিত।

বুয়েটের অন্যান্য শিক্ষকদের মতো ২০১৯ সালের ৮ অক্টোবর বুয়েটে ছাত্ররাজনীতি বন্ধের বিষয়ে আমার যে অবস্থান ছিল আজও সেই একই অবস্থান রয়েছে। যা বুয়েট শিক্ষক সমিতির সাধারণ সভার কার্যবিবরণীতেও স্পষ্ট করা হয়েছে। ৪ বছর ৯ মাসের বেশি সময় ছাত্রকল্যাণ পরিদপ্তরের পরিচালক থাকাকালীন ক্যাম্পাসের পরিবেশ স্থিতিশীল, নিরাপদ ও নিষ্কলুষ রাখার জন্য সাধ্যের বাইরে চেষ্টা করে সে অবস্থান ধরে রাখতে সক্ষম ছিলাম। আমার দায়িত্ব গ্রহণের তিন মাসের মাথায় আবরার ফাহাদের মৃত্যু পরবর্তী সময়ে বুয়েট ইতিহাসের সবচেয়ে সংকটময় ও চ্যালেঞ্জিং সময় আমাকে মোকাবিলা করতে হয়েছে। শিক্ষার্থী, বুয়েট শিক্ষক সমিতির নেতৃবৃন্দ, সকল শিক্ষকবৃন্দ, বুয়েট অ্যালামনাই সর্বোপরি তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রী ও সরকারের সব পর্যায়ের আন্তরিক সহয়োগিতায় সেই সংকটময় ও চ্যালেঞ্জিং অবস্থা থেকে বুয়েটকে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে সক্ষম হই।

বিজ্ঞাপন

উত্তাল সে অবস্থার মধ্যেই সকলের সহযোগিতায় আন্দোলনের ছয় দিনের মাথায় ২০১৯ সালের ১৪ অক্টোবর বুয়েটের ভর্তি পরীক্ষা সম্পন্ন করা সম্ভব হয়েছিল। এর পরে প্রতিনিয়ত শিক্ষার্থীদের জন্য ক্যাম্পাসের ও হলের পরিবেশ নিরাপদ ও উন্নত করার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করেছি এবং সফল হয়েছি। এ বিষয়ে বুয়েটের উপাচার্য, উপউপাচার্যসহ সব আবাসিক হলের প্রভোস্টবৃন্দের সমর্থন ও সহযোগিতা পেয়েছি।

কোভিড চলাকালীন যখন সারাদেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ ছিল, তখন উপাচার্যের সার্বিক নির্দেশনায় শিক্ষার্থীদের জন্য অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রম শুরুর লক্ষ্যে ছাত্রকল্যাণ পরিদপ্তরের উদ্যোগে শিক্ষার্থীদের ফোন/ল্যাপটপ কেনার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব তহবিল থেকে বিনা সুদে ঋণ দেওয়া, শিক্ষার্থীদের চাহিদা অনুসারে ইন্টারনেট ডাটা কেনার আর্থিক সহায়তা, কোভিডে আক্রান্ত শিক্ষার্থী বা পরিবারের সদস্যদের এককালীন আর্থিক অনুদান প্রদানসহ বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হয়। কোভিড চলাকালীন অনলাইন শিক্ষাকার্যক্রম ও পরীক্ষা চলমান রাখায় একাডেমিক কাউন্সিলে শিক্ষার্থীদের পক্ষে কথা বলে সেগুলো বাস্তবায়নে কার্যকর ভূমিকা পালন করেছি।

