‘অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশে ডেঙ্গুতে মৃত্যুর হার কম’
১১ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ২২:৪৮
ঢাকা: স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কামাল আজাদ বলেছেন, ‘বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশে ডেঙ্গুতে মৃত্যুর হার কম। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, ডেঙ্গুতে মোট আক্রান্তদের মধ্যে এক শতাংশের নিচে মৃত্যুবরণ করলে তা সহনীয় বলে ধরা হয়। সেক্ষেত্রে বাংলাদেশে মৃত্যু হার শূন্য দশমিক ০০২ শতাংশ। বিভিন্ন হাসপাতালের বহির্বিভাগ ও প্রাইভেট চেম্বারের রোগীদের সংখ্যা যদি হিসেব করা হয় তবে এই সংখ্যা আরও কমবে বলেও জানান তিনি।
‘ডেঙ্গুতে ফিলিপাইনের মতো ভয়াবহ পরিস্থিতি হতে দেইনি’
বুধবার (১১ সেপ্টেম্বর) রাজধানী রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর) মিলনায়তনে ‘নলেজ শেয়ারিং অন ডেঙ্গু সার্ভিলেন্স ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) পরিচালক অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা। অনুষ্ঠানটি যৌথভাবে আয়োজন করে আইইডিসিআর ও বাংলাদেশ হেলথ রিপোর্টার্স ফোরাম।
এ বছর ১২৮টি দেশে ডেঙ্গু রোগ বিস্তার লাভ করেছে উল্লেখ করে ডা. আবুল কামাল আজাদ বলেন, ‘তবে থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়াসহ অন্যান্য দেশগুলোতে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করা রোগীর সংখ্যা বাংলাদেশের চাইতে অনেক বেশি।’ এছাড়া ডেঙ্গুতে একজন মানুষের মৃত্যুও কাম্য নয় বলে মন্তব্য করেন তিনি।
ডেঙ্গু চিকিৎসা বিষয়ে তিনি বলেন, ‘হাসপাতালগুলো বিভিন্ন উপসর্গ দেখে রোগীদের জরুরি চিকিৎসা সেবা দিয়ে থাকে। কিছুক্ষেত্রে ব্লাড প্রেসার, পালস ও শ্বসনতন্ত্রের অবস্থাসহ বিভিন্ন বিষয় দেখেও চিকিৎসা দিয়ে থাকেন। এই ক্ষেত্রে বলা যাবে না যে, রোগী চিকিৎসা পাচ্ছেন না। তবে হ্যাঁ, ডেঙ্গু রোগে যদি কিছুক্ষেত্রে ভুলভ্রান্তি হয়েও যায় তবে তাকে ভুল চিকিৎসা বলাটা ভুল হবে।’
তিনি বলেন, ‘ডেঙ্গুর মৌসুম শেষ হয়ে আসছে এ বছর। তাই আমাদের লক্ষ্য হবে আগামী বছর। এ বছর আমাদের যথেষ্ট অভিজ্ঞতা অর্জন করেছি। আগামী বছরও ডেঙ্গু হবে। আক্রান্তের সংখ্যা কমানোর পাশাপাশি মৃত্যুর ঘটনাও যাতে আমরা ঠেকাতে পারি সেই চেষ্টাই করতে হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘জলবায়ুর পরিবর্তনসহ বিভিন্ন কারণে এ বছর শুধু বাংলাদেশেই নয়, বিশ্বের ১২৮টি দেশে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। কোনো দেশই আগে থেকে বুঝতে পারেনি ২০১৯ সালে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব এতটা ব্যাপক হবে। সে জন্য বছরব্যাপী আমাদের মশা নিধন কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে হবে। তবে শুধু পৌরসভা ও সিটি করপোরেশনই নয়, ইউনিয়নগুলোতেও মশা নিধন কার্যক্রম চালাতে হবে।’
এ সময় তিনি বলেন, ‘আইইডিসিআর মৃত্যুর কারণগুলো সঠিকভাবে যাচাই করার চেষ্টা করছে। আমাদের চেষ্টা সব ধরনের রোগের বিষয়েই কাজ করে যাওয়া।’
আইইডিসিআর পরিচালক অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা বলেন, ‘২০১৯ সালে ডেঙ্গুতে আক্রান্তের হার অন্যান্য বছরের তুলনায় বেড়েছে। যাদের জ্বর হচ্ছে তাদের মাঝে ১০-২০ শতাংশ সম্ভাব্য ডেঙ্গু রোগী পাওয়া যাচ্ছে। কিছুক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে কিছু ভিন্নধর্মী উপসর্গ যা আসলে এনটেরিক ফিভার বা সিজনাল ইনফ্লুয়েঞ্জাও হয়ে থাকতে পারে। সব কিছু মিলিয়ে আসলে রোগীর সংখ্যা বাড়লেও মৃত্যুর সংখ্যা খুব বেশি হচ্ছে না।’
ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা এ সময় সম্প্রতি বরিশাল ও কুষ্টিয়ায় আইইডিসিআরের জরিপের কিছু পরিসংখ্যান তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ‘বরিশালে যেসব এলাকা থেকে হাসপাতালে বেশি রোগী এসেছে সেসব এলাকায় প্রাথমিক জরিপে দেখা গেছে এডিস এলবোপিকটাসের কারণেই রোগীরা আক্রান্ত হয়েছে। সেখানে জরিপ করা এলাকাগুলোতে আমরা কোনো এডিস ইজিপটাই পাইনি। আমরা সেখান থেকে লার্ভা নিয়ে তা ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষা করেছি। সেখানে ৭৫৫টি মশা পরীক্ষা করে দেখেছি ১৪টি এডিস প্রজাতির। যার মধ্যে সাতটিই এলবোপিকটাস প্রজাতির এবং বাকিগুলো অন্যান্য প্রজাতির। তবে এর মধ্যে একটিও ইজিপটাই প্রজাতির ছিল না।’
তিনি আরও বলেন ‘কুষ্টিয়াতে আমরা ইজিপটাই এবং এলবোপিকটাস দুই প্রজাতিই পেয়েছি। ঢাকায় এডিস ইজিপটাই মশার কারণেই সচরাচর ডেঙ্গু হয়ে থাকে এবং ঢাকার বাইরে এডিস এলবোপিকটাসের কারণে।’ ঢাকার বাইরের যারা ডেঙ্গু আক্রান্ত হচ্ছে তাদের মাঝে দেখা গেছে ৫৯ দশমিক ৪ শতাংশের ঢাকাতে ট্রাভেল হিস্টোরি আছে।’
উল্লেখ্য, ফিলিপাইনে এ বছর এখন পর্যন্ত ২ লাখ আট হাজার ৯১৭ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর মাঝে ৮৮২ জন মারা গেছেন। থাইল্যান্ডে ৭০ হাজার ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর মাঝে মারা গেছেন ৭০ জন। মালয়েশিয়াই ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন ৮২ হাজার ২৭০ জন যার মধ্যে ১২১ জন মারা গেছেন।
বিশ্বজুড়ে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বিশ্বের অনেক স্থানেই বেড়ে গেছে ডেঙ্গুর ঝুঁকি। এই রোগের কোনো সুর্নিদিষ্ট চিকিৎসা না থাকলেও সঠিক সময়ে চিকিৎসা পেলে মৃত্যুর হার কমিয়ে আনা সম্ভব হয়।