Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

আতঙ্কে শিক্ষার্থীরা, ঢাকা ছাড়ছেন বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তিচ্ছুরা


৫ আগস্ট ২০১৯ ১৩:৩২

ঢাকা: ডেঙ্গু আতঙ্কে ঈদের ছুটি শুরুর আগেই ঢাকা ছাড়ছেন বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীরা। রাজধানীর ফার্মগেট, মনিপুর ও আজিমপুর এলাকায় বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি কোচিং সেন্টার ও শিক্ষার্থী হোস্টেলগুলোতে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে গত এক সপ্তাহ ধরেই গ্রামের বাড়িতে ফিরে যাচ্ছেন শিক্ষার্থীরা। অনেকেই আবার জ্বর নিয়েই বাড়ি ফিরছেন।

ফার্মগেটের বিসমিল্লাহ হোস্টেলে ইঞ্জিনিয়ারিং কোচিং করতে গত এপ্রিলে  ঢাকায় আসেন  মামুনুর রশীদ। গত ২৭ জুলাই ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হন তিনি। পরে বেশি অসুস্থ হয়ে পড়ায় গত ১ জুলাই তিনি ভর্তি হন পান্থপথের হেলথ অ্যান্ড হোপ হাসপাতালে। গতকাল ( ৪ আগস্ট) হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র নিয়ে সরাসরি রওনা দিয়েছেন গ্রামের বাড়ির পথে । যদিও এখনও তার প্লেটলেট( ১ লাখ ৪০ হাজার)  ও   ব্লাড প্রেসার স্বাভাবিকের চেয়ে কম।

বিজ্ঞাপন

ঢামেকে ডেঙ্গুজ্বরে কিশোরের মৃত্যু

মামুনুর সারবাংলাকে বলেন, আমাদের হোস্টেলের অধিকাংশই বাড়ি চলে গেছে। । প্রায় ১০ থেকে ১২ জনের ডেঙ্গু হয়েছে । কোচিং এর ক্লাস ৯ তারিখ পর্যন্ত চলবে। কিন্তু সবাই ভয় পেয়ে আগেই ঢাকা ছাড়ছে।

মামুনুর জানায়, ঈদের পরেই উদ্ভাস কোচিংয়ে আমার ক্লাস শুরু হবে কিন্তু আমি দেরিতে ফিরব। ডেঙ্গু  পরিস্থিতি স্বাভাবিক হোক আগে।

ফার্মগেটের ইউসিসি কোচিং সেন্টারের বাংলা বিষয়ের শিক্ষক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী শামীম আহমেদ বলেন, ‘ক্লাসে আমরা শিক্ষার্থী অনেক কম পাচ্ছি । বেশির ভাগ ভর্তিচ্ছুরাই বাড়ি চলে গেছেন। অনেকে যাচ্ছেন। ঢাকায় ডেঙ্গু যেমন ছড়িয়ে পড়েছে, তেমনই ডেঙ্গুর ভয়ও ছড়িয়ে পড়েছে। আমাদের অনেক শিক্ষার্থী ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হওয়ায় সেই ভয় আরও বেড়েছে। এজন্য শিক্ষার্থীরা ঝুঁকি নিতে চাচ্ছে না।’

বিজ্ঞাপন

 

কোচিং সেন্টারটির পরিচালক এম এ হালিম পাটওয়ারীও একই কথা বলেছেন সারাবাংলাকে। ডেঙ্গু আক্রান্ত শিক্ষার্থীর সংখ্যা হাতে গোনা উল্লেখ করে এই শিক্ষা ব্যবসায়ী বলেন, ‘আমাদের সেন্টারের অল্প কয়েকজন শিক্ষার্থী ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছে, আবার সুস্থ হয়েছে। তাদের জন্য আমরা আমাদের সাধ্য মতো চেষ্টা করেছি। এখন ডেঙ্গুভীতি ছড়িয়ে পড়ায় শিক্ষার্থীরা বাড়ি চলে যাচ্ছে। ঈদের পর এরা আবার ক্লাশে যোগ দেবে।’

