ওসি মোয়াজ্জেমের সর্বোচ্চ শাস্তি চায় নুসরাতের পরিবার
১৭ জুন ২০১৯ ০২:৫৯
ফেনী: ফেনীর সোনাগাজী মডেল থানার সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোয়াজ্জেম হোসেন গ্রেফতারের পর স্বস্তি ফিরেছে নুসরাতের পরিবারে। এই খবর শোনার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ব্যারিস্টার সায়্যেদুল হক সুমনসহ সংশ্লিষ্ট সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন নিহত নুসরাতের পরিবারের সদস্যরা।
নুসরাতের মা শিরিন আক্তার বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী আমার মেয়ে হত্যার বিচারের দায়িত্ব নিয়েছেন। তার কারণে নুসরাত হত্যা মামলার কার্যক্রম দ্রুত এগিয়ে চলছে। ব্যারিস্টার সুমনের করা মামলায় ওসি মোয়াজ্জেম গ্রেপ্তার হয়েছে। এজন্য আমি শেখ হাসিনা, ব্যারিস্টার সুমনসহ সমগ্র দেশবাসির কাছে কৃতজ্ঞ।’
নুসরাতের মা আরও বলেন, ‘ওসি মোয়াজ্জেম আমার মেয়ের হত্যাকে আত্মহত্যা বলে প্রচার করেছে। তা প্রতিষ্ঠিত করতে অবৈধভাবে ভিডিও ধারণ করেছে। আমরা এর আগেও ওসি মোয়াজ্জেমের বিচার চেয়েছি। আমি তার সর্বোচ্চ শাস্তি দাবী করছি।’
নুসরাতকে নিজের অফিসকক্ষে ওসি মোয়াজ্জেম যেভাবে নাজেহাল করেছেন তারা আপত্তিকর উল্লেখ করে তার বড় ভাই ও নুসরাত হত্যা মামলার বাদী মাহমুদুল হাসান নোমান বলেন, এই গ্রেফতারের মধ্য দিয়ে পুলিশের গ্রহণযোগ্যতা বেড়ে গেল।
আদালতেও বাদীকে হত্যার হুমকি, অভিযোগ নুসরাতের ভাইয়ের
ওসি মোয়াজ্জেমের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ আনা হয়েছে তার বিচার শুরু ও সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি জানান নুসরাতের আরেক ভাই রাশেদুল হাসান রায়হান।
নুসরাত হত্যা মামলার বাদী পক্ষের আইনজীবী আইনজীবী অ্যাডভোকেট রফিকুল ইসলাম খোকন বলেন, শুধু ওসি মোয়াজ্জেম নন, নুসরাত হত্যা মামলার আসামিরাও বেশি দিন পালিয়ে থাকতে পারেনি। পিবিআই ও পুলিশ তাদের অল্প সময়ের মধ্যে গ্রেফতার করেছে। ন্যায় বিচারের মাধ্যমে মামলার সব আসামিরাই সর্বোচ্চ শাস্তি পাবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
প্রসঙ্গত, গত ২৭ মার্চ সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদরাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলা নুসরাত জাহান রাফিকে নিজ কক্ষে ডেকে শ্লীলতাহানি করেন। এ ঘটনায় নুসরাতের পরিবার থানায় অভিযোগ করতে গেলে ওসি মেয়াজ্জেম বেআইনিভাবে নুসরাতকে জেরা করে ভিডিও ধারণ করেন। পরবর্তীতে সে ভিডিও ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ছড়িয়ে পড়ে।
২৭ মার্চ শ্লীলতাহানির ঘটনায় দায়ের করা মামলা তুলে নিতে অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলার লোতজন নানাভাবে হুমকি-ধমকি দেয়ার পর মামলা তুরে না নেওয়ায় অধ্যক্ষের নির্দেশে ৬ এপ্রিল ওই মাদরাসার সাইক্লোন শেল্টারের ছাদে নিয়ে নুসরাত জাহান রাফিকে শরীরে কেরোসিন ঢেলে আগুন দেয় তার কয়েকজন সহপাঠি। পরে ১০ এপ্রিল ঢাকামেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধিক অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।
পরে ১৫ এপ্রিল উচ্চ আদালতের ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে সোনাগাজী মডেল থানার সাবেক ওসি মোয়াজ্জেম হোসেনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন ব্যারিস্টার সায়্যেদুল হক সুমন। পরে ২৭ মে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করে। ওইদিন আদালত ওসি মোয়াজ্জেমের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন। ২৯ জুন উচ্চ আদালতে জামিনের আবেদন করেন তিনি। এরপর থেকে ওসি মোয়াজ্জেম পলাতক ছিলেন। তাকে ধরতে গ্রামের বাড়ী যাশোরের চাঁচড়া ও রাজধানীর সম্ভাব্য স্থানে অভিযান চালায় পুলিশ।
এর আগে দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগে ১০ এপ্রিল ওসি মোয়াজ্জেমকে সোনাগাজী মডেল থানা থেকে প্রত্যাহার করে রংপুর রেঞ্জে সংযুক্ত করা হয়।
সারাবাংলা/এসএমএন