‘কারও অনুকম্পায় খালেদা জিয়া মুক্ত হবেন না’
৩ অক্টোবর ২০১৯ ১৪:৩২
ঢাকা: কারও অনুকম্পায় কারাবন্দি বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া মুক্ত হবেন না বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
বৃহস্পতিবার (০৩ অক্টোবর) দুপুরে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে আয়োজিত এক মানববন্ধন কর্মসূচিতে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা জানান। খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে এ মানববন্ধন আয়োজন করে সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদ।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘বেগম খালেদা জিয়া কারও অনুকম্পায় মুক্ত হবেন না। তিনি অবশ্যই তার যে হক, তার যে ন্যায্য অধিকার, জামিন পাওয়ার অধিকার, সেই অধিকার-হকেই তিনি মুক্ত হবেন।’
আরও পড়ুন: ‘প্যারোল চান না খালেদা, বিদেশে যাওয়ার সিদ্ধান্ত জামিনের পর’
‘আর যাই করেন, বেআইনি মিথ্যা মামলায় তাকে আটকে রাখা যাবে না। জনগণ তাদের প্রিয় নেত্রীকে আন্দোলনের মাধ্যমেই মুক্ত করে আনবে। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করার জন্য, গণতন্ত্রকে মুক্ত করার জন্য আজকে যেমন পেশাজীবীরা মাঠে নেমেছেন। আসুন দলমত নির্বিশেষে সবাই মিলে একাত্ম হয়ে গণতন্ত্রকে ফিরিয়ে আনার সংগ্রামে, গণতন্ত্রের প্রতীক দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করার সংগ্রামে ঐক্যবদ্ধ হই’— বলেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
তিনি বলেন, ‘গণতন্ত্রের জন্যেই ১৯৭১ সালে তিনি (খালেদা জিয়া) পাক হানাদারবাহিনীর হাতে গ্রেফতার হয়েছিলেন, নির্যাতিত হয়েছিলেন।’
‘খালেদা জিয়া দীর্ঘ ৯ বছর নিরন্তর সংগ্রাম করেছেন উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘গণতন্ত্রকে মুক্ত করে জনগণের ভালোবাসায় সিক্ত হয়ে প্রধানমন্ত্রী হয়েই তিনি বাংলাদেশের সংসদীয় গণতন্ত্রকে ফিরিয়ে এনেছিলেন।’
গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়ার জন্য খালেদা জিয়া কাজ করেছিলেন দাবি করে তিনি বলেন, ‘আমার এখনও মনে আছে, সাংবাদিকরা যাতে আরও ভালো করে কাজ করতে পারেন, সেজন্য অনেক সুবিধা তিনি করে দিয়েছিলেন। আকাশ সাংবাদিকতাকে মুক্ত করে দিয়েছিলেন। তিনি সারাটা জীবন গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রাম করছেন, লড়াই করছেন।’
আরও পড়ুন: খালেদাকে দেখতে বিএসএমএমইউতে বিএনপির ৪ এমপি
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এই গণবিরোধী সরকার— যারা জনগণের অধিকার নিয়ে সব সময় খেলা করেছে, জনগণের সঙ্গে প্রতারণা করেছে, গণতন্ত্রের সঙ্গে বেইমানি করেছে, তারাই আজ বেগম খালেদা জিয়াকে মিথ্যা মামলায় কারাগারে আটক করে রেখেছে। কারণ, তারা জানে- দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া বাইরে থাকলে, দুর্নীতির যে স্বর্গ রাজ্য, লুটপাটের যে স্বর্গ রাজ্য— এটা তারা বাস্তবায়ন করতে পারবে না। বাংলাদেশকে ব্যর্থ রাষ্ট্র করবার যে নীল নকশা, সেটাকে তারা বাস্তাবায়ন করতে পারবে না।’
তিনি বলেন, ‘এই সরকার যখনই ক্ষমতায় এসেছে, তখনই গণতন্ত্রকে গলা টিপে হত্যা করেছে। এটাই তাদের ইতিহাস। তাদের চরিত্রের মধ্যে গণতান্ত্রিকতা বলে কিছু নেই। তাদের আছে একনায়কতন্ত্র, ক্ষমতাকে কুক্ষিগত করা ও একদলীয় শাসন ব্যবস্থা কায়েম করা।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘১৯৭৫ সালে বাকশাল সৃষ্টির মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগ একদলীয় শাসন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিল। তারা কৌশল পাল্টে ফেলে, দীর্ঘ দিন ধরে গণতন্ত্রের সব প্রতিষ্ঠান ভেঙে তছনছ করে, সংবিধানকে অমান্য করে ভিন্ন আঙ্গিকে একদলীয় শাসন ব্যবস্থাকে প্রতিষ্ঠা করতে চলেছে।’
তিনি বলেন, ‘আজকে ক্যাসিনো নিয়ে খুব লাফালাফি হচ্ছে। ক্যাসিনো যে লুট করেছে তার চেয়ে অনেক বড় সম্পদ আমার লুট হয়ে গেছে। সেই সম্পদ হচ্ছে আমার ভোটের অধিকার, আমার গণতন্ত্রের অধিকার, স্বাধীন মানুষ হিসেবে বেঁচে থাকার অধিকার।’
আরও পড়ুন: জামিন পেলেই চিকিৎসার জন্য বিদেশে যাবেন খালেদা জিয়া: এমপি হারুন
প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফর
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘সম্ভবত আজকেই প্রধানমন্ত্রী ভারত গেছেন। ভারতের সঙ্গে এই সরকারের নাকি সুউচ্চ সম্পর্ক। পর্বতের শৃঙ্গের মতো সম্পর্ক। কিন্তু তিনি যতবার যান, আসার পর দেখি আমাদের মূল সমস্যাগুলো রয়েই গেছে। সমস্যাগুলোর সমাধান হয়নি। কিন্তু আমরা দিয়ে আসি একেবারে উজার করে। সীমান্ত হত্যার সমাধান হয় না, তিস্তা সমস্যার সমাধান হয় না, ফারাক্কা বাঁধ খুলে দেওয়া হয়। এছাড়া বাণিজ্যে যে ভারসাম্যহীনতা রয়েছে সেটারও সমাধান হয় না। এবারও জনগণ প্রত্যাশা করবে, তিস্তাসহ সব নদীর পানির ন্যায্য হিস্যা সম্পর্কে অবশ্যই সুখবর নিয়ে ফিরবেন প্রধানমন্ত্রী।’
তিনি বলেন, ‘আমরা আশা করব, সীমান্ত হত্যা যেন বন্ধ হয়। ভারতের মন্ত্রী এবং নেতারা আসাম থেকে, উত্তর প্রদেশ থেকে সে দেশের নাগরিকদের বের করে দেওয়ার কথা বলছেন, স্বাভাবিকভাবেই বাংলাদেশের মানুষ হিসেবে আমরা উদ্বিগ্ন। আমরা মনে করি, এটা ষড়যন্ত্রের কথা, একধরনের চক্রান্তের কথা। যা দিয়ে বাংলাদেশে আরও একটা বড় রকম চাপ সৃষ্টি হবে। এ ব্যাপারে যেন সুখবর নিয়ে ফেরেন আমাদের প্রধানমন্ত্রী।’
সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের আহ্বায়ক শওকত মাহমুদের সভাপতিত্বে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য দেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন, পেশাজীবী নেতা এম আব্দুল্লাহ, রুহুল আমীন গাজী, রিয়াজুল ইসলাম রিজু, শামীমুর রহমান শামীম প্রমুখ।