Saturday 28 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

‘প্রধানমন্ত্রীর প্রকল্প নিয়ে রাস্তায় নামতে হবে ভাবিনি’


৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ১৫:১০

জাকিয়া আহমেদ, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট 

ঢাকা:  গত শনিবার আমার একটি ছেলে সন্তানের জন্ম হয়, সন্তান প্রসবের সময় স্ত্রীর অবস্থা ছিল সংকটাপন্ন। ধীরে ধীরে স্ত্রীর অবস্থার কিছুটা উন্নতি হলেও ছেলেটা দুইদিন পর সোমবার মারা যায়। অথচ, আমি দাবি আদায়ে এখানে। ছেলেটার মরা মুখও দেখতে পারিনি, বলতে গিয়ে কাঁদতে লাগলেন বেলাল উদ্দিন।

কক্সবাজারের পেকুয়া উপজেলার কমিউনিউটি হেলথ কমপ্লেক্সের একজন স্বাস্থ্যকর্মী বেলাল উদ্দিন। চাকরি রাজস্ব করার দাবি নিয়ে বেলাল উদ্দিন ঢাকায় জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে সহকর্মীদের সঙ্গে অনশন করছেন। এ কারণে ছেলের জন্মের সময়ে থাকতে পারেননি স্ত্রীর পাশে, আর ছেলের মৃত্যুর পর ছেলেটিকে দাফনও করতে পারেননি। বেলাল উদ্দিন সারাবাংলাকে বলেন, বাবা হয়ে ছেলের মুখটা দেখতে পারিনি, ছেলেটাকে নিজের হাতে মাটিও দিতে পারলাম না।

ছেলের মৃত্যু যেন আরও কঠোর করেছে বেলাল উদ্দিনকে। যে দাবি আদায়ের জন্য ছেলের মুখ দেখতে পারলাম না, সেই দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত ঢাকা ছাড়ব না, বলছিলেন বেলাল। এবার তার সঙ্গে গলা মেলালেন তার পাশে থাকা অন্য স্বাস্থ্যকর্মীরাও। বললেন, এখান থেকে দাবি আদায় করে হয় বাড়ি ফিরব, নয়ত না খেয়ে মরে যাব, লাশ যাবে বাড়িতে।

এরইমধ্যে তাদের কয়েকজন সহকর্মী অসুস্থ হয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন বলেও জানান তারা।

এসময় বাংলাদেশ সিএইচসিপি অ্যাসোসিয়েশনের দাবি আদায় বাস্তবায়ন কমিটির আহ্বায়ক শহীদুল ইসলাম বলেন, কমিউনিটি ক্লিনিক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রকল্প। তার প্রকল্প নিয়ে রাস্তায় নামতে হবে-তা ভাবিনি। আর যদি সরকার পরিবর্তন হয় তাহলে তো আমাদের পথে নামতে হবে।

বিজ্ঞাপন

চাকরি জাতীয়করণ করার দাবিতে ঢাকায় জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে অবস্থান করছেন কমিউনিটি ক্লিনিকে কর্মরত কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডাররা (সিএইচসিপি)। গত ২৭ জানুয়ারি থেকে প্রেস ক্লাবের সামনে তারা অবস্থান করছেন। অবস্থান কর্মসূচির চার দিন পর গত ১ ফেব্রুয়ারি থেকে তারা আমরণ অনশনে গিয়েছেন। সিএইচসিপিরা বলছেন, দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত তারা কর্মসূচি চালিয়ে যাবেন, এতে যদি মৃত্যু হয়-তাতেও কোনো আক্ষেপ নেই তাদের।

আহ্ববায়ক শহীদুল ইসলাম বলেন, গত বছরের ১২ ফেব্রুয়ারি সুপ্রিম কোর্ট আমাদের চাকরি জাতীয়করণের জন্য আদেশ দেয়। ২২ সেপ্টেম্বর রায়ের কপি বের হয় কিন্তু তারপরও আমাদের কিছু হয়নি, আমাদের জন্য কিছু করেনি মন্ত্রণালয় এবং অধিদফতর।

কিন্তু স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম গত ৩১ জানুয়ারি আপনাদের চাকরি স্থায়ীকরণের আশ্বাস দিয়েছেন। স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেছেন, সিএইচসিপিদের চাকরি স্থায়ীকরণের জন্য নতুন আইন করতে যাচ্ছেন এবং নতুন আইনের মাধ্যমে চাকরি স্থায়ীকরণ, ইনক্রিমেন্ট, পেনশনসহ সবকিছুর ব্যবস্থা করা হবে।

স্বাস্থ্যমন্ত্রীর এমন বক্তব্যে কেন আপনারা সন্তুষ্ট নন, জানতে চাইলে শহীদুল ইসলাম বলেন, উচ্চ আদালতের রায়ের পরেও যেখানে কাজ হয় না সেখানে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর মৌখিক আশ্বাসে আমাদের ভরসা নেই এবং আমরা ভরসা করছিও না-সারাবাংলাকে বলেন, শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলা কমিউনিটি ক্লিনিকের স্বাস্থ্যকর্মী সুমন মাতবর।

সুমন মাতবর বলেন, স্বাস্থ্যমন্ত্রীর এ আশ্বাসের পর প্রেসক্লাবে স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক আবুল কালাম আজাদ এবং লাইন ডিরেক্টর এসে আমাদের বলেছেন, ‘আপনারা যা চান তার থেকে বেশি দেব’-কিন্তু তারা একবারও চাকরি স্থায়ীকরণের কথা বলেনি। আমাদের বেশি পাওয়ার কোনো ইচ্ছা নেই, ‘আমাদের এক দফা-এক দাবি’, চাকরি স্থায়ীকরণ ছাড়া আমরা আর কিছু চাই না।’

বিজ্ঞাপন

দাবি আদায় বাস্তবায়ন কমিটির রাজশাহী বিভাগের আহ্ববায়ক আলফাজ উদ্দিন লিটন সারাবাংলাকে বলেন, ২০১৩ সালে সিএইচসিপিদের চাকরি স্থায়ীকরণের নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু পাঁচবছর পরেও আমরা অবহেলিত, মানবেতর জীবনযাপন করছি। আমরা প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা ছাড়া এখান থেকে সরব না।

অনশনরত সিএইচসিপিরা বলেন, চাকরি স্থায়ীকরণের দাবিতে এর আগে তারা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ২০ থেকে ২২ জানুয়ারি পর্যন্ত এবং ২৩ থেকে ২৫ তারিখ পর্যন্ত জেলা সিভিল সার্জন অফিসে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন।

দাবি বাস্তবায়ন কমিটির সদস্য মিনহাজ সর্দার জানান, তারা প্রতিদিন সারাদেশে প্রায় ৯০ লাখ রোগী দেখেন।

১৯৯৮ সালে আওয়ামী সরকার সারাদেশে একটি করে কমিউনিটি ক্লিনিক নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেয়, কিন্তু ২০০১ সালে বিএনপি এর কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়।

পরে ২০১১ সালে আওয়ামী লীগ সরকার পুনরায় কমিউনিটি ক্লিনিক প্রকল্প চালু করে ১৩ হাজার ৫০০ সিএইচসিপি নিয়োগ দেয়। বর্তমানে সিএইচিসিপিদের সংখ্যা ১৪ হাজার।

সারাবাংলা/জেএ/টিএম/একে

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর