‘ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ করব না, বুয়েট চাইলে নিজে করবে’
৯ অক্টোবর ২০১৯ ১৭:০২
ঢাকা: সরকারিভাবে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধের বিপক্ষে স্পষ্ট অবস্থান নিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তবে কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নিজেদের জন্য ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ করলে তাতে সরকার হস্তক্ষেপ করবে না বলেও জানিয়েছেন তিনি।
শেখ হাসিনা বলেন, সামরিক শাসকরা এসেই ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ করে। আর ছাত্র রাজনীতি করেই এ পর্যন্ত এসেছি। আমি ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ কেন করব? তবে কোনো প্রতিষ্ঠান চাইলে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ করতে পারে। বুয়েট চাইলে সেটি করতে পারে, আমরা হস্তক্ষেপ করব না।
আরও পড়ুন- ‘মানুষের ভালো-মন্দ দেখার দায়িত্ব আমার, এ নিয়ে প্রশ্ন কেন?’
বুধবার (৯ অক্টোবর) বিকেলে প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ কথা বলেন। জাতিসংঘের অধিবেশনে ভাষণ দেওয়াসহ যুক্তরাষ্ট্রে আট দিন ও ভারতে চার দিনের সফর পরবর্তী এই সংবাদ সম্মেলন আয়োজন করা হয়।
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদের হত্যার পর বুয়েট ক্যাম্পাস থেকে ছাত্র রাজনীতি বন্ধের দাবি উঠেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রকল্যাণ বিষয়ক পরিচালকও ছাত্র রাজনীতি বন্ধের পক্ষে কথা বলেছেন, তাতে সায় দিয়েছে বুয়েট শিক্ষক সমিতিও। সাম্প্রতিক আরও বেশকিছু ঘটনায় ছাত্র সংগঠনগুলোর নেতিবাচক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ার তথ্য তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রীর কাছে জানতে চাওয়া হয়, সরকার ছাত্র রাজনীতি বন্ধ করবে কি না।
আরও পড়ুন- ‘নিজের জীবনী নিয়ে লেখার ইচ্ছাও নেই, চিন্তাও নেই’
এমন প্রশ্নের উত্তরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘কিছু হলেই ছাত্র রাজনীতি বন্ধের কথা ওঠে। এই যে বুয়েটে হত্যাকাণ্ড হলো, সেখানে কি কোনো রাজনীতি আছে? যারা অপরাধ করেছে তারা কে কোন দল, সেটি আমি বুঝি না।’
ছাত্রলীগের রাজনীতি প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, ‘ছাত্রলীগ সবসময় একটা আলাদা স্বাধীন সংগঠন ছিল। শুধু কমিউনিস্ট পার্টির ছাত্র সংগঠনই মূল দলে সম্পৃক্ত। তবে হ্যাঁ, ছাত্রলীগ যেহেতু ছাত্ররা করে, তাই তাদের গাইডলাইন দেওয়ার প্রয়োজন আছে। মূল দল ছাত্রলীগকে সেই নির্দেশনা দেয়। ছাত্রদের নষ্ট পলিটিক্স চালু করেছিলেন জিয়াউর রহমান (বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা)। আইয়ুব খান (অবিভক্ত পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট, সামরিক শাসক) শুরু করেছিলেন, জিয়াউর রহমানও করেছিলেন। আমাদের গঠনতন্ত্রে দেখবেন, সহযোগী সংগঠনের তালিকা আছে। সেখানে কোনো অঙ্গসংগঠন বলে কিছু নেই। ছাত্রলীগ আমাদের অঙ্গসংগঠন না। এটি একটি ছাত্র সংগঠন, আলাদা একটি সংগঠন, এখনো সেভাবেই আছে।’
আরও পড়ুন- ‘দেশের স্বার্থ শেখ হাসিনা বিক্রি করবে এটি হতে পারে না’
কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নিজেরা চাইলে তাদের জন্য ছাত্র রাজনীতি বন্ধ করতে পারে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, অনেক প্রতিষ্ঠান তো আছে, যেখানে সংগঠন করা নিষেধ। বুয়েট যদি মনে করে, তারাও ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ করতে পারে। বুয়েটে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ করার কথা উঠেছে। তাদের নিজেদের সিন্ডিকেট আছে, কমিটি আছে। তারা চাইলে তাদের ওখানে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ করবে। তাতে আমরা কোনো হস্তক্ষেপ করব না।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ তো মিলিটারি ডিকটেটরদের কথা। এটা তারাই করে গেছে। কিন্তু আমাদের দেশের নেতৃত্ব উঠে এসেছে ছাত্র রাজনীতি থেকেই। আমি কিন্তু ছাত্র রাজনীতি করেই এখানে এসেছি। আমাদের দেশের অসুবিধা হলো মিলিটারি এসে তাদের লোভী করে গেছে। সেটি আসলে নষ্ট রাজনীতি হয়ে গেছে। সেখান থেকে আমরা ফিরিয়ে আনছি ধীরে ধীরে।’
আরও পড়ুন- ‘ভাসানচরের একপাশে রোহিঙ্গা, একপাশে ক্যাসিনোর ব্যবস্থা করে দেবো!’
তিনি আরও বলেন, আমি ছাত্র রাজনীতি করেই এখানে এসেছি। দেশের ভালো-মন্দ নিয়ে চিন্তা তো সেই ছাত্রজীবন থেকেই আসে। যারা উড়ে এসে বসে, তারা ক্ষমতা ভোগ করে, তাদের দেশের চিন্তা থাকে না। কিন্তু রাজনীতি তো শিক্ষার ব্যাপার, ট্রেনিংয়ের ব্যাপার। এই শিক্ষা, এই ট্রেনিং ছাত্ররাজনীতি থেকেই গড়ে ওঠে। কিন্তু আমাদের সামরিক শাসকরা ছাত্রদেরও ভোগ-বিলাসের পথ দেখিয়ে গেছে, যেটার কারণে ছাত্র রাজনীতি নষ্ট হয়ে গেছে।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘হিসাব করে দেখুন, একটা ছাত্রের পেছনে সরকার কত টাকা খরচ করে? স্বাধীনতা ভালো, কিন্তু সেই স্বাধীনতা বালকের জন্য নয়। যে স্বাধীনতার মর্যাদা দিতে পারবে তার জন্য স্বাধীনতা ভালো। দেখা গেছে একটা রুম নিয়ে মাস্তানি করছে। দশ/বিশ/ত্রিশ টাকা ভাড়া দিয়ে রুম দখল করে মাস্তানি করছে। জনগণের ট্যাক্সের টাকা খরচ হচ্ছে তাদের পেছনে। এটি আমি মানব না। সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সার্চ করার নির্দেশনা আমি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে দেব। আপনারা তাদের বের করে দিন। কোনো দল-টল আমি বুঝি না।’
আরও পড়ুন-
ফুটেজের জন্য পুলিশদের অবরুদ্ধ করা হলো কেন, প্রশ্ন প্রধানমন্ত্রীর
জাতিসংঘ অধিবেশন ও ভারত সফর নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী
‘নগণ্য পরিমাণ পানি দিচ্ছি, এটা নিয়ে কেন এত চিৎকার আমি জানি না’
গণভবন ছাত্র রাজনীতি প্রধানমন্ত্রী প্রধানমন্ত্রীর সংবাদ সম্মেলন শেখ হাসিনা