আবরারকে মহাখালীতে হাসপাতালে নেওয়া হলো কেন, প্রশ্ন সহপাঠীদের
২ নভেম্বর ২০১৯ ১১:২৫
ঢাকা: ম্যাগাজিন ‘কিশোর আলো’র বর্ষপূর্তি অনুষ্ঠান দেখতে এসে ঢাকা রেসিডেনসিয়াল মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী নাঈমুল আবরারের (১৫) বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মৃত্যুর ঘটনায় বিক্ষোভ করছেন আবরারের সহপাঠীসহ অভিভাবকরা। তাদের প্রশ্ন, বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হওয়ার পর আবরারকে চিকিৎসার জন্য রাস্তার উল্টো পাশেরই শহিদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে না নিয়ে মহাখালীতে ইউনিভার্সেল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (সাবেক আয়েশা মেমোরিয়াল হাসপাতাল) নেওয়া হলো কেন? কাছের কোনো হাসপাতালে নেওয়া হলে আবরারকে দ্রুত চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব হতো বলে মনে করছেন তারা।
শনিবার (২ নভেম্বর) সকাল ১০টা থেকে আবরারের সহপাঠী ও অভিভাবকরা কলেজের সামনে উপস্থিত হতে থাকেন। শুরুতে তাদের কলেজে ঢুকতে দেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ করেন তারা। শুধু তাই নয়, কলেজের মোট ছয়টি আবাসিক হাউজের কোনো শিক্ষার্থীকেও বাইরে আসতে দেওয়া হচ্ছে না বলে জানান তারা।
আরও পড়ুন- কিশোর আলোর আনন্দ আয়োজনে লাশ হয়ে ফিরলো আবরার
শিক্ষার্থীরা বলছেন, আবরার মারা যাওয়ার জন্য কিশোর আলোর আনন্দ আয়োজনের আয়োজক কর্তৃপক্ষের অব্যবস্থাপনাই দায়ী। এমন একটি দুর্ঘটনার পরও অনুষ্ঠান অব্যাহত রাখার মানসিকতা নিন্দনীয়। একটি শিক্ষার্থীর জীবনের তুলনায় অনুষ্ঠানকেই আয়োজক কর্তৃপক্ষ বড় করে দেখেছে বলেও অভিযোগ তাদের।
মডেল কলেজের সামনে উপস্থিত একজন অভিভাবক সারাবাংলাকে বলেন, কিশোর আলোর আয়োজন ছিল শিশু-কিশোরদের জন্য। তারা শিশু-কিশোরদের নিয়ে অনেক কথা বলে। কিন্তু তাদের অনুষ্ঠানে একটি শিশু বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়েছে, তাকে দ্রুত চিকিৎসা দিতে কাছের কোনো হাসপাতালে নেওয়া হলো না কেন? এ প্রশ্নের উত্তর তারাই দিতে পারবে।
ওই অভিভাবক বলেন, আমরা বুঝতে পারিনি মূল ঘটনা কী হয়েছিল। আমরা জেনেছি, একটি শিশু অসুস্থ হয়ে পড়েছে, তাকে হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। কিন্তু এমন একটি ঘটনা ঘটেছে, আমরা বুঝতে পারিনি। আয়োজকদের উচিত ছিল, ঘটনাটি ঘটার সঙ্গে সঙ্গে ওই শিক্ষার্থীর অভিভাবকদের নম্বর নিয়ে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা এবং তাকে দ্রুত কাছের কোনো হাসপাতালে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা। অনুষ্ঠানটিও তখনই বন্ধ করে দেওয়া উচিত ছিল। একটি শিশুর জীবন চলে যাচ্ছে, এ পরিস্থিতিতে গান-বাজনা চলবে, এটা তো মেনে নেওয়া যায় না।
কলেজের সামনে উপস্থিত হওয়া শিক্ষার্থীরা জানান, নবম শ্রেণির সব শিক্ষার্থীকে শুক্রবার রাতেই নিষেধ করে দেওয়া হয়েছে, তারা যেন শনিবার কলেজে না আসেন। তারা আরও বলেন, ঘটনার একজন প্রত্যক্ষদর্শী শিক্ষার্থী আছে কুদরত-ই-খুদা হাউজে। কিন্তু তাকে বাইরে আসতে দেওয়া হচ্ছে না।
কেবল কিশোর আলো কর্তৃপক্ষই নয়, রেসিডেনসিয়াল মডেল কলেজের বিরুদ্ধেও বিভিন্ন অভিযোগ উপস্থাপন করেছেন অভিভাবকরা। তারা বলছেন, কলেজের মাঠ প্রায় পুরোবছরই বাইরের প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের জন্য ভাড়া দেওয়া হয়ে থাকে। ফলে স্কুল ও কলেজটির শিক্ষার্থীরাই ঠিকমতো খেলার সুযোগ পায় না। শিক্ষকদের কাছে এ বিষয়ে অভিযোগ করলে তারা অভিভাবকদের সন্তানদের পরীক্ষার নম্বর কম দেওয়া থেকে শুরু করে বিভিন্ন রকম মানসিক নির্যাতন করে বলেও অভিযোগ করেন। যে কারণে তাদের নাম-পরিচয় প্রকাশ পেলে সন্তানেরা শিক্ষেকদের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন তারা।
এদিকে, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা জড়ো হওয়ার বেশ কিছুক্ষণ পর কলেজের অধ্যক্ষ ব্রিগেডিয়ার জেনারেল কাজী শামীম ফরহাদ তার কার্যালয়ে আসেন। এখন শিক্ষার্থীরা তার সঙ্গে কথা বলছে।