সুন্দরবনকে দূষণ থেকে রক্ষায় মোংলায় বর্জ্য ব্যবস্থাপনা প্রকল্প
১২ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ০৭:৩০
ঢাকা: মোংলা বন্দরের বর্জ্য দূষণ থেকে সুন্দরবনকে রক্ষা করার উদ্যোগ নিচ্ছে সরকার। এজন্য ‘মোংলা বন্দরের আধুনিক বর্জ্য ও নিঃসৃত তেল অপসারণ ব্যবস্থাপনা’ নামে ৪৩৯ কোটি টাকার একটি প্রকল্প হাতে নিচ্ছে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়। এটি বাস্তবায়িত হলে জাহাজের বর্জ্য সমুদ্র ও নদীতে নিক্ষেপ রোধ, আধুনিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা এবং পরিবেশবান্ধব বন্দর বিনির্মাণ ও সামুদ্রিক পরিবেশকে দূষণ থেকে রক্ষা সম্ভব হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
প্রক্রিয়াকরণ শেষে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় অনুমোদন পেলে চলতি বছর থেকে ২০২২ সালের জুনের মধ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। এটি বাস্তবায়ন করবে মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ।
গত ২১ আগস্ট প্রকল্পটির নিয়ে পরিকল্পনা কমিশনে প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। ওই সভার কার্যপত্র সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান সোমবার (৯ সেপ্টেম্বর) সারাবাংলাকে বলেন, পরিবেশজনিত নানা ধরনের চ্যালেঞ্জ রয়েছে। বিশেষ করে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা একটি অত্যন্ত উচ্চ অগ্রাধিকারের বিষয়। মোংলা বন্দর, পায়রা বন্দররে প্রচুর মালামাল আসা যাওয়া করবে আগামীতে। এরই মধ্যে মোংলা বন্দরে অনেক জাহাজ আসছে। ফলে অনেক বর্জ্য উৎপন্ন হবে। এগুলো পরিচ্ছন্ন না করে খালে ফেলে দিলে হবে না।
মন্ত্রী বলেন, বর্জ্য পরিষ্কারের বৈজ্ঞানিক পথ আছে। এর জন্য সঠিকভাবে পরিকল্পনা করতে হয়। আমাদের তো সমুদ্র উপকূল বাঁচাতে হবে। তাই এ সংক্রান্ত যেকোনো প্রকল্প গ্রহণকে সরকারের পক্ষ থেকে উচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে।
নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, মোংলা বন্দরে চলাচলকারী বিভিন্ন বাস্ক, কন্টেইনার, ট্যাংকার ও অন্যান্য জলযান থেকে নিঃসৃত তেল ও পেট্রোলিয়াম জাতীয় ব্লিজ, স্লাজ, বর্জ্য, পানি ও অন্যান্য আবর্জনা সংগ্রহ করে বর্জ্য ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে ইন্ডাস্ট্রিয়াল অয়েল প্লাটিক ও অন্যান্য সলিড গার্বেজ আলাদা করে বিক্রি করা সম্ভব হবে। এই উদ্যোগের ফলে পরিবেশেরও সুরক্ষা হবে।
মন্ত্রণালয় বলছে, মোংলা বন্দরের চ্যানেল কিংবা মোংলা বন্দর ও সুন্দরবনের আশপাশের নদীগুলোতে কোনো তেলবাহী ট্যাংকারে দুর্ঘটনা হলে বা তেল নিঃসরণের ঘটনা ঘটলে সেই ছড়িয়ে পড়ার আগেই বুমের মাধ্যমে আটকানো হবে। পাশাপাশি তেল অপসারণকারী ভেসেলের মাধ্যমে নিঃসৃত তেল সংগ্রহ করে আইবিসি ট্যাংকে জমা হবে। এই আইবিসি টাস্ক পূর্ণ হলে ফ্লোটিং স্টোরেজ ট্যাংকে জমা করা হবে। এভাবে নিঃসৃত তেল সংগ্রহের পর ব্যবস্থাপনার আওতায় ট্রিটমেন্ট করে পানি ও অন্যান্য অপপদার্থ পৃথক করে ব্যবহার উপযোগী করে ট্যাংকে সংরক্ষণ করা হবে। এই সংরক্ষিত তেল পরবর্তীতে দরপত্রের মাধ্যমে বিক্রি করা হবে।
