ফরিদপুর: জুলাই গণঅভ্যুত্থানে ঢাকার উত্তরায় পুলিশের গুলিতে নিহত ফরিদপুর জেলা বিএনপির সাবেক সম্পাদক জান শরীফ মিঠুর লাশ নয় মাস পরে তুলে দ্রুত ময়নাতদন্ত করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার (২৪ এপ্রিল) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে তার লাশ কবর থেকে তোলার পর দুপুর নাগাদ ময়নাতদন্তের জন্য ফরিদপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পৌঁছে।
এর আগে ঢাকার সিএমএম আদালতের নির্দেশে বৃহস্পতিবার (২৪ এপ্রিল) সকাল ১০টার দিকে ফরিদপুরের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ফজলে রাব্বির উপস্থিতিতে শহরের গোয়ালচামটে জান শরীফ মিঠুর বাসভবনের সামনে দাফন করা লাশ উত্তোলনের কাজ শুরু করা হয়। এ সময় ঢাকার রামপুরা থানা থেকে আসা এসআই নেতৃত্বে পুলিশের একটি বিশেষ টিমসহ কোতোয়ালি থানা পুলিশের একটি দল উপস্থিত ছিল।
এদিন জান শরীফ মিঠুর লাশ তুলে ফরিদপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়। তবে হাসপাতালে পোর্টেবল এক্সরে না থাকায় দু’দিন পরে ময়নাতদন্তের সিদ্ধান্ত হয়। ফরেনসিক বিভাগ থেকে এমন খবর পেয়ে সেখানে জড়ো হন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা। পরে তাদের দাবির মুখে বাইরের একটি হাসপাতাল থেকে পোর্টেবল এক্সরে মেশিন সংগ্রহ করে ময়নাতদন্ত সম্পন্ন করা হয়। এর পর বিকেল ৬টার দিকে ময়নাতদন্ত শেষে মিঠুর লাশ পুনরায় দাফনের জন্য বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়।
নিহত মিঠুর স্ত্রী রোহেদুন সেজবা ইভা বলেন, ‘স্বামীর লাশ কবর থেকে উত্তোলন করে আবার কাটাছেঁড়া করা হবে এটি মেনে নেওয়া আমাদের জন্য কষ্টকর ছিল। কিন্তু স্বামী হত্যার বিচার পেতে হলে এ ছাড়া কোনো ভিন্ন উপায় ছিল না। তাই সকলের অনুরোধে আমরা রাজি হই। কিন্তু হাসপাতালে নেওয়ার পরে বলা হয় আজ আর ময়নাতদন্ত সম্ভব নয়। শনিবার তারা ময়নাতদন্ত শেষে লাশ হস্তান্তর করবেন বলে জানান। এ অবস্থায় বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়। সেইসঙ্গে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রতিনিধিরাও হাসপাতালে পৌঁছেন। পরে বিকেলে ময়নাতদন্ত শেষে ফের স্বামীর লাশ এনে পুনরায় দাফন করা হয়েছে।’
ফরিদপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান ডা. ইউনুস আলী জানান, এই লাশের ময়নাতদন্ত অন্য সকল লাশের ময়নাতদন্তের মতো নয়, এ জন্য পোর্টেবল এক্সরে মেশিন দরকার, যা আমাদের হাসপাতালে ছিল না। পরে এ নিয়ে একটু ঝামেলা হলে প্রিন্সিপাল স্যারের উপস্থিতিতে ঝামেলা নিরসন করা হয়। বিকেলে ময়নাতদন্ত শেষে লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
গতবছর বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সময় ১৯ জুলাই দুপুরে ঢাকার উত্তরায় গুলিতে নিহত হন জেলা বিএনপির সাবেক কমিটির সম্পাদক ও শহরের গোয়ালচামটের মোল্লা বাড়ির বাসিন্দা শরীফ সামসুল আলম মন্টুর পুত্র জান শরীফ মিঠু (৪৬)। এ ঘটনায় গত বছরের ৯ অক্টোবর শেখ হাসিনাসহ ১৪৮ জনের নামোল্লেখ করে ঢাকার সিএমএম আদালতে একটি মামলা দায়ের করেন মিঠুর স্ত্রী রোহেদুন সেজবা ইভা। ওই মামলায় মাস দেড়েক আগে আদালত কবর থেকে জান শরীফ মিঠুর মৃতদেহ উত্তোলন করে ময়নাতদন্তের নির্দেশ দেন। তবে সেসময় মিঠুর পরিবার কবর থেকে লাশ উত্তোলনে রাজি না হওয়ায় ময়নাতদন্তের এ কাজ বিলম্বিত হয়।
উল্লেখ্য, জান শরীফ মিঠু ঢাকার উত্তরায় পরিবার নিয়ে থাকতেন। ২০০৬ সালে নওগাঁর মেয়ে রোহেদুন সেজবা ইভার সঙ্গে বিয়ে হয় মিঠুর। মাহাবী শরীফ জারা নামে তাদের একটি মেয়ে রয়েছে।