Thursday 21 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

জনবল আর বাজেট ঘাটতিতে ‘নিষ্ক্রিয়’ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ


২৩ মে ২০১৯ ১৩:২৮

ঢাকা: খাদ্যে ভেজাল রোধ ও মান নিয়ন্ত্রণে জনস্বাস্থ্য সুরক্ষার দায়িত্বে থাকা মার্কিন সংস্থা ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের (এফডিএ) আদলে গড়ে তোলা হয় ‘নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ’। ‘খাদ্য নিরাপত্তা আইন ২০১৩’-এর অধীনে ২০১৫ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে গড়ে তোলা সংস্থাটির ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা ও খাদ্য নিরাপত্তা আইন অনুযায়ী অপরাধীদের শাস্তি দেওয়ার এখতিয়ার রয়েছে। তবে প্রতিষ্ঠার পর থেকে গত ৫ বছরে ৬৪ জেলায় ১২০টি মামলা দায়েরের বাইরে তেমন কোনো কার্যক্রম নেই এই সংস্থাটির।

বিজ্ঞাপন

সংস্থাটির শীর্ষ দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তি বলছেন, প্রয়োজনীয় জনবলের অভাবে সারাদেশে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করাটা তাদের পক্ষে অসম্ভব। আর বাজেট স্বল্পতার কারণে প্রচার-প্রচারণাতেও থাকতে পারছেন না তারা। যদিও দুই শতাধিক জনবল নিয়োগের সর্বশেষ দুই বিজ্ঞপ্তির একটির কার্যক্রমও শেষ করতে পারেনি সংস্থাটি। আবার ২০১৭-১৮ অর্থবছরে সংস্থাটির ব্যয় দেখিয়েছে ১৬ কোটি টাকা।

আরও পড়ুন: হাইকোর্টকে হাইকোর্ট দেখাচ্ছেন? নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষকে আদালত

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে জনস্বাস্থ্য সুরক্ষার দায়িত্বে থাকা এফডিএ বিক্রয়যোগ্য খাবার ও ওষুধের মান নিয়ন্ত্রণ, বাজারে তামাকজাত পণ্যের সরবরাহ, বিভিন্ন মেডিকেল যন্ত্রাংশ ও রাসায়নিক এবং প্রসাধনীর মান পরীক্ষা করে থাকে। রোগ নিয়ন্ত্রণে রক্ত প্রতিস্থাপন প্রক্রিয়া ও টিকার মানও পরীক্ষা করে সংস্থাটি। এফডিএ মানুষের পাশাপাশি পশুখাদ্য এবং ভেটেনারি ওষুধের মানও পরীক্ষা করে।

মার্কিন কেন্দ্রীয় এই সংস্থাটির আদলেই গড়ে তোলা হয়েছে ‘নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ’। খাদ্যে ভেজাল রোধ ও মান নিয়ন্ত্রণের উদ্দেশ্যে গড়ে তোলা সংস্থাটির কার্যালয় রাজধানীর ইস্কাটন গার্ডেনে প্রবাসী কল্যাণ ভবনের ১২ তলায়। বিধি অনুযায়ী খাদ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে পাঁচ জন ব্যক্তির সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে পরিচালিত হয় সংস্থাটি। তবে পরিকল্পনা অনুযায়ী এখনো ডালা-পালা মেলে নিজের অবস্থান জানান দিতে পারেনি সংস্থাটি।

আরও পড়ুন: ব্যবসায়ীদের ভয় পাচ্ছেন? নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষকে হাইকোর্ট

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষে এই মুহূর্তে কাজ করছেন, একজন চেয়ারম্যান, পাঁচ জন পরিচালক, চার জন সদস্য, চার জন ম্যাজিস্ট্রেট ও দু’জন অতিরিক্ত পরিচালক। এছাড়া অফিস সহায়ক, অফিস সহকারী, কম্পিউটার অপারেটর, পিয়ন, আয়াসহ আরও রয়েছে ৪৩ জন কর্মচারী।

বিজ্ঞাপন

নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গেছে, গত বছরের নভেম্বর মাসে ১৩ থেকে ১৬তম গ্রেডে ১১৪ জনকে নিয়োগের জন্য সার্কুলার দেওয়া হয়। আবার এ বছরের জানুয়ারিতে ১০ম গ্রেডে ১০৬ জনকে নিয়োগের জন্য সার্কুলার দেওয়া হয়। তবে দু’টি সার্কুলার অনুযায়ী একটি নিয়োগ পরীক্ষাও অনুষ্ঠিত হয়নি।

