জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট: অফিস নেই! ঐক্য আছে?
১৯ জুলাই ২০১৯ ০৭:৪৫
ঢাকা: চতুর্থ তলা, প্রীতম-জামান টাওয়ার, ৩৭/২ বীর উত্তম গাজী দস্তগীর সড়ক, পুরানা পল্টন, ঢাকা-১০০০। এটি খুব প্রসিদ্ধ ঠিকানা নয়! তবে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে দেশি-বিদেশি, সরকারি-বেসকারি মিডিয়াগুলো এই ঠিকানায় হুমড়ি খেয়ে পড়েছে। এখানে বসেই দিন বদলের (ক্ষমতা পরিবর্তন) স্বপ্ন দেখেছেন ড. কামাল হোসেনের মতো ডাকসাইটে রাজনীতিবিদরা।
বলা হচ্ছিল, জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের কথা। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে রাজধানীর কালভার্ট রোডে (বীর উত্তম গাজী দস্তগীর সড়ক) প্রীতম-জামান টাওয়ারের চতুর্থ তলার পশ্চিম পাশের বড় আকৃতির তিনটি কক্ষকে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের কেন্দ্রীয় কার্যালয় হিসেবে ঘোষণা করা হয়।
এর একটি কক্ষে জাতীয় ঐক্যফ্যন্টের নীতিনির্ধারকরা বৈঠক করতেন। পাশের আরেকটি কক্ষ ব্যবহার করা হতো দেশি-বিদেশি মিডিয়ায় ব্রিফ করার জন্য। মিডিয়া রুমের পাশের কক্ষটি ছিল জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা ড. কামাল হোসেনের বিশ্রামের জন্য। প্রধান কার্যালয়ে এলে দামি সোফা, চেয়ার, টেবিল, সেলফ ও ঝাড়বাতি দিয়ে সাজানো এই কক্ষটিতে বসতেন ড. কামাল হোসেন।
গতবছর মধ্য অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর মাসের ২৭ তারিখ পর্যন্ত খুব জমজমাটই ছিল জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের এই প্রধান কার্যালয়। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন গত বছর ৩০ ডিসেম্বর ভোট গ্রহণের ৭২ ঘণ্টা আগে ২৭ ডিসেম্বর বিকেলে এখানেই জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সব শেষ সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এই সংবাদ সম্মেলন থেকেই ড. কামাল হোসেন জানান, জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট অন্তত ২০০ আসনে জিতবে!
পরের দিন ২৮ ডিসেম্বর বিকেলে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ঢাকা মহানগর কমিটির সংবাদ সম্মেলন ছিল প্রধান কার্যালয়ে। কিন্তু ওই দিন দুপুরের পর প্রীতম-জামান টাওয়ারে অগ্নিকাণ্ড ঘটে। সেদিন রাস্তায় দাঁড়িয়েই সংবাদ সম্মেলন করেন জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট মহানগর কমিটির সমন্বয়ক জগলুল হায়দার আফ্রিক। অর্থাৎ ২৭ ডিসেম্বর-ই ছিল জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রধান কার্যালয়ের শেষ দিন।
বৃহস্পতিবার (১৮ জুলাই) প্রীতম-জামান টাওয়ারের চতুর্থ তলায় গিয়ে দেখা হয় শাহ আলম নামে এক ব্যক্তির সঙ্গে। যে কক্ষটিতে ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতারা বৈঠক করতেন, সে কক্ষের সামনেই দাঁড়িয়েছিলেন শাহ আলম। জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের অফিস সম্পর্কে জানতে চাইলে এই প্রতিবেদককে তিনি বলেন, ‘সে অফিস তো কবেই শেষ! নির্বাচনের পর এখানে আর কেউ আসেনি। ভবন মালিক ডেভেলপার কোম্পানির কাছে অফিস ভাড়া দিয়ে দিয়েছে।’
অফিসে ঢুকে দেখা যায়, ডেভেলপার কোম্পানিটি নিজেদের মতো করে অফিস সাজিয়ে নিয়েছে। সেখানে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের কোনো সাইন-সিম্বল নেই। অফিসের যে বুথটি জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের দাফতরিক কাজে ব্যবহার করা হতো, সেটিতে এখন ডেভেলপার কোম্পানির কর্মী শাহ আলম বসেন।
শুধু এ কক্ষটি নয়, মিডিয়ায় ব্রিফ করার জন্য পাশের বিশাল আকৃতির যে কক্ষটি ব্যবহার করত জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট, সেটিও ভাড়া দিয়ে দিয়েছে ভবন কর্তৃপক্ষ। বৃহস্পতিবার সেটি তালাবদ্ধ দেখা গেছে। আর যে কক্ষটি ড. কামাল হোসেনের জন্য সাজানো হয়েছিল, সেটিতে এখন ‘চ্যান্সেরি লিগ্যাল কাউন্সিল (সিএলসি)’ নামে একটি প্রতিষ্ঠানের নামফলক শোভা পাচ্ছে।
জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠনের পর থেকেই এর আয়ু ও স্থায়ীত্ব নিয়ে নানা মহল থেকে সংশয় প্রকাশ করা হচ্ছিল। তবে সব সংশয় উড়িয়ে দিয়ে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের উদ্যোক্তরা বলার চেষ্টা করেছেন, এটি নির্বাচনি জোট নয়। এটি জনতার জোট। ভোটের পরও এই জোটের অস্তিত্ব এবং অখণ্ডতা বজায় থাকবে।
ভোটের পরপরই জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রধান কার্যালয়ের অস্তিত্ব বিলীন হয়ে যায়। কার্যালয়ের সামনে থেকে উধাও হয়ে যায় জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নামফলক। ঐক্যফ্রন্টের সদর দফর হিসেবে যে কক্ষ তিনটি ব্যবহার করা হতো, সেগুলো বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কাছে ভাড়া দিয়ে দেন ভবন মালিক।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, গত মাসে (১০ জুন) আ স ম আব্দুর রবের বাসায় অনুষ্ঠিত বৈঠক-ই জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সব শেষ বৈঠক। এরপর জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের আর কোনো সভা কোথাও অনুষ্ঠিত হয়নি। ৩০ ডিসেম্বরের পর থেকে ১০ জুনের আগ পর্যন্ত জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের বেশিরভাগ বৈঠক ড. কামাল হোসেনের বাসা, তার মতিঝিল চেম্বার অথবা আ স ম আব্দুর রবের বাসায় অনুষ্ঠিত হয়েছে। জোটের প্রধান কার্যালয়ে কেউ আসেননি।
জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের দফতর প্রধান জাহাঙ্গীর আলম মিন্টু সারাবাংলাকে বলেন, ‘নির্বাচনের আগে গড়ে ওঠা সরকারবিরোধী জোট জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের তেমন কোনো কর্মকাণ্ড এখন নেই। যেটুকু আছে, সেটা ড. কামাল হোসেনের চেম্বার অথবা শীর্ষ নেতাদের বাসায় সেরে ফেলা যায়। সে জন্য অত বড় অফিস আর প্রয়োজন নেই। আবার যখন প্রয়োজন হবে, তখন হয়ত বড় অফিস খুঁজে নেবে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট।’
সারাবাংলা/এজেড/একে