সিঙ্গাপুরে ওভার স্টে ও ডাকাতি চেষ্টা: বাংলাদেশি যুবকের কারাদণ্ড
১ অক্টোবর ২০১৯ ১৯:০৬
ডাকাতি চেষ্টার অভিযোগে এক বাংলাদেশি নাগরিককে ১৮ ঘা বেতের বাড়ি ও সাড়ে তিন বছরের কারাদণ্ডের নির্দেশ দিয়েছেন সিঙ্গাপুরের আদালত। সোমবার (৩০ সেপ্টেম্বর) তাকে এই শাস্তির আদেশ দেন আদালত।
আদালত তার বিষয়ে জানিয়েছে, ভুয়া ওয়ার্ক পারমিট নিয়ে সিঙ্গাপুরে নির্মাণ শ্রমিকের কাজ করতে গিয়েছিলেন ৩০ বছর বয়সী বাংলাদেশি যুবক শেখ মো. রাজন। ভিসার মেয়াদ শেষ হওয়ার পরও থেকে যাওয়ার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়ে ডাকাতির সিন্ধান্ত নেন তিনি। মাথায় শিখদের পাগড়ি, হাতে নকল অস্ত্র ও শরীরে নকল বোম বেল্ট পরে একটি দোকানে ডাকাতির চেষ্টা করে রাজন।
আদালত আরও জানিয়েছে, সশস্ত্র ডাকাতি চেষ্টা, নকল অস্ত্র প্রদর্শন, ভুয়া ওয়ার্ক পারমিট ও ২৩৬ দিন অবৈধভাবে সিঙ্গাপুরে অবস্থান করায় তাকে এ শাস্তি দেওয়া হয়েছে।
তাছাড়া, এর আগে ২০১৭ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি সিঙ্গাপুর ত্যাগের চেষ্টার সময় চাঙ্গি এয়ারপোর্ট থেকে রাজনকে প্রথমবারের মতো আটক করা হয়। সে সময় তাকে ১ হাজার ৭৭০ ডলার দামের তিনটি মোবাইল ফোন, নগদ ২০০ ডলার, সাতটি স্বর্ণের চেইন ও ৫ হাজার ৪০০ ডলার দামের একটি স্বর্ণের চুড়িসহ আটক করে পুলিশ।
এরপর অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে, ওই বছরের ৩১ জানুয়ারি থেকে ১৩ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সে একাধিক (সম্পত্তি সংক্রান্ত) অপরাধের সঙ্গে জড়িত ছিল। এঘটনায় ২৫ আগস্ট পর্যন্ত রিমান্ডে নেওয়া হয় রাজনকে। এরপর তাকে শর্তসাপেক্ষে সতর্কবার্তাও দেয় সিঙ্গাপুর কর্তৃপক্ষ। এছাড়া দেশটির ইমিগ্রেশন ও চেকপোস্ট কর্তৃপক্ষ তাকে তদন্তের জন্য বিশেষ পাসও সরবরাহ করে।
আদালত আরও জানিয়েছে, রাজনের ধারণা ছিল দুএক সপ্তাহের মধ্যে সে পাস রিনিউ করতে পারবে, কিন্তু রিনিউ করতে ব্যর্থ হওয়ায় তখন থেকে অবৈধভাবে থাকতে শুরু করেন।
এরপর সে বাংলাদেশে যোগাযোগ করে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের দুটি ভুয়া ওয়ার্ক পারমিট জোগাড় করে। পারমিট দুটিতে তার ছবি থাকলে ব্যবহার করা হয় ভিন্ন নাম। একটিতে মোহাম্মদ আল মামুন ও অন্যটিতে ব্যবহার করে রানা।
ভুয়া পারমিট ব্যবহার করে সে সে বিভিন্ন ছোটখাট কাজ করতো। কাজের অংশ হিসেবে আলিওয়াল স্ট্রিটের একটি যন্ত্রপাতির দোকানে প্রবেশের সুযোগ ছিল রাজনের। কিন্তু রাজন যখন বুঝতে পারে কোনোভাবেই আর সেখানে থাকা সম্ভব হচ্ছে না। ফিরে গেলেও আত্মীয় স্বজনের ঋণের টাকা পরিশোধ করতে ঝামেলায় পড়তে হবে। তখন সে আর্থিক সংকট মোকাবিলায় ডাকাতির সিদ্ধান্ত নেয়।
ডাকাতির জন্য ব্যাংকের তুলনায় জুয়েলারি দোকানের নিরাপত্তা ব্যবস্থা তুলনামূলক দুর্বল হওয়ায় সেখানে ডাকাতির সিদ্ধান্ত নেয় রাজন।
ডেপুটি পাবলিক প্রসিকিউটর গ্রেস চুয়া জানান, রাজন তার শিখ রুমমেটকে দেখেছেন পাগড়ি পরে অর্ধেক মাথা ঢেকে রাখতে। সেখান থেকেই সে পাগড়ি পরে ছদ্মবেশে ডাকাতির ধারণা পায়। এরপর সে কিছু কাপড় কিনে তার শিখ রুমমেটের কাছ থেকে পাগড়ি বানানো শেখে। একটা পাগড়ি বানিয়ে সেটা লুকিয়ে রাখে নিজের বেডের নিচে।
এর পরদিন সে যন্ত্রপাতির দোকানে ঢুকে বৈদ্যুতিক তার দিয়ে ভুয়া বোম ও পাইপ দিয়ে নকল অস্ত্র তৈরি করে। এছাড়া ওই দোকান থেকে একটি চাপাতিও চুরি করে ব্যাগে লুকিয়ে রাখে ডাকাতির সময় ব্যবহারের জন্য।
ডাকাতির দিন সকাল ১০টায় রাজন তার ব্যাগে করে পাগড়ি, সানগ্লাস, কাজের যন্ত্রপাতি ও কিছু কাপড় চোপড় নিয়ে বের হয়। নির্ধারিত দোকানে প্রচণ্ড ভিড় থাকায় পরিকল্পনা পরিবর্তন করে অন্য একটি দোকানে যায়। সেখানে নকল অস্ত্র দেখিয়ে টাকা দাবি করে। কিন্তু দোকানের কর্মচারিরা টাকা দিতে রাজি না হওয়ায় এক পর্যায়ে বোমাগুলো ফেলে পালিয়ে যায়।
এই ঘটনার পাঁচদিন পর তাকে গ্রেফতার করে পুলিশ।