ফার্মগেট, মনিপুর ও আজিমপুর এলাকার হোস্টেলগুলো এখন প্রায় শিক্ষার্থী শূন্য হয়ে গেছে। আজিমপুরের শেফালী গার্ডেন এবং ফার্মগেটের স্টুডেন্ট হোম হোস্টেলে ঘুরে দেখা গেছে সেখানে এক রকম ছুটির আমেজ চলছে। ঈদ আসার আগেই এই দুটি হোস্টেলের বেশিরভাগ লোকজন শহর ছেড়েছে। যারা এখনো রয়ে গেছেন তাদের সবাই প্রায় চাকুরীজীবী। তবে কয়েকজন প্রত্যাশীও রয়ে গেছেন।

হোস্টেলের বাসিন্দা রাসেল চৌধুরী বলেন, ‘শেফালী গার্ডেনে বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী এবার ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন। কেউ মারা না গেলেও বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তিচ্ছুরা ভালো রকমের ভয় পেয়েছেন। অনেকে শরীরে জ্বর নিয়েই বাড়ি চলে গেছেন। এখানে বেশিরভাগ শিক্ষার্থীই গ্রাম এবং মফস্বল থেকে আসেন। ফলে ডেঙ্গুর ভয় কাটিয়ে তারা ঢাকা শহরের জীপন যাপনের নিজেদের মানিয়ে নিতে পারেনি।’

এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের মতো  ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও এখন রয়েছেন ডেঙ্গু আতঙ্কে। এই রোগে আক্রান্ত হয়ে গত ২৬ জুলাই রাতে মারা যান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিন্যান্স বিভাগের শিক্ষার্থী ফিরোজ কবির। এরপরের তিনদিনে ২১ জন শিক্ষার্থীর শরীরে ডেঙ্গু শনাক্ত করা হয়। ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোতে ডেঙ্গু আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। এমন পরিস্থিতিতে ক্যাম্পাস বন্ধ ঘোষণার দাবি জানান অনেক শিক্ষার্থী।

মুহসিন হলের ইতিহাস বিভাগের শিক্ষার্থী জুবায়ের বলেন, ‘হলে প্রচুর মশার উৎপাত হচ্ছে। এখানে কয়েকদিন পরপরই সিটি কর্পোরেশনের ধোঁয়া ছিটিয়ে যায় যদিও মশা কমে না। আমরা এক ধরনের আতংকের মধ্য দিয়ে পড়াশোনা চালিয়ে যাচ্ছি। ক্লাশ বন্ধ হয়ে গেলে একদিনও থাকবো না।’

কেবল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েই নয় অধিভুক্ত ইডেন কলেজেও ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে শান্তা তানভির নামের একজন শিক্ষার্থী মারা গেছেন। সে হিসাব বিজ্ঞান বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। তার মৃত্যুর পর কলেজ ক্যাম্পাসে ভয়াবহ রকমের ডেঙ্গু আতঙ্ক বিরাজ করছে। দ্বিতীয় বর্ষ সহ কয়েকটি বর্ষের শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা চলছে তাই একরকম বাধ্য হয়েই ক্যাম্পাসে থাকতে হচ্ছে শিক্ষার্থীদেরকে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ইডেন কলেজের একজন শিক্ষার্থী বলেন, ‘দ্বিতীয় বর্ষের পরীক্ষা তৃতীয় বর্ষের মাঝামাঝি সময়ে এসে নেওয়া হচ্ছে। সেটিও তিন মাস ধরে নেওয়া হচ্ছে। আগস্টের পরীক্ষাগুলো ঈদের পর নেওয়া যেতো। কিন্তু শিক্ষার্থীদের জীবন বিপন্ন করে ঢাবি কর্তৃপক্ষ আমাদের পরীক্ষা নিয়েই যাচ্ছে।’

এই বিষয়ে কথা বলতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি আখতারুজ্জামান ও ইডেন অধ্যক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি। তবে দুজনেই ডেঙ্গু ঠেকাতে নিজেদের ক্যাম্পাসে সতর্ক দৃষ্টি রাখছেন বলে সারাবাংলার এই প্রতিবেদককে জানান তারা।

আতঙ্ক ডেঙ্গু বিশ্ববিদ্যালয়

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর