বন্ধ চুয়াডাঙ্গার ৫টি রেলস্টেশন, ধুঁকছে বাকিগুলোও
১৫ অক্টোবর ২০১৯ ০৯:০৭
চুয়াডাঙ্গা: জেলার ১০টি রেলস্টেশনের মধ্যে জনবল সংকটের কারণে পাঁচটিই বন্ধ হয়ে গেছে। বাকিগুলোতেও নেই কোনো যাত্রীসেবা, টিকেট কিনতেও যেতে হয় পাশের যশোর ও খুলনা জেলায়। রেল কর্তৃপক্ষের কাছে বারবার অভিযোগ জানালেও কাজের কাজ কিছুই হয় না বলে অভিযোগ স্থানীয়দের। তবে প্রত্যেকটি রেলস্টেশনের কার্যক্রম পর্যায়ক্রমে খুব দ্রুতই চালু করা হবে আশ্বাস মিলেছে রেলওয়ের বিভাগীয় ব্যবস্থাপকের কাছ থেকে।
চুয়াডাঙ্গার ১০টি রেলস্টেশন হলো- আনসারবাড়িয়া, উথলী, দর্শনা হল্ট, আন্তর্জাতিক স্টেশন দর্শনা, জয়রামপুর, গাইদঘাট, চুয়াডাঙ্গা, মোমিনপুর, মুন্সীগঞ্জ ও আলমডাঙ্গা। এর মধ্যে আনসারবাড়িয়া, জয়রামপুর, গাইদঘাট, মোমিনপুর ও আলমডাঙ্গা রেলস্টেশনের সরকারি কার্যক্রম জনবল সংকটের কারণে বন্ধ রয়েছে। তবে এসব স্টেশন থেকে বেসরকারি ট্রেনগুলো যাত্রী পরিবহন করে।
জীবননগর উপজেলার আন্দুলবাড়ীয়া গ্রামের ব্যবসায়ী জাহিদ ও আব্দুল লতিফ জানান, আনসারবাড়িয়া রেলস্টেশনের কার্যক্রম ভালোভাবেই চলছিলো। কিন্তু হঠাৎ করে স্টেশনটির কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়া হয়। স্থানীয় সরকারদলীয় লোকজন গোটা স্টেশন দখল করে নিয়েছে। বেশি দিন বন্ধ থাকলে স্টেশনটি আরও অকেজো হয়ে যাবে আশঙ্কা প্রকাশ করেন তারা।
জীবননগর উপজেলার উথলী গ্রামের সংবাদকর্মী সালাউদ্দীন কাজল জানান, উথলী রেলস্টেশনে যাত্রীদের বসার জায়গা থাকলেও কোনো শৌচাগার নেই। এ কারণে যাত্রীদের ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে।
চুয়াডাঙ্গা রেলস্টেশনের স্টেশন মাস্টার মিজানুর রহমান বলেন, ‘এ স্টেশন থেকে চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর ও ঝিনাইদহ জেলার যাত্রীরা ট্রেনে যাতায়াত করে। স্টেশনে প্রতিদিন দেড় হাজারের মতো যাত্রী বিভিন্ন স্থানে যাতায়াত করে। স্টেশনের টিনসেড জরাজীর্ণ ও ফুটো হয়ে যাওয়ায় বৃষ্টিতে যাত্রীরা ভিজে যায়। এছাড়া বিকল্প বিদ্যুৎ ব্যবস্থা না থাকায় লোডশেডিংয়ে পুরো এলাকা অন্ধকার থাকে।’
টিকেট না পাওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আন্তঃনগর ট্রেনে তিন জেলার যাত্রীর চাপ থাকলেও এখান থেকে টিকেট পাওয়া যায়না। কমপক্ষে ৬০টি তাপানুকূল ও কেবিনের টিকেট দেওয়ার সামর্থ্য থাকলে কিছুটা ঝামেলা মুক্ত থাকা যায়। যাতায়াতের জন্য এ টিকেটগুলো বেশি দামে যশোর ও খুলনা থেকে কিনতে হয় যাত্রীদের। এখান থেকে টিকেট বিক্রি হলে রেলের রাজস্ব বাড়বে, সেই সঙ্গে যাত্রীরা নির্বিঘ্নে যাতায়াত করতে পারবে।’
টিকেট বিক্রির বিষয়ে ঊর্ধ্বতন রেল কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ আশা করে তিনি আরও জানান, গত জুন মাসে চুয়াডাঙ্গা রেলস্টেশনে যাত্রীদের কাছে ৬০ লাখ ৮৯ হাজার ৯২৪ টাকা, জুলাই মাসে ৫৭ লাখ ৪৬ হাজার ৯৩৬ টাকা ও আগস্ট মাসে ৬২ লাখ ৫২ হাজার ৮৭১ টাকার টিকেট বিক্রি হয়েছে।
এদিকে, চুয়াডাঙ্গার মোমিনপুর রেলস্টেশন সরকারিভাবে বন্ধ হয়ে গেলেও সেখানে বেসরকারিভাবে মেইল ও লোকাল ট্রেনের চলাচল করছে। তবে প্ল্যাটফর্মের অবস্থা খুবই খারাপ। এছাড়া এর একাংশ দখল করে অবৈধভাবে গড়ে তোলা হয়েছে আওয়ামী লীগের কার্যালয়।
সরকারিভাবে বন্ধ হয়ে যাওয়া মুন্সীগঞ্জ রেলস্টেশন থেকে প্রত্যেকদিনই বেসরকারিভাবে চলাচল করা ট্রেনগুলো ছেড়ে যাচ্ছে। টিকেট বিক্রির ছোট একটি বন্ধ ঘরে সিগনালের কার্যক্রম পালাক্রমে পরিচালনা করছেন গেটম্যান আব্দুল গনি ও বিল্লাল হোসেন।
গেটম্যান আব্দুল গনি বলেন, ‘খুব সমস্যার মধ্যেই এ দায়িত্ব পালন করতে হচ্ছে। এটা দেখার কেউ নেই।’
পাকশী রেলওয়ে বিভাগীয় ব্যবস্থাপক আহসান উল্লাহ ভূঁইয়া বলেন, ‘চুয়াডাঙ্গা জেলায় থাকা ১০টি স্টেশনের মধ্যে ৫টি স্টেশনের সরকারি কার্যক্রম জনবল সংকটের কারণে বন্ধ রয়েছে। তবে বেসরকারি ট্রেনগুলো এ সব স্টেশনে থেকে যাত্রী ওঠানামা করায় এবং টিকেট বিক্রি করে। জনবল সঙ্কট নিরসন করে সরকারিভাবে প্রত্যেকটি রেলস্টেশনের কার্যক্রম পর্যায়ক্রমে খুব দ্রুতই চালু করা হবে।’
টিকেট সংকটের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এটা ওপরের ব্যাপার। সে কারণে এ বিষয়ে মন্তব্য করা যাবে না।’