এছাড়া ভেসেলগুলো নিরাপত্তা পরিদর্শনের কাজ, জরুরি পাইলটিং ও নিয়মিত চ্যানেল পরিদর্শনের কাজে ব্যবহার করা হবে। এ জন্য মোংলা বন্দরের আধুনিক বর্জ্য ও নিঃসৃত তেল অপসারণ ব্যবস্থাপনা শীর্ষক প্রকল্পটি হাতে নেওয়া হয়েছে।
প্রকল্পের প্রধান কার্যক্রমগুলোর মধ্যে রয়েছে— একটি বর্জ্য সংগ্রহকারী জলযান, দুইটি তেল অপসারণকারী ভেসেল, একটি ওয়ার্কশপ ক্লিনিং ইকুইপমেন্ট, দুইটি ডাম্প ট্রাক, একটি পিকআপ ভ্যান, দুইটি ডাম্প বার্জ, একটি সেল্প প্রোপেল্ড ভেসেল, একটি সার্ভিস টাগবোট, একটি মুরিং গিয়ারসহ পল্টুন, ফর্কলিফট, দুইটি ফর্কলিফট, পাঁচটি কন্টেইনার, একটি স্ট্রাকচারসহ মনিটর, পাঁচটি কন্টেইনার, ৫০টি ২০০ লিটারের কন্টেইনার ও একটি ইয়ার্ড ক্লিনিং ইকুইপমেন্ট কেনা; ৩০০ বর্গমিটার বার্ন হাউজ এবং সংযোগ রাস্তা ও ইয়ার্ড তৈরি করা।
এই প্রকল্প নিয়ে পিইসি সভার কার্যপত্রে বলা হয়েছে, প্রকল্প বাস্তবায়নের সময় সঠিকভাবে নির্ধারণ করতে হবে এবং সেজন্য বছরভিত্তিক ব্যয় প্রাক্কলন করতে হবে। এই প্রকল্পের আওতায় আবর্তক ব্যয়ের প্রতিটি অংশের ব্যয় থোক হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। এই আইটেমগুলোর ব্যয় সুনির্দিষ্ট জনমাসের ভিত্তিতে নির্ধারণ করতে হবে।
আরও বলা হয়, পিকআপ ভ্যান, ফর্কলিফট, মোবাইল ক্রেন বা কন্টেইনারের মতো বেশকিছু সরঞ্জাম কেনার কথা বলা হয়েছে এই প্রকল্পে। এসব সরঞ্জাম মোংলা বন্দরের অন্যান্য প্রকল্পেও কেনার প্রস্তাব করা হয়েছে। তাই এই প্রকল্পে সমজাতীয় যন্ত্রপাতিগুলো কেনার যৌক্তিকতা ব্যাখা প্রয়োজন।
এছাড়া, এই প্রকল্পে সংযোগ রাস্তা ও সীমানা প্রাচীর নির্মাণের জন্য ৭ কোটি ৮০ লাখ টাকা প্রস্তাব করা হয়েছে। মোংলা বন্দর আপগ্রেডেশন প্রকল্পে এরই মধ্যে বিভিন্ন ধরনের সংযোগ রাস্তা ও প্রাচীর নির্মাণের প্রস্তাব করা হয়েছে। তাই এ প্রকল্পে ফের সংযোগ রাস্তা ও সীমানা প্রাচীর নির্মাণের প্রয়োজনীতার বিষয়ে সভায় আলোচনা প্রয়োজন। প্রকল্পের আওতায় পরামর্শকদের বেতন-ভাতা নির্ধারণের ভিত্তি সম্পর্কেও সভায় আলোচনা করা যেতে পারে।
পিইসি সভায় বলা হয়, ক্রয় পরিকল্পনায় সমজাতীয় ভালো একটি প্যাকেজের আওতায় কেনাকাটা আবশ্যক। সেক্ষেত্রে প্রয়োজনে প্যাকেজের সংখ্যা কমবেশি করা যেতে পারে। ক্রয় পরিকল্পনায় প্রতিটি প্যাকেজের আওতায় অনেকগুলো আইটেম থাকলেও প্রতিটি ক্ষেত্রে একটি করে লট উল্লেখ করা হয়েছে, যা বোধগম্য নয়। তাছাড়া ক্রয় পরিকল্পনা ও ডিপিপির অনুচ্ছেদে কিছু গড়মিল রয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়।
প্রকল্পের আওতায় ফিজিক্যাল ও প্রাইস কন্টিজেন্সি কমানো যেতে পারে বলে বলা হয়েছে পিইসি সভায়। প্রকল্পে সিডি ভ্যাট মূল অংশের সঙ্গে যোগ করে ব্যয় প্রাক্কলন করা হয়েছে। এই সিডি ভ্যাট বাবদ ব্যয় আলাদাভাবে দেখাতে বলা হয়েছে। প্রকল্পে ডিপিপিতে সংযুক্ত সমীক্ষা প্রতিবেদনে বর্জ্য ব্যবস্থাপনার বর্তমান চিত্র ও বিস্তারিত পরিসংখ্যান উল্লেখ না থাকায় পুনঃগঠিত ডিপিপিতে বর্জ্য ব্যবস্থাপনার বর্তমান চিত্র ও পরিসংখ্যানও দিতে বলা হয়।