‘সবকিছু ধ্বংস করে নয়, বিদ্যুৎকেন্দ্র চাই বিকল্প উপায়ে’
৬ নভেম্বর ২০১৯ ১৪:৪১
ঢাকা: ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখার উদ্দিন বলেছেন, দেশের সবকিছু ধ্বংস করে বিদ্যুৎকেন্দ্র চাই না। বিদ্যুৎকেন্দ্র চাই বিকল্প উপায়ে; নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহারে মাধ্যমে। সরকার কয়লা ব্যবহার করে যে উপায়ে বিদ্যুৎকেন্দ্র চালু করেছে তা হবে আত্মঘাতী।
বুধবার (৬ নভেম্বর) দুপুরে রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) সাগর-রুনি মিলনায়তনে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
টিআইবির নির্বাহী পরিচালক বলেন, ‘বিদ্যুৎ আমাদের দরকার। বিদ্যুৎ না থাকলে সবকিছু অচল হয়ে যায়। তবে জীবন জীবিকা অচল করে, প্রকৃতি ধ্বংস করে, জনগণের জীবন বিপন্ন ও জনজীবন নষ্ট করে বিদ্যুৎ চাই না। কয়লাভিত্তিক যে বিদ্যুৎকেন্দ্র করার প্রক্রিয়া এগিয়ে যাচ্ছে, তাতে আমাদের সবকিছু ধ্বংস হয়ে যাবে। এখনও সময় আছে, সরকার যাতে এসব প্রকল্প থেকে সরে আসে।’
তিনি বলেন, ‘সরকার প্যারিস চুক্তিতে বলে এসেছে ২০২০ সালের মধ্যে নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে ১০ ভাগ বিদ্যুৎ উৎপাদন করবে। আর মাত্র এক বছর আছে। এখন পর্যন্ত তার অর্জন মাত্র চার ভাগ। যেখানে ২০৫০ সালের মধ্যে ৫০ ভাগ নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের কথা বলা হয়েছে। সেটা যদি হয়ে যায়, তাহলে এদেশে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের কোনো দরকার পড়বে না।’
টিআইবির নির্বাহী পরিচালক বলেন, ‘শুধু বায়ু ব্যবহার করে দেশে ২১ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন সম্ভব। আমরা সেদিকে নজর না দিয়ে ভারত ও রাশিয়ার মতো দেশগুলোর ফাঁদে পা দিয়েছি। যেখানে নবায়নযোগ্য জ্বালানি উৎপাদন সম্ভব সেখানে রামপালের মতো বিদ্যুৎকেন্দ্র আমরা করছি। আমরা বলছি, এ জায়গা থেকে সরে আসতে হবে।’
ইফতেখার উদ্দিন বলেন, ‘নবায়নযোগ্য জ্বালানি রেখে কয়লা দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন মাদকের নেশার মতো। সেই নেশায় পড়েছি আমরা; যা ভয়াবহ হবে আমাদের জন্য। এদেশের ৪২ মিলিয়ন মানুষ যখন বৈশ্বিক জলবায়ুর ঝুঁকিতে সেখানে আমরা কয়লাভিত্তিক বিদ্যুতে নির্ভর করছি।
তিনি বলেন, ‘আন্তর্জাতিক কোনো পরিবেশ প্রতিষ্ঠান যদি যাচাই করে ছাড়পত্র দেয় যে, কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র পরিবেশবান্ধব তাহলে আমরা আর প্রতিবাদ করব না। কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্পগুলোর জন্য বাংলাদেশ শ্বাসরুদ্ধকর অবস্থায় পড়বে তা আমরা বারবার বলে আসছি। আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানগুলোও একই কথা বলে আসছে।
এক প্রশ্নের জবাবে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক বলেন, ‘কয়লাভিত্তিক প্রকল্পগুলোর কোনো বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই। এখানে জিওগ্রাফিক্যাল রাজনীতি বা কোনো ব্যবসায়িক গ্রুপের ব্যাগ হাসিলের কোনো যোগসাজশ আছে কিনা তা সরকারই ভালো জানেন।
সংবাদ সম্মেলনে বাপার সাধারণ সম্পাদক ডা. আব্দুল মতিন বলেন, ‘দুবছর আগে সরকারকে বেশ কয়েকটি গবেষণাপত্র দেওয়া হয়েছে। এখন পর্যন্ত সরকার আমাদের ডাকেনি কিংবা যোগাযোগ করেনি। আর এর মাধ্যমে প্রমাণ হয় যে, সরকার কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্প করবেই। রামপালের কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে যে পরিমাণ ছাই নির্গত হবে তা সারাদেশে ছড়িয়ে পড়বে। নরসিংদী থেকে কলকাতা পর্যন্ত সেই ছাই দেখা যাবে। কিন্তু সরকার বলছে, নির্গত ছাই সমুদ্রের ওপর দিয়ে চলে যাবে।’
বাপার কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য শারমীন মুরশিদ বলেন, ‘কয়লা ব্যবহারের ফলে ৯০ ভাগ এসডিজির গোল পূর্ণ হবে না। ফলে আগামী ২০ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে দেশের ২০ ভাগ জমি পানিতে তলিয়ে যাবে। আরও ৩০ ভাগ মরুভূমি হয়ে যাবে।‘
তিনি বলেন, ‘নিজের চোখে দেখে এলাম কলাপাড়ায়। সেখানে যে বিদ্যুৎকেন্দ্র হচ্ছে তার প্রভাবে শত শত বাড়িঘর ধ্বংস হয়েছে। একটা শ্রেণি নিঃস্ব হয়ে ঘরবাড়ি হারিয়ে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরছে।
ওয়াটারকিপারস বাংলাদেশের সমন্বয়ক শরীফ জামিল বলেন, ‘কয়লা থাকলে দুষিত হবে। এটাই প্রাকৃতিক নিয়ম। তাই কয়লা সমগ্র বিশ্বে উঠে যাচ্ছে। সেখানে বাংলাদেশ কয়লাভিত্তিক প্রকল্প তৈরি করছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, পৃথিবীর সবচেয়ে দুষিত পদার্থ হচ্ছে কয়লা। এরপরেই রয়েছে তেল। সবচেয়ে দুষিত পদার্থটি দিয়েই বাংলাদেশ ২৯টি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্প তৈরি করছে। যা হবে এদেশের জন্য মারাত্বক ঝুঁকিপূর্ণ।