এদিকে, এখনো প্রধান কার্যালয় থেকেই পরিচালিত হয় নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের সব কার্যক্রম। সারাদেশে অভিযান পরিচালনার ক্ষমতা দেওয়া থাকলেও সংস্থাটির কোনো শাখা অফিস নেই। তবে ১৮টি মন্ত্রণালয় এবং তাদের নিয়ন্ত্রণাধীন অধিদফতর, সংস্থা ও স্থানীয় সরকারের ৪৮০টি প্রতিষ্ঠান খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার মহাযজ্ঞে সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছে।

সূত্র জানায়, প্রতিষ্ঠার পর থেকে গত পাঁচ বছরে ৬৪ জেলায় ১২০টি মামলা করেছে নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ। তবে তাদের কোনো ওয়েবসাইট নেই। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও নেই তেমন তৎপরতা। নিরাপদ খাদ্য নিয়ে জনসচেতনতা তৈরিতে গণমাধ্যমে কোনো বিজ্ঞপ্তি বা বিজ্ঞাপনও দেওয়া হয় না সংস্থাটির পক্ষ থেকে। যদিও ২০১৭-১৮ অর্থবছরে সংস্থাটি ব্যয় দেখিয়েছে ১৬ কোটি টাকা।

এর মধ্যে, গত ১২ মে বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্স অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশনের (বিএসটিআই) পরীক্ষায় নিম্নমান প্রমাণিত হওয়ায় গত ১২ মে নামি-দামি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ৫২ পণ্য জব্দ ও সেসব বাজার থেকে তুলে নিয়ে ধ্বংসের নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। সেই সঙ্গে এসব পণ্য উৎপাদন বন্ধে পদক্ষেপ নিতেও নির্দেশ দেন আদালত। নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ ও ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরকে ওই আদেশ বাস্তবায়ন করতে বলা হয়।

এর আগে, গত ১১ ফেব্রুয়ারি সারাদেশে গরুর দুধ, দই ও গো-খাদ্যে কী পরিমাণ ব্যাকটেরিয়া, কীটনাশক ও সীসা রয়েছে তা নিরূপণের জন্য জরিপ করতে নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। ওই দিন আদালত স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে রুল জারি করেন। সেই সঙ্গে দুগ্ধজাত খাবারে ভেজাল রোধে নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষসহ বিবাদীদের নিষ্ক্রিয়তাকে কেন বেআইনি ও অবৈধ ঘোষণা করা হবে না তা জানতে চান আদালত।

নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের ওপর সারাদেশের খাদ্য নিরাপদ রাখার এই বিশাল কর্মযজ্ঞের দায়িত্ব থাকলেও সংস্থাটি বলছে, সীমিত লোকবল নিয়ে তাদের পক্ষে সারাদেশে কাজ করা অসম্ভব। সংস্থার পরিচালক ড. সহদেব চন্দ্র সাহা সারাবাংলাকে বলেন, ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন ও খাদ্য মন্ত্রণালয়ের কয়েকজন পরিদর্শক আমাদের সহযোগিতা করছেন। কিন্তু সারাদেশেই তো ভেজাল ছড়িয়ে পড়েছে। সীমিত লোকবল নিয়ে সারাদেশে কাজ করা অসম্ভব। আমাদের লোকবল দরকার। সেই সঙ্গে দরকার মানুষের সচেতনতা।

নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের কর্মকর্তারা কাজের ভারে ন্যুজ্ব হয়ে পড়েছেন উল্লেখ করে ড. সহদেব বলেন, ‘আর পারছি না। প্রতিদিন সকাল ৮টায় আমাদের কাজ শুরু হয়। অফিস থেকে ফেরার সময় নিশ্চিত করে বলা যায় না। কখনো রাত ৯টা, আবার কখনো রাত ১০টায় ফিরতে হয়। একশ জনের কাজ একজনের কাঁধে।’

এদিকে, জনবলের অভাবে অভিযান পরিচালনায় সক্ষম না হওয়ার পাশাপাশি পর্যাপ্ত প্রচারে না আসার পেছনে বাজেট স্বল্পতাকে কারণ হিসেবে তুলে ধরছেন নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের পরিচালক। তিনি বলেন, ‘আমাদের কার্যক্রম যেন সাধারণ মানুষ জানতে পারে সেজন্য প্রচার-প্রচারণায় সমান গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। গণমাধ্যমে বিজ্ঞাপন প্রকাশ, সেমিনার আয়োজন, লিফলেট বিতরণ করা হচ্ছে। তবে আমাদের প্রয়োজনের তুলনায় বাজেট অনেক কম।’

সারাবাংলা/ইউজে/এটি/টিআর/জেডএফ 

জনবল নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ ভেজাল

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর