Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

৪৮ বছরেও শুকায়নি মানিকদীর ক্ষত


২০ আগস্ট ২০১৯ ০৭:০২

কিশোরগঞ্জ: আজ ২০ আগস্ট। মানিকদী ট্র্যাজেডি দিবস। ১৯৭১ সালের এইদিনে পাক হানাদারবাহিনী ভৈরবের মানিকদী গ্রামে ঢুকে মসজিদের ভেতর থেকে ২০ জন মুসল্লি ও বিভিন্ন জায়গা থেকে আরও ২৬ জনকে ধরে একটি বাড়িতে নিয়ে এলোপাতাড়ি বেয়নেট চার্জ করে, লাঠিসোটা দিয়ে পেটায় এবং দা-বটি দিয়ে নির্মমভাবে আঘাত করে। এতে ঘটনাস্থলেই শহীদ হন ২০ জন। এছাড়া আহত হন ২৬ জন। পরবর্তী সময়ে মসজিদটির নামকরণ করা হয় মানিকদী হাজী বাড়ি শহীদী জামে মসজিদ।

বিজ্ঞাপন

ওই সময় বেঁচে যাওয়া গোলাপ মিয়া, প্রত্যক্ষদর্শী শাহজাহান ও আব্দুর রাজ্জাকসহ অনেকেই জানান, ১৯৭১ সালের ২০ আগস্ট শুক্রবার ভোরে ফজরের নামাজ আদায় করতে মুসল্লিরা মসজিদে ঢুকেছেন সবেমাত্র। ঠিক সেই সময় পাক হানাদারবাহিনী তাদের স্থানীয় দোসর রাজকারদের সহায়তায় গানশিপ নিয়ে গ্রামের পশ্চিম দিকের কালী নদী প্রবেশ করে। তাদের কাছে তথ্য ছিল যে, এই গ্রামে অনেক মুক্তিযোদ্ধা রয়েছে। এ জন্য তারা বাড়ি বাড়ি গিয়ে তল্লাশি চালায়। এ সময় তারা নিরীহ লোকজনদের বেঁধে ফেলে। পরে কয়েকটি বাড়িতে অগ্নিসংযোগসহ ধব্বংসলীলা চালায়। এক পর্যায়ে তারা হাজী বাড়ি মসজিদে ঢুকে ২০ জন মুসল্লি এবং গ্রামের ভিতর থেকে আরও অন্তত ২৬ জনসহ মোট ৪৬ জনকে ধরে একটি বাড়িতে নিয়ে যায়। সেখানে গিয়ে ওই ৪৬ জনকে এক লাইনে দাঁড় করিয়ে রশি দিয়ে বেঁধে হত্যার উদ্দেশ্যে বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে, রাইফেলের বাট ও লাঠিসোঠা নির্মমভাবে পিটিয়ে ফেলে রেখে যায়। এদের মধ্যে অলৌকিকভাবে বেঁচে যায় ২৬ জন।

বিজ্ঞাপন

এলাকাবাসী জানায়, অলৌকিকভাবে বেঁচে যাওয়া আহত ওই ২৬ জনের মধ্যে এরই মধ্যে মারা গেছেন ২৫ জন। এখন শুধু সেদিনের দুঃসহস্মৃতি ও ক্ষতচিহ্ন বয়ে বেড়াচ্ছেন বেঁচে যাওয়া গোলাপ মিয়া। সেদিনের ভয়াল স্মৃতি মনে হলে আজও আঁতকে ওঠেন তিনি। তাঁর মাথা গরম হয়ে যায়।

মানিকদীতে সেদিন যে ২০জনকে হত্যা করা হয়েছিল তাদের মধ্যে স্বামী ও শ্বশুর ছিল জোবেদা খাতুনের। তার চোখের সামনে পাকবাহিনী যে নির্যাতন চালিয়েছে তা মধ্যযুগীয় বর্বরতাকেও হার মানায়। সেদিন স্বামী ও শ্বশুরের মৃতদেহসহ ৪৬ জনকে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখে জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন প্রত্যক্ষদর্শী জোবেদা খাতুন। সেদিনের করুণ দৃশ্য আর ভয়াল স্মৃতি আজও তাকে তাড়া করে বেড়ায়। মানিকদীর হাজী পাড়া গ্রামের অনেক পরিবার সেদিন জোবেদার মতো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এদের মধ্যে কেউ হরিয়েছে বাবা, কেউ সন্তান অথবা কেউ নিজেই আহত হয়েছেন।

স্বামী ও শ্বশুর হারানো জোবেদা খাতুন মৃত্যুর আগে মুক্তিযোদ্ধার পরিবার হিসেবে স্বীকৃতি চান সরকারের কাছে। তার দাবি, তিনি ও পরিবারের সদস্যরা মুক্তিযোদ্ধা না হলেও পাকহানাদারদের হাতে স্বামী ও শ্বশুর নির্মমভাবে খুন হয়েছেন। তারপর থেকে তিনি সংগ্রাম করে এ পর্যন্ত বেঁচে আছেন। তাই সরকার যেন তার পরিবারকে মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি দেয়।

এর আগে ২০১৭ সালের মে মাসে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালের চিফ প্রসিকিউটরের নেতৃত্বে একটি তদন্ত দল ঘটনাস্থল হাজী বাড়ি শহীদী জামে মসজিদ পরিদর্শন করে। এ সময় তারা বেশকিছু আলামতও সংগ্রহ করে নিয়ে যায়।

কিশোরগঞ্জ ভৈরব মানিকদী ট্র্যাজেডি মুক্তিযুদ্ধ

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর