Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

বিএনপি হন্যে হয়ে খুঁজছে, কে এই আমান?


১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ১৮:০৪

ঢাকা: যার মামলার ভিত্তিতে ছাত্রদলের কাউন্সিলে অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা জারি করেছেন আদালত, সেই আমান উল্লাহকে খুঁজছে বিএনপি। কিন্তু ছাত্রদলের সাবেক এই সহ-ধর্মবিষয়ক সম্পাদকের হদিস পাচ্ছেন না কেউ। তার ফোন বৃহস্পতিবার বিকেল থেকেই বন্ধ। তার ফেসবুক অ্যাকাউন্টও ইনঅ্যাক্টিভ!

ছাত্রদলের নতুন কমিটি গঠনের ক্ষেত্রে বয়সসীমা বেঁধে দেওয়ায় ছাত্রদলের একাংশের আন্দোলন-ভাঙচুর, কাউন্সিল প্রতিরোধ করার ঘোষণা, বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অবস্থান-ঘেরাও-তালা, দলের শীর্ষ এক নেতাকে লাঞ্ছিত এবং এসব ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে ছাত্রদলের ১২ নেতাকে বহিষ্কারসহ নানা নাটকীয়তার পর কাউন্সিলের চূড়ান্ত প্রস্তুতি শেষ করেছিল বিএনপি।

বিজ্ঞাপন

আরও পড়ুন- ছাত্রদলের কাউন্সিল নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত শুক্রবার

১৪ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠেয় কাউন্সিলে ভোট গ্রহণের জন্য রিটার্নিং অফিসার (ফজলুল হক মিলন), সহকারী রিটার্নিং অফিসার (শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানী, আজিজুল বারী হেলাল), পোলিং অফিসারের (এ বি এম মোশাররফ হোসেন, শফিউল বারী বাবু, সুলতান সালাহউদ্দিন টুকু) নামও ঘোষণা করা হয়েছিল। ভোটগ্রহণের জন্য নয়াপল্টন কার্যালয়ের কনফারেন্স রুম প্রস্তুত করা হচ্ছিল, শুরু হয়েছিল ভোটারদে আইডি কার্ড বিতরণও।

কিন্তু ভোটগ্রহণের মাত্র একদিন আগে বৃহস্পতিবার (১২ সেপ্টেম্বর) আদালত থেকে ছাত্রদলের কাউন্সিলের ওপর অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা আসে। এছাড়া ছাত্রদলের কাউন্সিল আয়োজনে কেন স্থায়ী নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হবে না, তা জানাতে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ দলটির ১০ নেতাকে নোটিশ দেওয়া হয়।

জানা যায়, ছাত্রদলের সদ্য বিলুপ্ত কমিটির সহ-ধর্মবিষয়ক সম্পাদক আমান উল্লাহর এক আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকার চতুর্থ সহকারী জজ নুসরাত জাহান বিথি এ আদেশ দেন। মামলার আরজি সম্পর্কে বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট মাসুদ আহমেদ তালুকদার গণমাধ্যমকে বলেন, “আমান উল্লাহ নামের এক ব্যক্তি মামলাটি করেছেন, যিনি ছাত্রদলের কাউন্সিলে সভাপতি পদে প্রার্থী হওয়ার জন্য আবেদন করেছিলেন। কিন্তু তিনি বাদ পড়ায় মামলার বিবরণীতে ‘অন্যায়ভাবে অধিকার ক্ষুন্ন’ করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন।”

বিজ্ঞাপন

আরও পড়ুন- ছাত্রদলের কাউন্সিলে আদালতের নিষেধাজ্ঞা, বৈঠকে বিএনপি নেতারা

মূলত, এরপর থেকেই ছাত্রদলের সাবেক ও বর্তমান নেতারা এবং কাউন্সিলে দায়িত্বপ্রাপ্ত বিএনপি নেতারা আমান উল্লাহকে খুঁজতে শুরু করেন। কিন্তু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মোহসীন হলের শিক্ষার্থী আমান উল্লাহকে শুক্রবার (১৩ সেপ্টেম্বর) বিকেল সাড়ে ৫টা নাগাদ খুঁজে পায়নি বিএনপি।

বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আকরামুল হাসান শুক্রবার সারাবাংলাকে বলেন, ‘গতকাল (বৃহস্পতিবার) থেকে আমান উল্লাহ’র মোবাইল নম্বরে কল করছি। কিন্তু ওর ফোনটা বন্ধ। ওর ফেসবুক অ্যাকাউন্টও ইনঅ্যাক্টিভ।’

ছাত্রদলের কাউন্সিলে সভাপতি প্রার্থী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদল নেতা তানভীর রেজা রুবেল সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমান উল্লাহ মোহসীন হলের ছাত্র। কিন্তু ওকে আমরা কখনো হলে বা ক্যাম্পাসে দেখি না। ওর যে মোবাইল নম্বর সেটাও বন্ধ রয়েছে।’

এদিকে মামলার আরজিতে ‘ছাত্রদলের কাউন্সিলে সভাপতি পদে প্রার্থী হওয়ার জন্য আবেদন করেছিলেন’ বলে উল্লেখ করলেও কাউন্সিলের সঙ্গে সম্পৃক্ত বিএনপি ও ছাত্রদল নেতারা বলছেন, আমান উল্লাহ কোনো পদে প্রার্থী হওয়ার জন্য আবেদন করেননি।

কাউন্সিল পরিচালনা কমিটির আহ্বায়ক বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমান উল্লাহ ছাত্রদলের কাউন্সিলে কোনো পদে প্রার্থী হওয়ার জন্য আবেদন করেনি। সুতরাং ওর আবেদন বাতিল করার প্রশ্নই আসে না। ও এমনটা কেন করল, সেটা জানার জন্য আমরা ওকে খুঁজছি। কিন্তু কোনো হদিস পাচ্ছি না।’

ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আকরামুল হাসান সারাবাংলাকে বলেন, ‘যোগ্যতার প্রমাণ রেখেই আমান উল্লাহ আমাদের কমিটিতে স্থান করে নিয়েছিল এবং সে আমাদের সঙ্গে সেভাবেই কাজ করেছে। কিন্তু এবারের কাউন্সিলে সভাপতি বা সাধারণ সম্পাদক পদে প্রার্থী হওয়ার জন্য ওর কাছ থেকে কোনো আবেদন পাইনি। ও নিজে থেকে আদালতে মামলাটি করেছে, নাকি ওকে দিয়ে কেউ করিয়েছে, সেটা জানার জন্য ওকে আমরা খুঁজছি। কিন্তু পাচ্ছি না।’

ছাত্রদলের কয়েকজন নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আমান উল্লাহ’র হোম ডিস্ট্রিক্ট কুমিল্লা। তিনি ২০০৮-০৯ শিক্ষাবর্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মোহসীন হলের শিক্ষার্থী তিনি।

জানা গেছে, শুরু থেকেই ছাত্রদলের সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে ওঠা-বসা করতেন আমান উল্লাহ। সে কারণে ছাত্রদলের অনেকেই তাকে সিনিয়র মনে করতেন। কিন্তু একসময় তার শিক্ষাবর্ষের তথ্য সামনে আসার পর সবাই বুঝতে পারেন, জুনিয়র হয়েও সিনিয়রদের মতো চলাফেরা করে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটিতে সহ-ধর্মবিষয়ক পদ বাগিয়ে নিয়েছেন আমান উল্লাহ।

এই আমান উল্লাহ’র ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে পাওয়া ছবিতে দেখা যায়, বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আব্দুস সালাম, ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি যুবদলের বর্তমান সাধারণ সম্পাদক সুলতান সালাহউদ্দীন টুকুসহ দলটির শীর্ষ নেতাদের পাশে দাঁড়িয়ে আছেন তিনি। বিএনপি চেয়ারপারসনের সঙ্গেও তার একটি ছবি আছে।

ছাত্রদলের ছাত্রদলের কাউন্সিলে সভাপতি প্রার্থী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদল নেতা তানভীর রেজা রুবেল সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমান উল্লাহ সবসময় নিসিয়রদের সঙ্গে ঘুরত। আমরা ভাবতাম ও আমাদের সিনিয়র। একসময় দেখলাম ও আমাদের জুনিয়র। এ থেকেই বোঝা যায়, ও কোন ক্যাটাগরির ব্যক্তি।’

এসব বিষয়ে কথা বলার জন্য আমান উল্লাহ’র ফোন নম্বরে (০১৬৭….৩৩৯) বেশ কয়েকবার কল করেও বন্ধ পাওয়া যায়।

আরও পড়ুন-

ভোট চাইতে ৬৪ জেলায় ছাত্রদলের প্রার্থীরা

ছাত্রদলের কাউন্সিল দুই মাস পেছাল, নতুন তারিখ ১৪ সেপ্টেম্বর

ছাত্রদলের কাউন্সিল: সভাপতি পদে ২৭, জিএস পদে ৪৯ ফরম জমা

আমান উল্লাহ

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর