বাজেটে রাজস্বের ৫ খাতে সংশোধনী আসছে
২৪ জুন ২০১৯ ২১:৩০
ঢাকা: ২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের রাজস্বের অন্তত পাঁচটি খাতে সংশোধনী আনা হচ্ছে। এরই মধ্যে সংশোধনী আনার ব্যাপারে সরকারের উচ্চপর্যায়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে। এছাড়া আরও কয়েকটি খাত নিয়ে স্টেকহোল্ডার ও নীতি নির্ধারকদের সঙ্গে আলোচনা চলছে।
ব্যবসায়ী ও সংশ্লিষ্টদের অব্যাহত দাবির পরিপ্রেক্ষিতে এই সংশোধনী আনা হচ্ছে বলে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা এতথ্য জানান।
ওই কর্মকর্তা সারাবাংলাকে বলেন, ‘প্রস্তাবিত বাজেটে সরকারি ও বেসরকারি অফিসে পণ্য বা সেবা সরবরাহকারীদের ভ্যাট কমানো, মূলধনী যন্ত্রপাতি ও কাঁচামাল আমদানিতে স্থায়ীভাবে আগাম কর প্রত্যাহার, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও অনলাইনে পণ্য বেচাকেনায় ভ্যাট প্রত্যাহার, শেয়ারবাজারে তালিকাভূক্ত কোম্পানির রিজার্ভ তহবিল, স্টক ডিভিডেন্ট বা বোনাস শেয়ারের ওপর আরোপিত কর প্রত্যাহার এবং সঞ্চয়পত্রের মুনাফার ওপর আরোপিত বাড়তি উৎসে কর প্রত্যাহারের মাধ্যমে সংশোধনী আনা হবে।’
আরও পড়ুন- যেভাবে রাজস্ব বাড়াবেন অর্থমন্ত্রী
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা জানান, প্রস্তাবিত বাজেটে ব্যাপকভাবে ভ্যাটের আওতা বাড়ানো হয়েছে। এর মধ্যে সঞ্চয়পত্রে উৎসে কর দ্বিগুণ বাড়ানো, শিল্পের কাঁচামাল ও মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানিতে আগাম কর আরোপ, অনলাইনে বেচাকেনার ওপর ভ্যাট আরোপ নিয়ে সরকারের ভেতরে-বাইরে এবং ব্যবসায়ী মহলে ব্যাপক সমালোচনা হয়। বিভিন্ন ব্যবসায়ী সংগঠনসহ অর্থনীতিবিদরা এসব কর তুলে নেওয়ার পক্ষে মত দেন। এগুলো আমলে নিয়ে সরকারের নীতিনির্ধারকরা প্রস্তাবিত বাজেটে রাজস্বের কয়েকটি খাত সংশোধনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। জাতীয় সংসদে বাজেট পাসের আগে অর্থবিল পাস করার সময় এসব সংশোধনী আনা হবে।
এনবিআর চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন ভুইঁয়া এ প্রসঙ্গে সারাবাংলাকে বলেন, ‘বাজেটে কিছু সংশোধনীর বিষয়ে আমাদের কাছে প্রস্তাব এসেছে। আমরা প্রস্তাবগুলো সক্রিয় বিবেচনা করছি।’সংশোধনী আনা হচ্ছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এখনই তা বলা যাচ্ছে না।’
আরও পড়ুন- বাজেট ২০১৯-২০: ৫ স্তরে ভ্যাট কাটবে সরকার
যে কারণে সংশোধনী আসছে
