কতটুকু সফল কিংবা ব্যর্থ জানি না: ডিএমপির বিদায়ী কমিশনার
৮ আগস্ট ২০১৯ ১৭:৫৯
ঢাকা: ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া বলেছেন, সাড়ে চার বছরের কর্মদশায় কতটুকু সফল হয়েছি কিংবা ব্যর্থ হয়েছি সেটি জানি না। তবে জনগণের প্রাপ্তি আর প্রত্যাশার ব্যবধান কমিয়েছি তা গর্ব করে বলতে পারি।’
আজ (৮ আগস্ট) শেষ কর্মদিবসে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে দুপুরে মিট দ্য প্রেসে সাংবাদিকদের একাধিক প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।
সদ্য বিদায়ী ডিএমপি কমিশনার বলেন, ‘কর্মজীবনে সাফল্য যেমন আছে, তেমনি ব্যর্থতাও আছে। তাই কতটুকু সফল হয়েছি সেটি জনগণ বলবে। তবে জনগণের যে প্রাপ্তি আর প্রত্যাশা সেটির ব্যবধান কমিয়েছি। যদিও পুরোপুরি সফল হতে পারিনি। কিন্তু পুলিশ এখন জনগণের নির্ভরতার জায়গায় পৌঁছাতে পেরেছে। এটিই গর্বের বিষয়।’
দুটি সফলতা এবং ব্যর্থতার কথা তুলে ধরে কমিশনার বলেন, ‘৩৪ হাজার পুলিশ সদস্য নিয়ে ১৬৮০ দিন কাজ করেছি (৪ বছর ৭ মাস) ডিএমপিতে। এ সময়ে নানা প্রতিবন্ধকতার মধ্যেও শহরকে নিরাপত্তা নিশ্চিতে বদ্ধপরিকর ছিলাম। আমরা জঙ্গি দমনে সফল হয়েছি। প্রায় ৭২ লাখ ভাড়াটিয়াদের তথ্য ডিএমপির কাছে সংগ্রহ করা হয়েছে। ফলে কোনো অপরাধী অপরাধ করে পার পাবে না। এটিও আমাদের নির্ধারিত কাজের বাইরে আরেকটি সফলতা।’
‘২০১৬ সালে হলিআর্টিজানে জঙ্গি হামলা আমিই একমাত্র সিনিয়র পুলিশ অফিসার যে ঘটনার ২০ মিনিটের মধ্যে পোঁছায় এবং ১০ গজের মধ্যে ছিলাম। এসময় উদ্ধার কাজে দুজনকে নিয়ে যখন আমি বেরিয়ে আসতেছিলাম ঠিক সেসময় আমার পেছনেই গ্রেনেড বিস্ফোরণ হয়। এ ঘটনায় পুলিশ সদস্য সালাউদ্দিন এবং এসি রবিউল আত্মত্যাগ করেছে। আল্লাহ হায়াৎ দিয়েছিল বলে হয়তো বেঁচে গিয়েছিলাম। কিন্তু এ ঘটনায় যখন সারাবিশ্ব ভেবেছিল আমাদের নিরাপত্তা ভেঙ্গে গেছে। তখন বিশ্বকে বুঝাতে সক্ষম হয়েছি আমরা আরও বেশি দৃঢ় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ সন্ত্রাস দমনে’- বলছিলেন ডিএমপি কমিশনার।
আছাদুজ্জামান মিয়া বলেন, ‘সেই জঙ্গি হামলার ঘটনার পর প্রধানমন্ত্রীর উদ্যোগে টেকনাপ থেকে তেতুলিয়ায় জঙ্গিবিরোধী কার্যক্রম চালিয়েছি। সেই সঙ্গে গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে আমরা প্রায় ৬০টির মতো হুলিয়া অভিযান চালিয়েছি। এটি একমাত্র আমাদের তরুণ মেধাবী পুলিশ অফিসারদের কারণে সম্ভব হয়ছে। মাত্র ছয়মাসের মধ্যে জঙ্গিদের নেটওয়ার্ক বিচ্ছিন্ন করতে সক্ষম হয়েছি। এটা আমাদের বড় সফলতা মনে করি।’
‘আমাদের আরও একটি বড় সফলতা হল- নিরাপদ সড়ক আন্দোলন, কোটা সংস্কার আন্দোলন, ভ্যাট আন্দোলনের মত বড় বড় এসব আন্দোলনের শেষ পর্যায়ে দেশি বিদেশী একটা চক্রান্তকে রুখে দেয়া। এসব আন্দোলনকে একটি গোষ্ঠী চক্রন্ত হিসেবে কাজে লাগাতে চেয়েছিল। কিন্তু আমরা পেশাদারিত্বের সাথে এ প্রত্যেকটি ঘটনায় মোকাবেলা করেছি অত্যন্ত সফলতার সঙ্গে। যেখানে যতটুকু বলপ্রয়োগ প্রয়োজন ছিল সেখানে ততটুকু প্রয়োগ করেছি।’
দুটি ব্যর্থতার কথা তুলে ধরে কমিশনার বলেন, ‘প্রথম ব্যর্থতা হিসেবে বলব, জনগণের প্রত্যাশা এবং প্রাপ্তির ব্যবধান কমিয়ে আনলেও জনগণের সেবা পরিপূর্ণতা দিতে পারিনি বলে এখনও মনে করি। থানাগুলোকে জনগণের জন্য আরও সহজ হওয়া প্রয়োজন বোধ মনে করি। সেই লক্ষ্যে ডিএমপির ৫০টি থানাকে ৩০২টি বিটে ভাগ করে আমরা জনগণের সেবা আরও সহজকরণে চেষ্টা করেছি। থানা যেন হয় মানুষের আস্থার প্রতীক সে লক্ষ্যেই আমরা এগিয়েছি। আমাদের ডিএমপির ৩৪ হাজার পুলিশের মধ্যে ৩৭২ জন বিসিএস ক্যাডার পুলিশ অফিসাররাও চেষ্টা অব্যাহত রেখেছেন।’
দ্বিতীয়ত ব্যর্থতা হিসেবে বলব- যানজটমুক্ত শহর তৈরি করতে পারিনি আমরা। কিন্তু আমরা চেষ্টা করেছি। না পারার জন্য আমাদের কাঠামোগত সমস্যাকেই দায়ী করব। কারণ এর একেকটি অংশ একেক দফতর নিয়ন্ত্রণ করে। তবুও গত সাড়ে চার বছরে আমরা কোনো পরিবহনের রিকুইজিশন দিইনি। এর একমাত্র কারণ ছিল জনদুর্ভোগ রোধ। তারপরও আমরা যানজট নিয়ন্ত্রনে আনতে পারিনি।
রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে পুলিশকে ব্যবহার করা হয় এমন একটা অভিযোগ পাওয়া যায় অনেক সময় সাংবাদিকের এমন প্রশ্নে জবাবে কমিশনার বলেন, ‘রাজনৈতিক উদ্দেশে ডিএমপি কোনো কাজ করেছে এটা আমার জানামতে হয়নি। জনমনে নিরাপত্তা নিশ্চিত এবং রাষ্ট্রকে রক্ষায় আমরা কাজ করেছি। এ কাজ কে কেউ যদি বলে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে করেছি তা ঠিক নয়। এটা পুলিশকে একটা মিথ্যা ব্লেইম দেওয়ার চেষ্টা।’
পুলিশের অনেক সদস্যদের বিরুদ্ধেও অন্যায়-দুর্নীতির অভিযোগ পাওয়া যায় এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘থানায় আমরা জিডি কপি ছাপিয়ে দিয়েছি। ট্রাফিক প্রসিকিউশন আমরা ইলেক্ট্রিক মেশিনে করেছি। এসব করেছি শুধুমাত্র জনহয়রানি রোধে। সেই সঙ্গে অপরাধ প্রমাণিত হওয়ার পর অনেক পুলিশ সদস্যকে শুধু চাকরিচ্যুত নয়, আইনিভাবে কারাগারেও পাঠিয়েছি। সেই নজিরও আছে।’
হতাশা প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘জনগণ আইন মানতে চায় না। কিন্তু আইন তৈরি হয় মানুষ তা মানার লক্ষ্যে। দুর্ভাগ্যজনকভাবে আমাদের দেশে অধিকাংশ জনগণ আইন মানে। এই যে আইন মানার প্রবণতা সেটি কীভাবে গেঁথে দেওয়া যায় এটিই ছিল আমার চ্যালেঞ্জ। ডিএমপার ৫০টি থানাধীন বিভিন্ন এলাকায় হাজার হাজার বৈঠক করেছি এটা নিয়ে। কিন্তু আমার মনে হয় আমাদের আরও কাজ করতে হবে।’
১৯৪৩ সালের আইনুযায়ী পুলিশ যদি ব্যক্তিগত কোনো ধান্দা করার লক্ষ্যে কোনো অপরাধ করে তাহলে সে দায় আমরা নেব না।
২০১৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পরিস্থিতি তুলে ধরে পুলিশ কমিশনার বলেন, আমরা চেষ্টা করেছি, জনমনে আতঙ্ক বিরাজ না করে ভোট প্রদানের ক্ষেত্রে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিত করেই নির্বাচনের কার্যক্রম শেষ করেছি।
বক্তব্য শেষ পর্যায়ে তিনি বলেন, ‘এই পোশাকে এটাই হয়তো শেষ দেখা। তবে অন্য পোশাকে অন্য কোনো জায়গায় আবার দেখা হয়ে যাবে। এ দেখাই শেষ দেখা নয়।’