রংপুর-৩ আসনে সাদ এরশাদ বিজয়ী
৫ অক্টোবর ২০১৯ ১৯:২২
রংপুর: রংপুর-৩ আসনে উপনির্বাচনে জাতীয় পার্টির (জাপা) প্রার্থী রাহগির আলমাহি এরশাদ (সাদ এরশাদ) বিজয়ী হয়েছেন। লাঙ্গল প্রতীক নিয়ে তিনি পেয়েছেন ৫৮ হাজার ৮৭৮ ভোট। তার নিকটবর্তী প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপি মনোনীত প্রার্থী রিটা রহমান ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে পেয়েছেন ১৬ হাজার ৯৪৭ ভোট।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এই আসনে ১ লাখ ৪২ হাজার ৯২৬ ভোট পেয়ে জয়ী হয়েছিলেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপি প্রার্থী রিটা রহমান পেয়েছিলেন ৫৩ হাজার ৮৯ ভোট। ভোট পড়েছিল ৫২ দশমিক ৩১ শতাংশ।
শনিবার (৫ অক্টোবর) সন্ধ্যায় ভোট গণনা শেষে বেসরকারিভাবে এই ফলাফল ঘোষণা করা হয়। নির্বাচন কমিশনের রংপুর আঞ্চলিক কার্যালয় থেকে জানানো হয়, মোট ৪ লাখ ৪১ হাজার ২২৪ ভোটারের মধ্যে ভোট দিয়েছেন ৯৪ হাজার ৬ জন। ভোট পড়েছে ২২ দশমিক ৮৬ শতাংশ। এদিন সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত ১৭৫টি কেন্দ্রে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহার করে একযোগে বিরতিহীনভাবে ভোটগ্রহণ করে নির্বাচন কমিশন।
এই উপনির্বাচনে ১৭৫টি কেন্দ্রের মধ্যে ৯৬টি কেন্দ্রকে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছিল। আর রংপুর মহানগর এলাকার ৪০টি কেন্দ্রকে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। রংপুর-৩ আসনে মোট ভোটার ৪ লাখ ৪২ হাজার ৭২ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ২ লাখ ২১ হাজার ৩১০ জন ও নারী ভোটার ২ লাখ ২১ হাজার ৭৬২ জন।
আরও পড়ুন: সাদ ছাড়া কেউ খুশি নন রংপুর উপনির্বাচনে
এই আসনে অন্যান্য প্রার্থী হলেন এরশাদের ভাতিজা স্বতন্ত্রপ্রার্থী হোসেন মকবুল শাহরিয়ার। সাবেক এই সংসদ সদস্যের প্রতীক ছিল মোটরগাড়ি (কার)। এছাড়া আম প্রতীক নিয়ে ন্যাশনাল পিপলস পার্টির প্রার্থী শফিউল আলম, মাছ প্রতীক নিয়ে গণফ্রন্টের প্রার্থী কাজী মো. শহীদুল্লাহ এবং দেয়াল ঘড়ি প্রতীক নিয়ে খেলাফত মজলিসের প্রার্থী মো. তৌহিদুর রহমান প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন।
এই আসনে আওয়ামী লীগ সরে গিয়ে মহাজোট হিসেবে নির্বাচন করায় মনোনয়ন প্রত্যাহার করেন মো. রেজাউল করিম রাজু। বাতিল হয়েছে বাংলাদেশ কংগ্রেসের প্রার্থী মো. একরামুল হক ও স্বতন্ত্রপ্রার্থী মো. কাওছার জামানের মনোনয়ন।
উপনির্বাচনকে সামনে রেখে একদিন আগে ১৭৫টি কেন্দ্রে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহার করে ‘মক ভোটিং’ কার্যক্রমের আয়োজন করে নির্বাচন কমিশন। তবে সে আয়োজনেও সাড়া মেলেনি ভোটারদের। বেশিরভাগ কেন্দ্রেই খুব অল্পসংখ্যক ভোটার উপস্থিত হয়েছিলেন অনুশীলন ভোট দিতে।
আরও পড়ুন: রংপুর উপনির্বাচনে ‘মক ভোটিং’য়ে সাড়া নেই ভোটারদের
ইসির দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, প্রতিটি কেন্দ্রে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর চার থেকে পাঁচজন পোশাক পরিহিত অস্ত্রধারী সদস্য দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়া আরও ১০-১২ জন দায়িত্বে ছিলেন। এছাড়া ১৮ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও চারজন বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেটসহ শতাধিক স্ট্রাইকিং ও মোবাইল ফোর্স মাঠে ছিলেন। পুলিশকে সহায়তা করতে ১৮ প্লাটুন বিজিবি সদস্য মোতায়েন করা হয়েছিল। মাঠে ছিল র্যাবেরও ২৪টির মতো মোবাইল টিম।
ইভিএম নিয়ে প্রশ্ন ভোটারদের
রংপুর-৩ উপনির্বাচনে ভোটগ্রহণে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনের ব্যবহার নিয়ে প্রশ্ন তোলেন ভোটাররা। কয়েকজন ভোটার বলেন, তারা নিজেরা সঠিকভাবে ভোট দিচ্ছেন। তবে যারা ভোটগ্রহণের দায়িত্বে রয়েছেন, তারা যথাযথ প্রশিক্ষণ পাননি। তাদের কারণে ভোট দিতে সময় লেগেছে।
সাদ-আসিফ খুশি, রিটার শঙ্কা
ভোটার উপস্থিতি কম থাকলেও নির্বাচনের পরিবেশ নিয়ে সন্তোষ জানান জাতীয় পার্টির প্রার্থী সাদ এরশাদ এবং স্বতন্ত্র হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী জাতীয় পার্টির বিদ্রোহী প্রার্থী আসিফ শাহরিয়ার। শুরু থেকেই বিএনপি প্রার্থী রিটা রহমান নির্বাচন নিয়ে শঙ্কা জানান।
সাদ এরশাদ সকালে কালেক্টরেট স্কুল অ্যান্ড কলেজ কেন্দ্র পরিদর্শন করেন। পরে অন্য ভোটকেন্দ্রগুলোও ঘুরে দেখেন তিনি। নির্বাচনে জয়লাভের বিষয়ে আশাবাদী বলে জানান তিনি। আসিফ শাহরিয়ারও বলেন, সুষ্ঠুভাবে ভোটগ্রহণ চলছে।
ভোটার উপস্থিতি কম হওয়ার জন্য নির্বাচন কমিশনকে দায়ী করেন বিএনপির প্রার্থী রিটা রহমান। রাধাবল্লভ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ কয়েকটি ভোটকেন্দ্র পরিদর্শন করে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, রাতে খলেয়াসহ বিভিন্ন ইউনিয়নে বিএনপি নেতাকর্মীদের বাড়িতে বাড়িতে পুলিশ হানা দিয়েছে। হয়রানির ভয়ে নেতাকর্মীরা পালিয়ে বেড়াচ্ছে। এভাবে তো সুষ্ঠু ভোট হয় না। এখন চতুর্দিক থেকে শঙ্কা। সরকারি মেশিনারিজ, পুলিশ, নিরাপত্তা বাহিনী যদি আমাদের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে যায়, তাহলে আমরা কার কাছে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন আশা করব?
ভোট দিতে পারেননি চার প্রার্থী
রংপুর-৩ আসনের উপনির্বাচনে ছয় প্রার্থীর মধ্যে চার জনই নিজেকে ভোট দিতে পারেননি। জাতীয় পার্টির সাদ এরশাদ, বিএনপির রিটা রহমান, গণফ্রন্টের কাজী মো. শহীদুল্লাহ ও ন্যাশনাল পিপলস পার্টির শফিউল আলম— এই চার জনের কেউই রংপুর-৩ আসনের ভোটার নন। বাকি দুই প্রার্থীর মধ্যে এরশাদের ভাতিজা স্বতন্ত্র প্রার্থী আসিফ শাহরিয়ার ও খেলাফত মসলিসের প্রার্থী তৌহিদুর রহমান মন্ডল রংপুর মডেল কলেজ কেন্দ্রে নিজেদের ভোট দিয়েছেন।
রংপুর-৩ আসন শূন্য ঘোষণা
ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত ১৪ জুলাই জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ মারা যান। এরপর ১৬ জুলাই সংসদ সচিবালয়ের সচিব (রুটিন দায়িত্ব) আ.ই.ম গোলাম কিবরিয়া আসনটি শূন্য হওয়ার গেজেট প্রকাশ করেন।
সংবিধানের ১২৩(৪) দফায় বলা হয়েছে— ‘সংসদ ভাঙ্গিয়া যাওয়া ব্যতীত অন্য কোনো কারণে সংসদের কোনো সদস্যপদ শূন্য হলে নব্বই দিনের মধ্যে পদটি পূর্ণ করার জন্য আইনি বাধ্যবাধতা রয়েছে।’
গত ১ সেপ্টেম্বর দুপুরে নির্বাচন কমিশনে (ইসি) আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে অতিরিক্ত সচিব মোখলেসুর রহমান উপনির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেন। তফসিল অনুযায়ী, ৫ অক্টোবর সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত বিরতিহীনভাবে ভোটগ্রহণ করবে নির্বাচন কমিশন। মনোনয়নপত্র জমা দেওয়া শেষ তারিখ ছিল ৯ সেপ্টেম্বর, মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই ১১ সেপ্টেম্বর ও মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিন ছিল ১৬ সেপ্টেম্বর।
৫ অক্টোবর সাধারণ ছুটি
নির্বাচন উপলক্ষে গত ৩০ সেপ্টেম্বর সংশ্লিষ্ট এলাকায় সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন। এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, রংপুর-৩ নির্বাচনি এলাকার শূন্য আসনে নির্বাচন উপলক্ষে ৫ অক্টোবর সব সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে। তবে নির্বাচনি এলাকায় ওই দিন যদি কোনো পাবলিক পরীক্ষা হওয়ার দিন ঠিক থাকে তাহলে পরীক্ষার কেন্দ্রগুলো সাধারণ ছুটির আওতা মুক্ত থাকবে।
আওয়ামী লীগ আসিফ শাহরিয়ার এনপিপিবি জাতীয় পার্টি জাপা টপ নিউজ বিএনপি রংপুর-৩ আসনের উপনির্বাচন রিটা রহমান সাদ এরশাদ