গত ১৩ জুন ২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট জাতীয় সংসদে পেশ করার পর মূলধনী যন্ত্রপাতি ও শিল্পের কাঁচামালের ওপর ৫ শতাংশ হারে আগাম কর আরোপের বিষয়টি নিয়ে ব্যাপক আলোচনা ও সমালোচনা হয়। ব্যবসায়ীদের আপত্তি ও সমালোচনার কারণে শিল্পের প্রতিবন্ধকতা বিবেচনায় নিয়ে এনবিআর বিশেষ আদেশ জারির মাধ্যমে মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানিতে আরোপিত আগাম কর সাময়িকভাবে প্রত্যাহার করেছে। কিছু কাঁচামালের ওপর এখনও আগাম কর বহাল রয়েছে। সংশোধিত অর্থবিল পাসের মাধ্যমে এ দুই বিষয়ে স্থায়ী সমাধান দেওয়া হবে। এছাড়া নতুন ভ্যাট আইনের আওতায় বাজেটে বেশকিছু সেবায় ভ্যাট হার বাড়ানো হয়েছে। এরমধ্যে বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি অফিসে পণ্য ও সেবা সরবরাহকারী বা যোগানদার সেবায় সাড়ে ৭ শতাংশ হারে ভ্যাট আরোপ করা হয়েছে। যা আগে ছিল ৫ শতাংশ। এটিকে আগের হারে নিয়ে যাওয়া হবে।
বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পরিচালিত ব্যবসা ও ভার্চুয়াল বিজনেস (অনলাইনে বেচাকেনা) সেবায় আরোপ করা ভ্যাট কমানো হবে। প্রস্তাবিত বাজেটে এই খাতে সাড়ে ৭ শতাংশ ভ্যাট আরোপ করা হয়েছে। আগে এ খাতে কোনো ভ্যাট ছিল না। বর্তমানে দেশের ই-কমার্স প্লাটফর্মে যে প্রথাগত পণ্য বিক্রি করা হয়, সেগুলো বিভিন্ন বাজারেও পাওয়া যায়। এই পণ্য শপিং মল বা সুপারশপ থেকে কিনতে গ্রাহকদের ৫ শতাংশ ভ্যাট দিতে হয়। কিন্তু ই-কমার্স সাইট থেকে পণ্য কেনায় ভ্যাট অব্যাহতি থাকায় বাজারের দোকান বা সুপারশপগুলো অসম প্রতিযোগিতায় পড়ে। প্রতিযোগিতা সুষম করার যুক্তিতে এনবিআর ই-কমার্সকে ভ্যাটের আওতায় আনে। সব শ্রেণির ব্যবসাকে সমান সুযোগ করে দিতে বাজেটে ভার্চুয়াল বিজনেসে ভ্যাট ৫ শতাংশ করা হয়।
আরও পড়ুন- বাজেটে ভ্যাট আইন কার্যকরে বিশেষ দিক নির্দেশনা থাকছে
প্রস্তাবিত বাজেটে সঞ্চয়পত্রের মুনাফার ওপর উৎসে কর ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১০ শতাংশ করা হয়েছে। এই বিষয়টি নিয়ে সরকারের মধ্যেই ব্যাপক সমালোচনা হয়েছে। সবদিক বিবেচনায় সঞ্চয়পত্রের উৎসে কর আগের স্থানে নিয়ে যাওয়া হবে বলে এনবিআর থেকে জানা গেছে।
এছাড়া, প্রস্তাবিত বাজেটে শেয়ারবাজার বিকাশে তালিকাভুক্ত কোম্পানির রিজার্ভ তহবিল যদি তাদের পরিশোধিত মূলধনের বেশি হয়, তবে বাড়তি অংশের ওপর ১৫ শতাংশ কর আরোপ করা হয়েছে। ফলে, বাড়তি রিজার্ভ থাকলে ওই হারে কর দিতে হবে। এতে বহুজাতিক কোম্পানির রিজার্ভের অর্থ নগদ আকারে লভ্যাংশ দিয়ে বিদেশে নিয়ে যাওয়ার শঙ্কা তৈরি হয়েছে। ফলে বিনিয়োগ কমার শঙ্কা রয়েছে। এ কারণেই এ কর প্রত্যাহার করা হচ্ছে।
আরও পড়ুন- বাজেট ২০১৯-২০-এ করের বোঝা বাড়বে না
পাশাপাশি শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোকে বোনাস শেয়ারের পরিবর্তে নগদ লভ্যাংশ দেওয়ায় উৎসাহিত করতে বোনাস শেয়ারের সমপরিমাণ অর্থের ওপর ১৫ শতাংশ কর আরোপ করা হয়েছে। ফলে বোনাস দেওয়ার বিষয়ে নিরুৎসাহিত হবে কোম্পানিগুলো। এতে বোনাস শেয়ার দিয়ে কোম্পানির মূলধন বাড়ানোর প্রক্রিয়াটি বাধাগ্রস্ত হবে। নগদ লভ্যাংশ দিলে মুনাফার অর্থ চলে যাবে মালিকপক্ষের কাছে। এসব কারণে বোনাস শেয়ারের ওপর আরোপিত কর প্রত্যাহার করা হতে পারে।
সারাবাংলা/এইচএ/পিটিএম