বাংলাদেশে ভয়ের কারণ নেই, হলি আর্টিজানে ৩ ইতালিয়ান
১ জুলাই ২০১৯ ২১:১৮
ঢাকা: বাংলাদেশে ভয়াবহতম সন্ত্রাসী হামলায় প্রাণ হারিয়েছিলেন তাদের দেশ ইতালির ৯ নাগরিক। এ যেন স্বজন হারানোর বেদনা। তাই তিন বছর পরও তাদের স্মরণ করতে হাজির হয়েছিলেন ওই হামলার সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে থাকা হলি আর্টিজানে। স্মরণবেদিতে ফুল দিয়ে জানালেন শ্রদ্ধা। কিন্তু তিন বছর আগের ওই হামলা কি এখনো তাদের আতঙ্কিত করে? জানতে চাইলে তিন ইতালিয়ানের উত্তর, বাংলাদেশের মানুষ শান্তিপ্রিয়। তাই এ দেশে ভয়ের কোনো কারণ নেই। বাংলাদেশে থাকতে তারা কোনোভাবে অনিরাপদও বোধ করেন না।
সোমবার (১ জুলাই) সকাল সাড়ে ১১টার দিকে অন্য অনেকের মতোই হলি আর্টিজানে শ্রদ্ধা জানাতে আসেন ওই তিন ইতালীয় নাগরিক— আতিলিও, বারোলো ও টোবালেলি রিকোর্ডো। শ্রদ্ধা জানানো শেষে সারাবাংলার সঙ্গে কথা হয় তাদের।
আরও পড়ুন- হলি আর্টিজানে হামলা মামলা: এ বছরেই রায়ের প্রত্যাশা
ইতালির নাগরিত আতিলিও বাংলাদেশে আছেন ৪৬ বছর ধরে। একটি খ্রিশ্চিয়ান মিশনারিতে ধর্মযাজক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। ৭৬ বছর বয়সী আতিলিও বলেন, বাংলাদেশে ভয়ের কোনো কারণ নেই। সন্ত্রাসী হামলা ঘটেছিল ঠিক, তবে ওই হামলার পর বাংলাদেশের পুলিশ উপযুক্ত ব্যবস্থা নিয়েছে। হামলা কাটিয়ে বাংলাদেশ এখন উন্নতির দিকে যাচ্ছে।
আতিলিও আরও বলেন, এরকম একটি ঘটনার পর সবাই শিক্ষা নিয়েছে, সচেতন হয়েছে। ৪৬ বছর ধরে এ দেশে আছি, আমি কোনো বিপদ বোধ করছি না।
আরও পড়ুন- ফুলেল শ্রদ্ধায় হলি আর্টিজান স্মরণবেদি
হলি আর্টিজানে যখন জঙ্গিরা হামলে পড়েছে, তখন সেখানে জিম্মি হয়ে পড়েছিলেন ক্লডিয়া। তার বন্ধু আনিসি বারোলো সারাবাংলাকে বলেন, আমি ছিলাম ইতালিয়ান রাষ্ট্রদূতের বাসায় আয়োজিত ডিনার পার্টিতে। সেখান থেকেই খবর পাই, হলি আর্টিজানে হামলা হয়েছে। আমরা তো সবাই খুব উদ্বেগের মধ্যে ছিলাম। বারবার খবর নেওয়ার চেষ্টা করি। আমার এক বন্ধু ক্লডিয়া ওখানে আটকা পড়েছিল। স্বাভাবিকভাবেই ওর জন্য আরও বেশি উদ্বেগ কাজ করছিল। পরে ভোর ৪টার দিকে ক্লডিয়া ওখান থেকে কৌশলে বেরিয়ে আসে। তখন একটু স্বস্তি পাই। ক্লডিয়া এখনো বাংলাদেশে কাজ করছেন বলে জানান তিনি।
