রোহিঙ্গাদের অধিকার রক্ষায় ওআইসিতে সহায়তা চাইলেন প্রধানমন্ত্রী
১ জুন ২০১৯ ১৮:৪৫
মিয়ানমারের রাখাইন থেকে বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর আইনি অধিকার নিশ্চিত করতে মুসলিম বিশ্বের সহায়তা চাইলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। রোহিঙ্গাদের এ অধিকার নিশ্চিত করতে আন্তর্জাতিক আদালতে মামলা দায়ের করা হলে যেন সবাই সহযোগিতা করেন, সে আহ্বান জানান তিনি। একইসঙ্গে অর্থনীতি ও নিরাপত্তার ক্ষেত্রে প্রতিকূল পরিবেশ মোকাবিলায় ওআইসি সদস্য রাষ্ট্রগুলোকে ব্যাপক পরিকল্পনা নেওয়ারও আহ্বান জানান তিনি।
শনিবার (১ জুন) সৌদি আরবের মক্কায় ১৪তম ওআইসি সম্মেলনে এশীয় গ্রুপের পক্ষ থেকে দেওয়া ভাষণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ কথা বলেন। ওআইসি সম্মেলনে এবারের শিরোনাম ‘মক্কা আল মোকাররমা শীর্ষ সম্মেলন: ভবিষ্যতের জন্য একসঙ্গে’।
রোহিঙ্গা সংকটের প্রতি ওআইসি সদস্য দেশগুলোর দৃষ্টি আকর্ষণ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, সম্পদের সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও মিয়ানমারের জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত ১১ লাখ বোহিঙ্গা মুসলমান জনগোষ্ঠীকে আশ্রয় দিয়েছে বাংলাদেশ। কিন্তু তাদের সম্মানজনক প্রত্যাবর্তন এখনো অনিশ্চিত। কারণ উত্তর রাখাইনে এসব রোহিঙ্গাদের ফেরার জন্য যে ধরনের অনুকূল পরিবেশ প্রয়োজন, তা তৈরিতে মিয়ানমার প্রতিশ্রুতি দিলেও তারা তা রক্ষায় ধারবাহিকভাবে ব্যর্থ হয়েছে। এ ক্ষেত্রে তাদের আইনি অধিকার রক্ষায় আন্তর্জাতিক আদালতে মামলা দায়ের করা হলে মুসলিম বিশ্বের দেশগুলোর সহযোগিতা কামনা করেন শেখ হাসিনা।
আবুধাবিতে অনুষ্ঠিত পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সম্মেলনে রোহিঙ্গাদের আইনি অধিকার নিশ্চিতে আন্তর্জাতিক আদালতে মামলা দায়েরের বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়। সে বিষয়টি উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এর মাধ্যমেই জবাবদিহিতা ও ন্যায় বিচারের প্রশ্নে রোহিঙ্গাদের আইনি অধিকার নিশ্চিতের জন্য আন্তর্জাতিক আদালতে যাওয়ার পথ তৈরি হয়েছে। এই প্রক্রিয়াকে এতদূর এগিয়ে নেওয়ার জন্য আমরা গাম্বিয়াকে ধন্যবাদ জানাই। এ মামলা রুজুর বিষয়ে স্বেচ্ছা তহবিল সংগ্রহ ও কারিগরি সহযোগিতার জন্য আমরা ওআইসি সদস্য রাষ্ট্রগুলোর কাছে আবেদন জানাচ্ছি।
ওআইসির সদস্য দেশগুলোর বিভিন্ন সমস্যা মোকাবিলায় সমন্বিত পরিকল্পনা গ্রহণের আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ওআইসি’র নিজস্ব সমস্যাগুলো মোকাবিলার সক্ষমতা থাকা উচিত। কেননা বিশ্বের এক-তৃতীয়াংশ কৌশলগত সম্পদ এই দেশগুলোর রয়েছে। আর বিশ্বের তরুণদের সিংহভাগও এসব দেশেরই অধিবাসী। তাই অর্থনীতি ও নিরাপত্তার প্রতিকূল চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি এই বিশ্বে ওআইসিকে এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় ব্যাপক পরিকল্পনা নিতে হবে।
সন্ত্রাস ও উগ্রপন্থার বিরুদ্ধে বাংলাদেশের জিরো টলারেন্স নীতির প্রসঙ্গ উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, আসুন, সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে সবাই মিলে বাংলাদেশের মতো জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করি। সন্ত্রাসী বা সন্ত্রাসীদের দলকে যেকোনো ধরনের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ও উগ্রপন্থা বাস্তবায়নে বাধা দেই এবং জোটবদ্ধভাবে লড়াই চালিয়ে যাই।
এ প্রসঙ্গে তিনি সন্ত্রাস বন্ধে রিয়াদ সম্মেলনে ঘোষিত মুসলিম বিশ্বের জন্য প্রদত্ত তার চার দফা নীতির কথা স্মরণ করেন। তার এই চার দফা নীতির মধ্যে ছিল— অস্ত্রের জোগান বন্ধ করা, সন্ত্রাসের জন্য অর্থায়ন বন্ধ করা, মুসলিম উম্মাহর মধ্যেকার বিভাজন দূর করা এবং সংলাপের মাধ্যমে যেকোনো ধরনের দ্বন্দ্বের শান্তিপূর্ণ সমাধান।
একবিংশ শতকের সঙ্গে খাপ খাওয়ানোর জন্য ওআইসির উদ্যোগকে অভিনন্দন জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এটা খুবই আশা জাগানিয়া যে নিজেদের একবিংশ শতকের সঙ্গে খাপ খাওয়াতে ওআইসি উন্নয়ন ও সংস্কারের প্রয়োজনীয় পথ গ্রহণ করেছে। একইসঙ্গে এই পরিবর্তনের সঙ্গে খাপ খাওয়াতে ইসলামের মূল দর্শনকে মূল্য দেওয়াসহ সংগঠন, সমতা ও ন্যায় বিচার সম্পর্কে রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর নির্দেশিত পথ অনুসরণের পরামর্শ দেন তিনি।
দারিদ্র্যকে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ আখ্যায়িত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এর জন্য মূলত অজ্ঞতা, দুর্যোগ ও মানবিক মূল্যবোধের অবক্ষয় দায়ী। এই অসামঞ্জস্যকে দূর করতে আমাদের যৌথভাবে ‘ওআইসি-২০২৫: অ্যাকশন কর্মসূচি’ বাস্তবায়ন করতে হবে।
শেখ হাসিনা এসময় ওআইসি সদস্য রাষ্ট্রগুলোকে ইন্টারন্যাশনাল অর্গানাইজেশন ফরম মাইগ্রেশনের (আইওএম) উপমহাপরিচালক পদের জন্য বাংলাদেশের প্রার্থী অভিভাষণ বিশেষজ্ঞ পররাষ্ট্র সচিব মো. শহীদুল হককে সমর্থন দেওয়ার অনুরোধ জানান। বাসস।
সারাবাংলা/টিআর