জাতিসংঘ অধিবেশন ও ভারত সফর নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী
৯ অক্টোবর ২০১৯ ১৫:৫১
ঢাকা: জাতিসংঘের অধিবেশনে যোগ দেওয়াসহ যুক্তরাষ্ট্রে আট দিনের ও ভারতে চার দিনের সফর নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বুধবার (৯ অক্টোবর) বিকেল সাড়ে ৩টায় প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে এই সংবাদ সম্মেলন শুরু হয়। সংবাদ সম্মেলনের শুরুতেই প্রধানমন্ত্রী তার যুক্তরাষ্ট্র ও ভারত সফরের উল্লেখযোগ্য দিকগুলো তুলে ধরেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, জাতিসংঘের ৭৪তম অধিবেশনে জলবায়ু পরিবর্তন, দারিদ্র্য দূরীকরণ, মানসম্মত শিক্ষা ও অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন সংক্রান্ত বিষয়গুলো প্রাধান্য পেয়েছে। এছাড়া টেকসই উন্নয়ন (এসডিজি) ও সার্বজনীন স্বাস্থ্যসেবা বিষয়ক বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
অধিবেশনে বাংলাদেশ পরমাণু অস্ত্র সম্পূর্ণ নিরস্ত্রীকরণ বিষয়ক চুক্তি অনুস্বাক্ষর এবং মানবপাচার সংক্রান্ত পালেরমো প্রটোকল অনুসমর্থন করেছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে আমি নতুন করে চার দফা প্রস্তাব দিয়েছি। এগুলো হলো— রোহিঙ্গাদের টেকসই প্রত্যাবাসন এবং মিয়ানমারে তাদের আত্মীকরণে মিয়ানমারকে কার্যাকর পদক্ষেপ নেওয়ার মাধ্যমে রাজনৈতিক সদিচ্ছার পূর্ণ প্রতিফলন দেখাতে হবে; বৈষম্যমূলক আৈইন ও রীতিগুলো বিলোপ করে মিয়ানমারের প্রতি রোহিঙ্গাদের আস্থা তৈরি করতে হবে এবং রোহিঙ্গা প্রতিনিধিদের উত্তর রাখাইন সফরের আয়োজন করতে হবে; আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের পক্ষ থেকে উত্তর রাখাইন রাজ্যে বেসামরিক পর্যবেক্ষণ মোতায়েনের মাধ্যমে রোহিঙ্গাদের নিরাপত্তা ও সুরক্ষার নিশ্চয়তা দিতে হবে; এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের অবশ্যই রোহিঙ্গা সমস্যার মূল কারণগুলো বিবেচনায় আনতে হবে ও মানবাধিকার লঙ্ঘন ও অন্যান্য নৃশংসতার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের দায়বদ্ধতা নিশ্চিত করতে হবে।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘জাতিসংঘ সফরে প্রতিবছরের মতো এবার বাংলায় ভাষণ দিয়েছি। এছাড়া যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী বাংলাদেশের সঙ্গেও মতবিনিময় করেছি।’
ভারত সফর বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আমন্ত্রণে ও ইকোনোমিক সামিটে অংশ নিতে ৩ থেকে ৬ অক্টোবর ভারত সফর করি। ৫ অক্টোবর হায়দরাবাদ হাউসে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে অভিন্ন নদীর পানিবণ্টন, ফেনী নদীর পানিবণ্টন, মুহুরী নদীর সীমানা নির্ধারণ বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। এছাড়া রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানের বিষয়ে নরেন্দ্র মোদি বলেছেন, ভারত বলেছে মিয়ানমারের সঙ্গে আমাদের নিয়মিত যোগাযোগ আছে। রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে ভারত কাজ করে যাবে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘দ্বিপাক্ষিক বৈঠক শেষে প্রধানমন্ত্রী মোদিকে বাংলাদেশ সফরে আমন্ত্রণ জানাই। তিনি আগামী বছর বাংলাদেশে আসার আগ্রহ পোষণ করেছেন। এছাড়া ভারতের রাষ্ট্রপতির সঙ্গে বৈঠক করেছি। তাকেও বাংলাদেশ সফরে আমন্ত্রণ জানিয়েছি।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এশিয়াটিক সোসাইটি থেকে আমাকে টেগোর পিস অ্যাওয়ার্ড দেওয়া হয়েছে। আমি এই অ্যাওয়ার্ড দেশবাসীকে উৎসর্গ করেছি।’
এর আগে, জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৭৪তম অধিবেশনে যোগ দিতে ২২ সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের পথে রওনা দেন প্রধানমন্ত্রী। জাতিসংঘ অধিবেশনে যোগ দেওয়ার পাশাপাশি তিনি সাইডলাইনে একাধিক দেশের সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধানের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করেন। যুক্তরাষ্ট্র সফর শেষে ২৯ সেপ্টেম্বর দেশে ফেরেন শেখ হাসিনা।
যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফেরার পর গত ৩ অক্টোবর ভারত সফরে যান প্রধানমন্ত্রী। বিশ্ব অর্থনীতি ফোরামের (ডাব্লিউইএফ) ভারত অর্থনৈতিক সম্মেলনে যোগদানের জন্য তাকে আমন্ত্রণ জানানো হয়। ওই সম্মেলনের উদ্বোধনী ও সমাপনী অধিবেশনে বক্তব্য রাখা ছাড়াও প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশ-ভারত ব্যবসায়িক ফোরামের অনুষ্ঠানে যোগ দেন। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করার সঙ্গে সঙ্গে দুই দেশের মধ্যে আটটি সমঝোতা স্মারকে সই হওয়ার অনুষ্ঠানেও উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া ভারতের রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দসহ দেশটির বিরোধী দল কংগ্রেসের একাধিক শীর্ষ নেতার সঙ্গেও বৈঠক করেন শেখ হাসিনা। চার দিনের ভারত সফর শেষে ৬ অক্টোবর দেশে ফেরেন প্রধানমন্ত্রী।