বাংলাদেশে কাউন্সেলর হিসেবে কাজ করা বারোলোর আরও একটি পরিচয় রয়েছে। তিনি প্রধানমন্ত্রীর আন্তর্জাতিক বিষয়ক উপদেষ্টা গহর রিজভীর স্ত্রী। ফলে বাংলাদেশের সঙ্গে নিবিড়ভাবেই সম্পৃক্ত তিনি। হলি আর্টিজান হামলা নিয়ে তার ভাষ্য, এই একটি ঘটনা বাংলাদেশকে প্রতিনিধিত্ব করে না বা বাংলাদেশকে খারাপভাবেও উপস্থাপন করে না। ছোট্ট একটি গ্রুপ এই হামলা চালিয়েছে। তাদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দমন করতে পেরেছে বলেই বিশ্বাস করি। আমি মনে করি, এ ধরনের ঘটনা বাংলাদেশে আর কেউ ঘটাতে পারবে না।
আরও পড়ুন- ‘জঙ্গিরা দেশে হলি আর্টিজানের মতো হামলা আর চালাতে পারবে না’
রাজধানীর ফুটপাতের শিশুদের নিয়ে কাজ করেন ইতালীয় নাগরিক টোবালেলি রিকার্ডো। ১৯৮২ সাল থেকে রয়েছেন বাংলাদেশে। হলি আর্টিজানে যেসব ইতালীয় নাগরিক প্রাণ হারিয়েছেন, তাদের কয়েকজনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ ছিলেন রিকার্ডের। তাদের স্মরণ করতেই ছুটে এসেছিলেন হলি আর্টিজানে।
সেদিনের জঙ্গি হামলায় প্রাণ হারানো ইতালিয়ান নাগরিক নাদিয়া, আদলে, ক্রিশ্চিয়ানা ও ক্লাউডিয়া ভিনশেনের সঙ্গে পরিচয় ও ঘনিষ্ঠতা ছিল রিকার্ডের। তিনি জানান, হামলার কয়েকদিন আগেও ক্রিশ্চিয়ানার সঙ্গে কথা হয় তার। এর কিছুদিন আগেই তিনি যমজ সন্তানের জন্ম দেন।
আরও পড়ুন- হলি আর্টিজান হামলার পুনরাবৃত্তি ঠেকাতে কাজ করা হচ্ছে: মনিরুল
রিকার্ডো বলেন, ক্রিশ্চিয়ানাকে ওর পোরশে গাড়িটা বিক্রি করতে বলেছিলাম। কয়েকদিন পরই যে ও এভাবে মারা যাবে, সেটা ভাবতেই পারিনি। খুব কষ্ট হয়। তবু শক্ত থাকতে হয়।
বন্ধুদের ফুলেল শ্রদ্ধা জানিয়ে রিকার্ডো বলেন, এ দেশের মানুষ অনেক বেশি শান্তিপ্রিয়। কিছু মানুষ বিশৃঙ্খলা তৈরির চেষ্টা করছে। কিন্তু এ দেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও তাদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়েছে। কিছু সতর্কতা আছে, কিছু চিন্তা আছে; তবে সে সবখানেই থাকে। বাংলাদেশে ভয়ের কোনো কারণ নেই।
আরও পড়ুন- ‘গরীব বলে কেউই খোঁজ নেয় না’
২০১৬ সালের ১ জুলাই রাতে জঙ্গিদের হামলায় কেঁপে উঠেছিল গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারি। ভয়াবহ সেই হামলায় ইতালির ৯ জন, জাপানের সাত জন ও এক ভারতীয় নাগরিকসহ ২২ জন প্রাণ হারান। জঙ্গিরা জিম্মি করে ওই বেকারির কর্মীসহ আগত অতিথিদের। পরে বিশেষ কমান্ডোর অভিযানে পাঁচ জঙ্গির মৃত্যুর মধ্য দিয়ে অবসান ঘটে জঙ্গিদের তাণ্ডবের। অভিযান শেষে পাঁচ জঙ্গির সঙ্গে বেকারির বাবুর্চি সাইফুলের লাশ উদ্ধার করা হয়। তার সহকারী জাকির হোসেন শাওন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায়।
সারাবাংলা/ইউজে/টিআর
৯ ইতালীয় নাগরিক হলি আর্টিজান হলি আর্টিজান হামলার ৩ বছর হলি আর্টিজানে হামলা