কোভিড পরবর্তী সময়ে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক শিক্ষার্থী যখন মানসিকভাবে বিপর্যস্ত ছিলেন তখন তাদের জন্য একজন মনরোগ বিশেষজ্ঞ ও ক্লিনিক্যাল কাউন্সিলর নিয়োগ দেওয়া হয়, যার সুফল শিক্ষার্থীরা এখনও পাচ্ছে। আবাসিক হলগুলোর পরিবেশ উন্নত করার জন্য প্রভোস্টদের ছাত্রকল্যাণ পরিদপ্তরের পক্ষ থেকে সার্বিক নির্দেশনা দেওয়া হয়। গত সাড়ে ৪ বছরে প্রতিটি আবাসিক হলের পরিবেশ উল্লেখযোগ্যভাবে পরিবর্তিত হয়েছে এবং উন্নয়ন দৃশ্যমান হয়েছে। প্রতিটি হলের ডাইনিং রুম, কমনরুম, লাইব্রেরি, মসজিদ, উপাসনালয় সংস্কার করে আধুনিক করা হয়েছে। প্রতিটি হলে হৃদয়ে বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধ কর্নার এবং পরিবেশবান্ধব সাইকেল স্ট্যান্ড নির্মাণ করা হয়েছে। আবাসিক হলের পরিবেশ আরও উন্নত করার জন্যে ছাত্রকল্যাণ পরিদপ্তরের নির্দেশনায় ও সহযোগিতায় প্রতিটি হলে অ্যালামনাই কমিটি গঠন করা হয়েছে। আবাসিক হলে নতুন শিক্ষার্থীরা যেন নিরাপদ বোধ করে সে লক্ষ্যে প্রভোস্ট ও সহকারী প্রভোস্টদের নিয়ে পরিদর্শক দল (ভিজিল্যান্স টিম) গঠন করে নিয়মিতভাবে নবাগত আবাসিক শিক্ষার্থীদের খোঁজখবর রাখা হয়েছে।

বুয়েটে ছাত্রকল্যাণ পরিদপ্তরের অধীনে সহপাঠ্য বিষয়ের উৎকর্ষ সাধনের জন্য ৩০টির বেশি ক্লাব রয়েছে। বিগত সাড়ে ৪ বছরে বুয়েট ইতিহাসের যেকোনো সময়ের চেয়ে এই সহপাঠ্য ক্লাবগুলোর সর্বাধিক কার্যক্রম ও অনুষ্ঠান হয়েছে। ছাত্রকল্যাণ পরিদপ্তরের পক্ষ থেকে সহপাঠ্য ক্লাবগুলোর কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার জন্য সর্বাত্মক সহযোগিতা ও অনুদান দেওয়া হয়েছে। জাতীয় বিশেষ দিবস ও অনুষ্ঠানাবলী যেমন২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবস, ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবস ও ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবস পালনের জন্য সহপাঠ্য ক্লাবগুলোকে সর্বাত্মক সহযোগিতা ও সর্বোচ্চ আর্থিক অনুদান দেওয়া হয়েছে। আবাসিক হলগুলোর শিক্ষার্থীদের মধ্যে লেখাপড়া ও খেলাধুলার সু্ষ্ঠু প্রতিযোগিতার মনোভাব তৈরির লক্ষ্যে ছাত্রকল্যাণ পরিদপ্তরের পক্ষ থেকে হলভিত্তিক একাডেমিক কাপ ও স্পোর্টসকাপের প্রবর্তন করা হয়েছে এবং দুইবার এই কাপ দেওয়া হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

বর্তমানে বুয়েটের শিক্ষার্থীদের গড় সিজিপিএ ৩.৪৯, যা অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে ভালো। শিক্ষার্থীদের লিখিত গবেষণাপত্র দেশের বাইরে উপস্থাপনের লক্ষ্যে ও উন্নতমানের জার্নালে প্রকাশের জন্য ছাত্রকল্যাণ পরিদপ্তরের পরিচালকের সুপারিশেরভিত্তিতে বুয়েট অ্যালামনাই থেকে আর্থিক অনুদান দেওয়া হয়েছে। বিগত বছরগুলোতে বুয়েটের অনেক শিক্ষার্থী আন্তর্জাতিক বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে বিশেষ কৃতিত্বের স্বাক্ষর রেখেছে। তাদের এই সাফল্যের স্বীকৃতি দেওয়া এবং আরও ভালো ফলাফল করার উৎসাহ দিতে প্রতিবছর ছাত্রকল্যাণ পরিদপ্তরের পক্ষ থেকে সংবর্ধনার প্রচলন করা হয়েছে।


শিক্ষার্থীরা যখন আন্তর্জাতিক বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের জন্য দেশের বাইরে ভ্রমণ করে তখন তাদের খরচ আংশিকভাবে ছাত্রকল্যাণ পরিদপ্তরের পক্ষ থেকে বহন করা হয়। এবং সে লক্ষ্যে এক কোটি টাকার একটি বিশেষ ছাত্রকল্যাণ তহবিল গঠন করা হয়েছে। ছাত্রকল্যাণ পরিদপ্তরের পক্ষ থেকে নিয়মিতভাবে অসচ্ছল শিক্ষার্থীদের জন্য বিভিন্ন বৃত্তির ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়। বিগত বছরগুলোতে শারীরিক শিক্ষা বিভাগের সহায়তায় আন্তঃঅনুষদ ক্রিকেট ও ফুটবল টুর্নামেন্ট, আন্তঃহল বাস্কেটবল, ভলিবল, ফুটবল, ব্যাডমিন্টন, টেবিল টেনিস ও দাবা টুর্নামেন্ট এবং বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতার নিয়মিত আয়োজন করা হয়েছে। আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের বিভিন্ন টুর্নামেন্টে বুয়েটের নিয়মিত অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা হয়েছে। বুয়েট খেলার মাঠ, জিমনেশিয়াম ও লন টেনিস কোর্টের সংস্কার করা হয়েছে।

ছাত্রকল্যাণ পরিদপ্তরের পরিচালকের দায়িত্ব পালন সময়ে শিক্ষার্থীদের সবধরনের যৌক্তিকঅযৌক্তিক আবদার বা দাবি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে পূরণের যথাসাধ্য চেষ্টা করেছি। ক্যাম্পাসের কোনো বিষয়ে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে লিখিত বা মৌখিক অভিযোগ এলে ছাত্রকল্যাণ পরিদপ্তরের পরিচালকের সেই অভিযোগ নিষ্পত্তির এখতিয়ার থাকলে অতি দ্রুততার সঙ্গে সেটার সমাধান দেওয়ার চেষ্টা করেছি। যেসব অভিযোগের নিষ্পত্তির এখতিয়ার ছাত্রকল্যাণ পরিদপ্তরের পরিচালকের নেই সে অভিযোগগুলো সঙ্গেসঙ্গেই উপাচার্য ও উপউপাচার্যের কাছে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য পাঠিয়েছি।

গত সাড়ে ৪ বছরের বেশি সময় ধরে আমার ওপর অর্পিত দায়িত্ব আস্থা, সততা ও নিরপেক্ষতার সঙ্গে পালনের চেষ্টা করেছি। এত আন্তরিক প্রচেষ্টার পরেও শিক্ষার্থীরা কেন ছাত্রকল্যাণ পরিদপ্তরের পরিচালকের প্রতি অনাস্থা প্রকাশ করল, সেটি আমার কাছে এখন বোধগম্য নয়। আমি কিছু শিক্ষার্থী ও আমার কিছু সহকর্মীর সঙ্গে আলাপ করে যে উপসংহারে আসলাম তা হলোদায়িত্ব পালনকালীন বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনকানুননিয়ম অনুসরণ করতে কখনও কখনও আমাকে কঠোর হতে হয়েছে। সেটি হয়তো কিছু শিক্ষার্থীর মধ্যে চাপা ক্ষোভ তৈরি করেছে।’

বিগত দু’টি টার্মে আগের প্রচলিত তিন সপ্তাহের পরীক্ষা প্রস্তুতির ছুটি কমিয়ে দুই সপ্তাহ করা হয়েছে। জুনিয়র ব্যাচের শিক্ষার্থীদের বদ্ধমূল ধারণা, এটা ছাত্রকল্যাণ পরিদপ্তরের পরিচালকের কারণে হয়েছে। যদিও এটি একাডেমিক কাউন্সিলের সদস্যদের সম্মিলিত সিদ্ধান্ত। এই সিদ্ধান্তের ফলে জুনিয়র ব্যাচের শিক্ষার্থীদের মধ্যে বেশি ক্ষোভ তৈরি হয় এবং শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনা করে জানা যায়, এবারের আন্দোলনের মূল ভুমিকায় তারাই ছিল।

এ ছাড়া, যে বিষয়টি দিয়ে ছাত্রকল্যাণ পরিদপ্তরের পরিচালকের প্রতি শিক্ষার্থীদের ক্ষোভ বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছেসেটি হলো ছাত্রাবস্থায় আমার রাজনীতির সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা। আমার একটি রাজনৈতিক মতাদর্শ আছে। যা বাঙালি জাতীয়তাবাদ, মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধুর আদর্শ। আর সেটি আমি কখনোই গোপন করিনি। আমার সহকর্মী শিক্ষকরা এটা ভালোভাবেই জানেন এবং বিশ্বাস করেন, আমার পেশাগত জীবনে আমি কখনও কোনো শিক্ষার্থী বা শিক্ষকের সঙ্গে রাজনৈতিক কারণে কোনো পক্ষপাতমূলক আচরন করিনি। এ অভিযোগ আমার ২৭ বছরের শিক্ষকতা জীবনে কেউ কখনও করতে পারেনি। শিক্ষকদের সঙ্গে আমার আন্তরিক ও বিশ্বাসের সম্পর্ক রয়েছে বলেই শিক্ষক সমিতির নির্বাচনে রেকর্ড পরিমাণ ভোটের মাধ্যমে তারা আমার প্রতি তাদের ভালোবাসার প্রকাশ ঘটিয়েছে।

কিছুসংখ্যক শিক্ষার্থীর আচরনে আমি হতবাক ও বিস্মিত হয়েছি যে, তাদের মধ্যে এত পরিমান ক্ষোভ জমা ছিল! কিছুসংখ্যক শিক্ষার্থীর এই আচরনে তাদের প্রতি আমার কোনো রাগ বা ক্ষোভ নেইতবে অভিমান আছে। নিজের পরিবারের সদস্যদের তাদের প্রাপ্য সময় না দিয়ে, নিজের গবেষণাকাজ প্রায় বিসর্জন দিয়ে দিনরাত শিক্ষার্থীদের কল্যাণের জন্য চিন্তা ও কাজ করেছি। সেই শিক্ষার্থীদেরই যদি আমার ওপর বিশ্বাস ও আস্থা না থাকে তাহলে ছাত্রকল্যাণ পরিদপ্তরের পরিচালকের দায়িত্ব চালিয়ে যাওয়ার কোনো মানে হয় না।

এর আগেও ছাত্রকল্যাণ পরিদপ্তরের পরিচালকের দায়িত্ব দুই বছরের বেশি সময় পার হওয়ার পর পরই লিখিতভাবে উপাচার্যের কাছে নতুন পরিচালক নিয়োগের আবেদন করেছিলাম। শুধুমাত্র তার একান্ত অনুরোধে দায়িত্ব অব্যাহত রেখেছিলাম। বুয়েটের একাডেমিক কাউন্সিলে সিদ্ধান্ত হয়েছে, হাইকোর্টের আদেশের বিপরীতে যথাযথ আইনি লড়াই চালিয়ে যাবে। শিক্ষার্থীরা যে পরীক্ষাগুলো বর্জন করেছিল সেই পরীক্ষাগুলো পুনরায় নেওয়া হবে।

শিক্ষার্থীদের কাছে অভিভাবক হিসেবে আবেদন, তোমাদের উচিত অন্যের বিভ্রান্তিকর প্ররোচণায় নিজের জীবনের মূল্যবান সময় নষ্ট না করে দ্রুততম সময়ের মধ্যে পরীক্ষায় অংশ নাও। আমরা সবাই ঐক্যবদ্ধ থাকলে বুয়েট অর্ডিন্যান্সের ধারাগুলো যথাযথভাবে পালন করে সবার কাঙ্ক্ষিত স্থিতিশীল, নিরাপদ ও নিষ্কলুষ ক্যাম্পাস ধরে রাখা সম্ভব।

লেখক: অধ্যাপক, পুরকৌশল বিভাগ, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) ও সাবেক পরিচালক, বুয়েট ছাত্রকল্যাণ পরিদপ্তর (ডিএইচডব্লিউ)

সারাবাংলা/এসবিডিই

Tags: , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন