Friday 27 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত মুসার রায় যেকোনো দিন


৮ জুলাই ২০১৯ ১৮:৫৫

ঢাকা: একাত্তরে হত্যা, গণহত্যা, লুণ্ঠন, অগ্নিসংযোগসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় রাজশাহীর পুঠিয়ার ‘রাজাকার’ মো. আব্দুস সামাদ (মুসা) ওরফে ফিরোজ খাঁ’র মামলার রায় যেকোনো দিন ঘোষণা করবেন ট্রাইব্যুনাল। উভয়পক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে সোমবার (৮ জুলাই) বিচারপতি শাহিনুর ইসলামের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল মামলাটি অপেক্ষমান (সিএভি) রাখেন।

ট্রাইব্যুনালে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন- প্রসিকিউটর ঋষিকেশ সাহা ও জাহিদ ইমাম। আসামি পক্ষে ছিলেন- আইনজীবী আব্দুস সাত্তার পালোয়ন।

বিজ্ঞাপন

পরে প্রসিকিউটর জাহিদ ইমাম জানান, পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ও সহযোগীদের নিয়ে মুক্তিযুদ্ধে গণহত্যা-হত্যাসহ যেসব অপরাধ মো. আব্দুস সামাদ করেছে মামলার শুনানি ও যুক্তিতর্কে সেসব তথ্য-প্রমাণ, সাক্ষ্য আমরা আদালতে তুলে ধরেছি। ভিকটিমসহ ভিকটিম পরিবারের ১৪ জন চাক্ষুষ সাক্ষি আসামির বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিয়েছেন। ফলে আমরা আসামির সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড চেয়েছি আদালতে।

প্রসিকিউটর জাহিদ ইমাম বলেন, ‘এ মামলায় তদন্তকারী কর্মকর্তাসহ মোট ১৫ জন সাক্ষ্য দিয়েছেন। আসামির পক্ষে কোনো সাক্ষি ছিল না। মামলার প্রথম অভিযোগে তিনজন চাক্ষুষ সাক্ষি সাক্ষ্য দিয়েছেন। তার মধ্যে দুই জন সরাসরি ভিকটিম ও একজন ভিকটিম পরিবারের সদস্য।’

‘দ্বিতীয় অভিযোগে মোট সাক্ষি তিনজন। তিনজনই ভিকটিম পরিবারের চাক্ষুষ সাক্ষি। তৃতীয় অভিযোগে চাক্ষুষ সাক্ষি চারজন। চারজনই ভিকটিম পরিবারের সদস্য। চতুর্থ অভিযোগেও সাক্ষি চারজন। তার মধ্যে তিনজনই সরাসরি ভিকটিম, একজন ভিকটিম পরিবারের’, বলেন তিনি।

বিজ্ঞাপন

আসমিপক্ষের আইনজীবী আব্দুস সাত্তার বলেন, ‘এই মামলায় যারা সাক্ষি আছে, এই সাক্ষিদের সাথে এবং ওইখানের সাঁওতাল পল্লীর লোকদের সঙ্গে এই আসামির বাবার জমি সংক্রান্ত বিরোধ ছিল। ১৯৬৪ সালে জমি বিনিময় করে তারা এসেছিল। কিন্তু দেশ স্বাধীনের বছরে এসে সাঁওতালরা বিনিময়কৃত ৫০ একর জমি ফেরত চাইলে আসামি, আসামির বাবা এবং এলাকার লোকদের সাথে সাঁওতালদের সংঘর্ষ হয়। সেই সংঘর্ষে আসামির বাবাও মারা যান। সাক্ষিরা সে সুযোগ নিয়ে তার বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিয়েছে।’

এ আইনজীবী বলেন, ‘উভয় পক্ষের মধ্যে এটা মূলত জায়গা-জমি সংক্রান্ত বিরোধ এবং বিচ্ছিন্ন ঘটনা। আদালতে সেটা প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছি বলে মনে করি। তাই আসামির খালাস চেয়েছি।’

উল্লেখ্য, চলতি বছরের ১৪ এপ্রিল এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তার জেরা শেষ হয়। এরপর গত বৃহস্পতিবার যুক্তিতর্ক শুরু হয়ে আজ সেটি শেষ হয়। পরে মামলাটি রায়ের জন্য অপেক্ষমান রাখেন।

চার সাঁওতালসহ ১৫ জনকে হত্যা, ২১ জনকে নির্যাতন ছাড়াও অপহরণ, লুণ্ঠন, অগ্নিসংযোগ এনে এ আসামির বিরুদ্ধে গত বছরের ১৪ জানিুয়ারি তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করে ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা। এরপর ওই বছরের ১২ এপ্রিল তার বিরুদ্ধে পাচঁ অভিযোগে ট্রাইব্যুনালে আনুষ্ঠানিকভাবে অভিযোগ পত্র দাখিল করে প্রসিকিউশন।

তদন্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী পুঠিয়ার বাঁশবাড়ী এলাকার মৃত আব্বাস আলীর ছেলে মো. আব্দুস সামাদ (মুসা) ওরফে ফিরোজ খাঁ মুক্তিযুদ্ধের আগে মুসলিম লীগের সমর্থক ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় জামায়াতে ইসলামীর সমর্থক হিসেবে শান্তি কমিটির স্থানীয় নেতার নেতৃত্বে মানবতাবিরোধী অপরাধ করেন। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে ১৯৭১ সালের ২০ এপ্রিল সাড়ে ৫টা থেকে সন্ধ্যা ৭টার মধ্যে পুঠিয়া থানার ভালুকগাছী ইউনিয়নের সাঁওতাল পাড়ায় গিয়ে আসামি ফিরোজ খাঁ, পাকিস্তানি আর্মি ও তার সহযোগীরা স্বাধীনতার পক্ষের লাড়ে হেমব্রম, কানু হাসদা, জটু সরেন ও এবং টুনু মাড্ডিকে তরবারি দিয়ে ও আগুনে পুড়িয়ে হত্যা করে।

২০১৬ সালের ১১ ডিসেম্বর মামলাটির তদন্ত শুরু হয়। তখন এ মামলায় আসামি করা হয়েছিল ৬ জনকে। কিন্তু তদন্ত চলার সময়ই বাকি পাঁচ আসামির মৃত্যু হলে একমাত্র আসমি হিসেবে মো. আব্দুস সামাদ (মুসা) ওরফে ফিরোজ থাকেন। তদন্ত চলার সময় নাশকতার মামলায় গ্রেফতার হন এই আসামি। পরে ২০১৭ সালে ২৪ জানুয়ারি তাকে গ্রেফতার দেখিয়ে ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হলে ট্রাইব্যুনাল তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেয়।

সারাবাংলা/এজেডকে/এমও

টপ নিউজ মানবতাবিরোধী অপরাধ মুসা

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর