চারার দাম লাখ টাকা!
২৩ জুন ২০১৯ ১০:০৫
ঢাকা: রাজধানীতে শুরু হয়েছে মাসব্যাপী বৃক্ষ রোপণ অভিযান ও বৃক্ষমেলা-২০১৯। আগারগাঁও এর শেরেবাংলা নগরে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রের (বিআইসিসি) পাশে বাণিজ্য মেলার মাঠ এখন সবুজে ছেয়ে আছে। নানা রকমের বাহারি ফুল আর ফলের গাছে ভরে আছে গোটা চত্বর।
বড় বিচিত্র সেই সবুজ। কোথাও ছোট্ট একটি আম গাছ ভরে আছে নানান আকারের মামে, পাশেই টবে লাগানো কাঁঠাল গাছে ঝুলছে পাকা কাঁঠাল। রয়েছে ক্যাকটাস আর অর্কিডের মতো বাহারি গৃহসজ্জার ফুল। বিভিন্ন জাত ও রঙের এর জবাও তাকিয়ে আছে হাসিমুখে।
আরও পড়ুন- ঘর সাজাতে গাছ, বৃক্ষমেলায় নগরচাষীদের ভিড়
আকার ও জাতভেদে নির্ধারণ করা হয়েছে এসব গাছের চারার দাম। কিছু কিছু চারার দাম শুনলে সাধারণ মানুষের চোখ কপালে উঠতে পারে। তবে যারা বৃক্ষপ্রেমী, তাদের কাছে এগুলো স্বাভাবিক।
সৌদি খেজুরের চারা
এবারের বৃক্ষমেলার অন্যতম আকর্ষণ হচ্ছে সৌদি খেজুরের চারা। বয়স ও আকারভেদে একেকটা চারার দাম হাঁকা হচ্ছে এক লাখ থেকে দেড় লাখ টাকা পর্যন্ত। সৌদি আরবের খেজুরের বীজ থেকে এসব চারা উৎপাদন করেছে শরিয়তপুরের ফলের নার্সারি ‘সৌদি খেজুর অ্যান্ড অ্যাগ্রো’। দামি এই চারাগুলো দেখতে হলে যেতে হবে জাতীয় বৃক্ষমেলার ১৪ নম্বর স্টলে।
মেলায় আসা দর্শনার্থীদের একটা বড় অংশের আকর্ষণ এই লাখ টাকার চারা। মেলা ঘুরে দেখা গেল, অনেকেই বেশ আগ্রহ নিয়ে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখছেন গাছের চারাগুলোকে। কেউ কেউ চারার দাম শুনে বিস্ময় প্রকাশ করছেন। তবে সৌদি আরবের খেজুরের চারা বলে আগ্রহও প্রকাশ করছেন অনেকে। দেশি খেজুরের চারা থেকে আকারে বড় ও কাঁটাযুক্ত এই চারাগুলো রোপণ করা যাবে বড় টবে বা ড্রামে।
সৌদি খেজুর নার্সারি অ্যান্ড অ্যাগ্রো স্টলের বিক্রেতা মো. আমজাদ হোসেন সারাবাংলাকে জানান, সৌদি আরবের উন্নত মানের খেঁজুরের বীজ থেকে এই চারাগুলো উৎপাদন করা হয়েছে। চারাগুলোর পরিচর্যা ও উৎপাদন খরচ বিবেচনা করেই দাম নির্ধারণ করা হয়েছে।
আরও পড়ুন- বৃক্ষমেলায় দেশি নয়, বিদেশি জাতের গাছের দাপট
চারার দাম ও ফলের মান সম্পর্কে কথা হয় বাংলাদেশ বন বিভাগের সহকারী বন সংরক্ষক খন্দকার মো. জাকারিয়ার সঙ্গে। তিনি সারাবাংলাকে বলেন, ‘সৌদি খেজুরের চারাগুলো দেশি গাছের চারা থেকে আলাদা বৈশিষ্ট্যের হয়ে থাকে। দেশি গাছগুলো মূলত গুড় ও রস উৎপাদনের জন্য হলেও সৌদি খেজুরের চারা থেকে ভালো ফল পাওয়া যায়। উপযুক্ত পরিবেশ পেলে বাংলাদেশের মাটিতেই পাঁচ থেকে সাত বছরের মধ্যে ফল দেওয়া শুরু করবে গাছগুলো।’
থাই আমলকির চারা
মেলায় আরেকটি আকর্ষনীয় ও দামি গাছ হচ্ছে ‘থাই আমলকি’র চারা। এই চারাটির দাম হাঁকা হয়েছে এক লাখ টাকা। থাই আমলকির এই চারাটি এনেছে আশুলিয়ার ইব্রাহিম নার্সারি। পাঁচ ফুট উচ্চতার এই গাছের চারাটি দেশি গাছের থেকে আকারে অনেক ছোট। তবে ফল ধরে দেশি গাছের তুলনায় বহুগুণে বেশি। ফলের আকারও দেশি আমলকির দ্বিগুণ। ছোট গাছের চারাটিতে থোকায় থোকায় ঝুলে আছে আমলকি। ক্রেতা ও দর্শনার্থীরা মুগ্ধ হয়ে দেখছেন গাছের চারাটিকে।
আশুলিয়া গার্ডেন সেন্টারের বিক্রেতা সারাবাংলাকে বলেন, ‘সাধারণত সারাবছর এসব চারা খুব একটা বিক্রি হয় না। চারার দাম বেশি হওয়ায় সব নার্সারি এই চারাগুলো তুলতেও সাহস করে না। আমরা মেলা উপলক্ষে এই চারাটি তুলেছি, উপযুক্ত দাম পেলে বিক্রি করে দেবো।’
কাঁঠালি বট বনসাই
বনসাই এর প্রতি ক্রেতা ও দর্শনার্থীদের আগ্রহ সব সময়েই বেশি দেখা যায়। তবে এবারের মেলায় আসা বনসাইগুলোর মধ্যে ক্রেতাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে কাঁঠালি বট বনসাই। জানা গেলো, প্রায় ৪০ বছরের পুরোনো গাছ এই বনসাইটি। দেখতে একদম পরিপূর্ণ বড় একটি গাছের মতো মনে হলেও গাছটির উচ্চতা মাত্র আট থেকে দশ ইঞ্চি। কাঁঠালি বটের এই বনসাইটির দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ৪০ হাজার টাকা।
‘শিক্ষায় বন প্রতিবেশ, আধুনিক বাংলাদেশ’, এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে বিশ্ব পরিবেশ দিবস উপলক্ষ্যে গত বৃহস্পতিবার (২০ জুন) থেকে শুরু হয়েছে মাসব্যাপী এই বৃক্ষমেলা। মেলায় মোট ১০৪টি স্টল রয়েছে। এর মধ্যে সরকারি ছয় প্রতিষ্ঠানের জন্য রাখা হয়েছে ১২টি স্টল। আর বেসরকারি সংস্থা ও ব্যক্তি মালিকানাধীন নার্সারির জন্য রয়েছে আরও ৯০টি স্টল। বাকি দু’টি স্টলের মধ্যে একটি মেলা নিয়ন্ত্রণ কক্ষ ও অন্যটি তথ্যকেন্দ্র।
মেলা চলবে আগামী ২০ জুলাই পর্যন্ত। প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত ক্রেতা ও দর্শনার্থীদের জন্য বৃক্ষমেলা উন্মুক্ত থাকবে।
সারাবাংলা/ওএম/এসএমএন
খেজুর গাছ গাছের চারা থাই আমলকি বৃক্ষমেলা বৃক্ষমেলা ২০১৯ সৌদি খেজুর