ঢাকা: অনিয়ম ও সমন্বয়হীনতার কারণে ঢাকাসহ সারা দেশে ডেঙ্গু ছড়িয়ে পড়েছে বলে জানিয়েছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। প্রতিষ্ঠানটি বলছে, ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের অনিয়ম, দুর্নীতি ও সমন্বয়হীনতা এবং আগাম পূর্বাভাসকে আমলে না নেওয়ায় ঢাকাসহ সারা দেশে ডেঙ্গু ছড়িয়ে পড়ে। এতে সারাদেশে লক্ষাধিক মানুষ আক্রান্ত এবং দুই শতাধিক মানুষের মৃত্যু হয়।
বুধবার (২৫ সেপ্টেম্বর) ‘ঢাকা শহরে এডিস মশা নিয়ন্ত্রণে সুশাসনের চ্যালেঞ্জ ও উত্তরণের উপায়’ শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ উপলক্ষে টিআইবির ধানমণ্ডি কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলা হয়। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান, উপদেষ্টা-নির্বাহী ব্যবস্থাপনা অধ্যাপক ড. সুমাইয়া খায়ের। টিআইবির গবেষণা ও পলিসি বিভাগের সিনিয়র প্রোগ্রাম ম্যানেজার শাহজাদা এম আকরামের তত্ত্বাবধানে গবেষণা প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করেন ডেপুটি প্রোগ্রাম ম্যানেজার মো. জুলকারনাইন ও মো. মোস্তফা কামাল।
সংবাদ সম্মেলনে ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘ডেঙ্গু সমস্যা বাংলাদেশের জন্য নতুন কোনো সমস্যা ছিলো না। পর্যাপ্ত তথ্য বিশ্লেষণসহ সতর্কীকরণ সত্ত্বেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অস্বীকৃতির মানসিকতা, প্রস্তুতি ও কৌশলের অভাব এবং যথাযথ গুরুত্ব না দিয়ে এড-হকভিত্তিতে কার্যক্রম পরিচালিত হওয়ায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে।
তিনি বলেন, ‘সুনির্দিষ্ট কৌশলের অভাবে এডিস মশার নিয়ন্ত্রণে কোনো সমন্বিত পরিকল্পনা গুরুত্ব পায়নি। তুলনামূলকভাবে অকার্যকর রাসায়নিক ব্যবহারসহ মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণমূলক ও অ্যাডাল্টসাইট নির্ভর কিছু কার্যক্রম নেওয়া হয়।’
টিআইবির নির্বাহী পরিচালক বলেন, ‘কীটনাশক ক্রয়ের প্রতিটি ধাপে ধাপে দুর্নীতি হয়েছে। ক্রয় বিধিমালা অনুসরণ না করে, যোগ্যতার শর্তাবলি পূরণ না করে, কালো তালিকাভুক্ত করা হয়েছে এমন সংস্থাকে কার্যাদেশ দেওয়া হয়েছে। বিল অনুমোদন, বিল প্রদান, পণ্য সরবরাহসহ সকল পর্যায়ে অবৈধ লেনদেন হয়েছে। ফলে রাষ্ট্রীয় অর্থের ব্যাপক অপচয় হয়েছে।
গবেষণা প্রতিবেদনে টিআইবি জানায়, বাংলাদেশে বিগত কয়েক বছর ধরে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব থাকলেও জাতীয় ও স্থানীয় পর্যায়ে ডেঙ্গু মশা নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধকে গুরুত্ব দেওয়া হয়নি। সমন্বিত ব্যবস্থাপনা না রেখে ঢাকা দুই সিটি করপোরেশন যথাযথভাবে সরকারি ক্রয় আইন অনুসরণ না করে কীটনাশক ক্রয়-নির্ভর হওয়ায় দুর্নীতির ক্ষেত্র তৈরি করে। বিক্ষিপ্তভাবে লোক দেখানো কার্যক্রম নেয়। এতে ডেঙ্গুর প্রকোশ বেড়ে যায়।
প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, ডেঙ্গু প্রতিরোধে আগাম পূর্বাভাসকে গুরুত্ব না দেওয়া, ডেঙ্গুর প্রকৃত চিত্র চিহ্নিত করায় ঘাটতি, এলাকাভিত্তিক বা আঞ্চলিক পরিকল্পনা না থাকা, মশা নিয়ন্ত্রণে সকল পদ্ধতির সমন্বয় না করা এবং উপযুক্ত কীটনাশক নির্ধারণ না করায় এর ভয়াবহতা বেড়ে যায়।
গবেষণায় প্রাপ্ত তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের বিবেচনার জন্য পনের দফা সুপারিশ দিয়েছে টিআইবি। সুপারিশগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো, সংশ্লিষ্ট সকল অংশীজনদের সমন্বয়ে জাতীয় পর্যায়ে এডিস মশা নিয়ন্ত্রণ ও ব্যবস্থাপনা কৌশল ও কর্ম-পরিকল্পনা প্রণয়ন করা, সকল অংশীজনের দায়িত্ব ও কর্তব্য সুস্পষ্ট করা, জাতীয় কৌশল ও কর্মপরিকল্পনার সাথে সামঞ্জস্য রেখে সংশ্লিষ্ট অংশীজনকে মশা নিধনে নিজস্ব পরিকল্পনা ও ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করা, এডিস মশা নিয়ন্ত্রণে সকল প্রকার পদ্ধতির ব্যবহার নিশ্চিত করে সিটি করপোরেশনগুলোকে সমন্বিত কার্যক্রম নেওয়া।