ভুল হয়েছে, ক্ষমা চাই: ক্যাপ্টেন ফজল মাহমুদ
৭ জুন ২০১৯ ২৩:৫৭
ঢাকা: বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের মতো সংস্থাটির ক্যাপ্টেন ফজল মাহমুদ নিজেও বলছেন, কাতারে তার আটক বা গ্রেফতার হওয়ার সংবাদটি সঠিক নয়। পাশাপাশি পাসপোর্ট না নিয়েই ফ্লাইটে করে দেশ ছাড়ার ঘটনাকেও নিজের ভুল হিসেবে স্বীকার করে নিচ্ছেন তিনি। এর জন্য তিনি ক্ষমাও চেয়েছেন। ফজল মাহমুদ বলেন, ‘হিউম্যান বিয়িং মানেই কিছু ভুল, সে হিসেবে আমার ভুল হয়েছে। আমি ক্ষমা চাই।’
শুক্রবার (৭ জুন) রাতে সারাবাংলার সঙ্গে মোবাইল ফোনে আলাপকালে এসব কথা বলেন ক্যাপ্টেন ফজল মাহমুদ। তিনি বলছেন, তিনি ভুল করে পাসপোর্ট রেখে যাওয়ার পরও ইমিগ্রেশন অফিসার তার কাছে পাসপোর্ট দেখতে চাইলে তখনই ভুলটি ধরা পড়ত। তাহলে তাকে আর পাসপোর্ট ছাড়া দেশ ছাড়ার ঘটনার মুখে পড়তে হতো না। একইসঙ্গে ফজল মাহমুদ আরও বলছেন, ৫ জুন তিনি যে ফ্লাইট চালিয়ে নিয়ে গেছেন, সেই ফ্লাইটের অনেক কেবিন ক্রু’র পাসপোর্টও সেদিন দেখতে চাওয়া হয়নি।
একজন ক্যাপ্টেন হয়ে পাসপোর্টের গুরুত্ব বুঝেও কেন নিজের পাসপোর্ট সঙ্গে নেওয়ার কথা ভুলে গেলেন— জানতে চাইলে ফজল মাহমুদ বলেন, আমার পাসপোর্টসহ অন্যান্য দরকারি জিনিস আমার একটি ব্যাগে থাকে। সেদিন সেই ব্যাগ নিয়ে ব্যাংকে যাই, প্রয়োজনীয় কাজ সেরে আবার অফিসে (বিমান বাংলাদেশের অফিস) আসি। তারপর ব্যাগটি সেখানে রেখেই বাসায় চলে আসি। পরে ভুল করে আর পাসপোর্টটি নিয়ে আসা হয়নি।
আরও পড়ুন- পাসপোর্ট নেই বিমান পাইলটের, আটকা পড়লেন কাতার ইমিগ্রেশনে
ক্যাপ্টেন ফজল মাহমুদ বলেন, আমার পাসপোর্ট রেখে যাওয়ার ঘটনাটি সত্য। কিন্তু এ ঘটনাকে ঘিরে দেশের গণমাধ্যমগুলোতে যেসব সংবাদ প্রচারিত হয়েছে, সেটি কিন্তু সঠিক নয়। আমাকে আটক বা গ্রেফতার করা হয়নি। আমি তো ইমিগ্রেশনেই যাইনি, তাদের মুখোমুখোই হইনি। ফ্লাইট থেকে নামার পর যখনই বুঝতে পারলাম পাসপোর্ট নেই, সঙ্গে সঙ্গে আমি ঢাকায় যোগাযোগ করি। পাসপোর্ট সঙ্গে না থাকায় এয়ারপোর্টের ভেতরে ট্রানজিট এলাকার হোটেলে থেকেছি ঢাকা থেকে পাসপোর্ট আসা পর্যন্ত। দেশ থেকে পাসপোর্ট আসার পরই আমি ক্রাউন প্লাজা হোটেলে উঠেছি।
নিজের ভুলের সঙ্গে সঙ্গে সেদিন ইমিগ্রেশনের দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তাও ভুল করেছেন বলে মনে করছেন বিমানের এই পাইলট। তিনি বলেন, আমার ভুল তো ছিলই, তারও (দায়িত্বরত কর্মকর্তা) ভুল হয়েছে। তিনি যদি পাসপোর্ট দেখতে চাইতেন, তাহলে আমার ভুলটা তখনই ধরা পরত। আমি বলব, দু’জনের ভুল মিলিয়েই এ ঘটনা ঘটেছে।
পাসপোর্ট চেকিং ছাড়াই ইমিগ্রেশন পার হলেন কী করে— এমন প্রশ্নের জবাবে ফজল মাহমুদ বলেন, পাসপোর্টটি দেখা ছাড়া ওখানে এর আর কোনো কাজ নেই। তাই হয়তো পাসপোর্ট দেখায় ততাটা গুরুত্ব দেওয়া হয়নি। আর ওখানে আমাদের ফিঙ্গারপ্রিন্ট নেওয়া হয়, তাতে সব তথ্যই থাকে।’
এ ঘটনায় এরই মধ্যে শুক্রবার দুইটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। এর মধ্যে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, অন্যটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের তদন্ত কমিটিকে ক্যাপ্টেন ফজলের পাসপোর্ট ছাড়াই দোহা চলে যাওয়ার কারণ অনুসন্ধানসহ শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে দায়িত্ব অবহেলার বিষয়ে দায়-দায়িত্ব নিরূপণ এবং বহিরাগমন ও পাসপোর্ট অধিদফতরের কার্যপদ্ধতিতে কোনো ত্রুটি থাকলে তা শনাক্ত করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এ কমিটিতে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে তিন কার্যদিবসের মধ্যে।
অন্যদিকে পাইলট কিভাবে পাসপোর্ট ছাড়াই শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ত্যাগ করেছেন, সে বিষয়টি উদঘাটনের পাশাপাশি এ ঘটনায় সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দায়-দায়িত্ব নির্ধারণ এবং এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঠেকানো ও সুষ্ঠু ইমিগ্রেশন ব্যবস্থায় প্রয়োজনীয় পদক্ষেপের সুপারিশ করতে তদন্ত কমিটিকে নির্দেশ দিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। প্রতিবেদন জমা দিতে এই কমিটিকে সময় দেওয়া হয়েছে সাত কার্যদিবস।
তদন্ত কমিটির মুখোমুখি হওয়ার বিষয়ে কী ভাবছেন— জানতে চাইলে ফজল মাহমুদ বলেন, ‘আমি আমার ভুল স্বীকার করে নিচ্ছি। আমি এ ঘটনায় ক্ষমাপ্রার্থী। এখন তারা কিভাবে এ বিষয়টি বিবেচনা করবেন, সেটা তারাই বলতে পারেন।
তিন দেশ সফরে থাকা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ শুক্রবার ফিনল্যান্ড থেকে দেশের পথে রওনা হয়েছেন। হেলসিংকি বিমানবন্দর থেকে প্রধানমন্ত্রীকে বহনকারী কাতার এয়ারওয়েজের ফ্লাইট রাতে পৌঁছাবে কাতারের দোহা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে। সেখানে ট্রানজিট নিয়ে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একটি ভিভিআইপি ফ্লাইটে শনিবার (৮ জুন) সকালে দেশে ফেরার কথা রয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার।
দোহা থেকে যে ফ্লাইটে প্রধানমন্ত্রীর রওনা দেওয়ার কথা, বুধবার (৫ জুন) রাতে সেই ফ্লাইটটি নিয়েই ঢাকা থেকে রওনা দেন ক্যাপ্টেন ফজল মাহমুদ। তবে সঙ্গে পাসপোর্ট না থাকায় কাতারে ইমিগ্রেশন পার হতে পারেননি তিনি।
সারাবাংলা/জেএ/টিআর
ইমিগ্রেশন ক্যাপ্টেন ফজল মাহমুদ দোহা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর পাসপোর্ট ছাড়া ভ্রমণ ফজল মাহমুদ বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স