মর্গে গৃহকর্মীর মরদেহ, তথ্য দিতে গড়িমসি পুলিশের
২৩ অক্টোবর ২০১৯ ২০:৫০
ঢাকা: রাজধানীর শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজের মর্গে ময়নাতদন্ত শেষে পড়ে আছে গৃহকর্মী জান্নাতির (১২) মরদেহ। মর্গ কর্তৃপক্ষ বলছে, নির্যাতনে জান্নাতির মৃত্যু হয়েছে। আর গৃহকত্রীর দাবি, জান্নাতির মৃগী রোগ ছিল, সেই রোগে সে মারা গেছে। পুলিশ এ বিষয়ে তথ্য দিতে গড়িমসি করছে।
বুধবার (২৩ অক্টোবর) শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজের মর্গে গিয়ে মৃত গৃহকর্মী জান্নাতির পরিবারের কাউকে পাওয়া যায়নি। মর্গে থাকা মোহাম্মদপুর থানার পুলিশ কনস্টেবল রনজু মিয়া বলেন, পরিদর্শক তদন্ত এসেছিলেন। ফরেনসিক চিকিৎসক তাকে সঙ্গে নিয়ে মর্গের ভেতরে গিয়েছিলেন। জানতে পেরেছি, জান্নাতিকে হত্যা করা হয়েছে। তবে কিভাবে হত্যা করা হয়েছে, তা জানি না।
পুলিশ কিভাবে খবর পেল— জানতে চাইলে রনজু মিয়া বলেন, হাসপাতাল থেকে ফোন পেয়ে পুলিশ এসে প্রাথমিক সুরতহাল রিপোর্ট করার পর মৃতদেহ মর্গে পাঠায়। ময়নাতদন্ত শেষ, রিপোর্ট পেলে জানা যাবে আসলে কী ঘটেছিল।
ময়নাতদন্তের রিপোর্টে প্রাথমিকভাবে কী পেয়েছেন— জানতে চাইলে সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজের ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের প্রভাষক ডা. এ কে এম মাইনুদ্দিন সারাবাংলাকে বলেন, শরীরে নির্যাতনের অনেক চিহ্ন পাওয়া গেছে। মৃত্যুর কারণ জানতে ভিসেরা পরীক্ষার জন্য নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। রিপোর্ট পাওয়া গেলে প্রকৃত বিষয়টি জানা যাবে।
জান্নাতির মরদেহ কোন ওয়ার্ড থেকে এসেছে, তার বাড়ি কোথায়, তাকে কোথায় থেকে কে প্রথম ভর্তি করিয়েছিল— এসব বিষয়ে মর্গ থেকে কোনো তথ্য না পেয়ে হাসপাতালের জরুরি বিভাগের ফ্রন্টডেস্কের সহায়তা নিতে হয়। ফ্রন্টডেস্কের ম্যানেজার আরমান হোসেন প্রথমে ফিমেল ৪ নম্বর ওয়ার্ডে খোঁজ নিতে বলেন। নীচ তলায় ৪ নম্বর ওয়ার্ডে জান্নাতির বিষয়ে কোনো তথ্য না পাওয়ায় সেখান থেকে তৃতীয় তলায় ১১ নম্বর ওয়ার্ডে পাঠানো হয়। সেখানেও জান্নাতির কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি, তথ্য পাওয়া যায়নি দ্বিতীয় তলায় ৮ নম্বর ওয়ার্ডেও।
ফের ফ্রন্টডেস্কে সহায়তা চাইলে আরমানের সঙ্গে থাকা সুজন মিয়া জানান, তিনি (২২ অক্টোবর) রাত ১১টার দিকে একজন গৃহকর্মীকে মৃত অবস্থায় এক নারীকে নিয়ে আসতে দেখেছেন। তিনি জরুরি বিভাগের নার্সের চেম্বারে খোঁজ নিতে বলেন। এরপর সেখানে গিয়ে জানতে চাইলে ব্রাদার্স আরিফুর রহমান আরিফ জান্নাতির বিষয়ে তথ্য দেন।
ব্রাদার্স আরিফুর রহমান বলেন, মঙ্গলবার (২২ অক্টোবর) রাত ১১টার দিকে মোহাম্মদপুর থানা এলাকার রোকসানা পারভিন নামে এক নারী মৃত অবস্থায় জান্নাতি (১২) নামে এক মেয়েকে নিয়ে আসেন। আমরা তাকে কোনো চিকিৎসা দিতে পারিনি। মেয়েটির বাড়ি বগুড়া জেলার গাবতলী থানার তেলেআটা গ্রামে। বুধবার (২৩ অক্টোবর) দুপুরে মৃতদেহ মোহাম্মদপুর থানার এসআই মিজানুর রহমানের কাছে হস্তান্তরের আগে মেয়েটির পরিবারের কেউ হাসপাতালে আসেনি।
গৃহকত্রী রোকসানা পারভিন সারাবাংলাকে বলেন, জান্নাতির মৃগী রোগ ছিল। মাঝে মধ্যেই মৃগী রোগ উঠত, ভালো হলে আবার কাজ করত। মঙ্গলবার (২২ অক্টোবর) বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে সে তার রুমে ঘুমিয়ে যায়। রাত ১০টার দিকে গিয়ে দেখতে পাই, তার এই অবস্থা। পরে তাকে হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করে। তিনি এর বেশি কোনো তথ্য দিতে চাননি।
মোহাম্মদপুর থানার এসআই মিজানুর রহমান বলেন, জান্নাতির মৃত্যু নিয়ে আমরা কাজ করছি। এখনই কিছু বলা যাবে না। প্রাথমিক সুরতহাল রিপোর্টে কী পেয়েছেন— জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ বিষয়ে কিছু আগেই কিছু বলা যাবে না।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে মোহাম্মদপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জি জি বিশ্বাস সারাবাংলাকে বলেন, গৃহকর্ত্রী রোকসানা পারভিনকে থানায় নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।