রোহিঙ্গাদের হাতে এনআইডি, আরও ২ ইসিকর্মী গ্রেফতার
১৩ নভেম্বর ২০১৯ ১৭:৩৫
চট্টগ্রাম ব্যুরো: মিয়ানমার থেকে আসা রোহিঙ্গাদের ভোটার করা ও জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) পাইয়ে দেওয়ার মামলায় নির্বাচন কমিশনের (ইসি) আরও দুই কর্মচারীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এ নিয়ে এনআইডি জালিয়াতি চক্রের ১০ জনকে গ্রেফতার করা হলো।
মঙ্গলবার (১২ নভেম্বর) বিকেলে তাদের নিজ নিজ কার্যালয় থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের পরিদর্শক রাজেশ বড়ুয়া। এদিকে, গ্রেফতার দু’জনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আদালত সাত দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন।
গ্রেফতার মো. আবুল খায়ের ভূঁইয়া (৪৫) চট্টগ্রামের জ্যেষ্ঠ্য জেলা নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয়ের উচ্চমান সহকারী। তিনি কুমিল্লা সদরের ক্যান্টনমেন্ট এলাকার মৃত আনু মিয়া ভূঁইয়ার ছেলে। গ্রেফতার আরেকজন আনোয়ার হোসেন মীরসরাই উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয়ের অফিস সহকারী। তিনি নোয়াখালী জেলার সেনবাগ উপজেলার বসন্তপুর গ্রামের আরব আলীর ছেলে।
কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের পরিদর্শক রাজেশ বড়ুয়া সারাবাংলাকে বলেন, ‘এনআইডি সংক্রান্ত মামলায় আমরা এ পর্যন্ত যাদের গ্রেফতার করেছি, তাদের মধ্যে তিন জন আদালতে ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার দায় স্বীকার করে জবানবন্দি দিয়েছেন। তাদের জবানবন্দি এবং অন্য আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে আবুল খায়ের ভূঁইয়া ও আনোয়ার হোসেনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।’
সরকারি কর্মচারী হওয়ায় তাদের গ্রেফতারের আগে ‘সরকারি চাকরি আইন-২০১৮’-এর ৪১ ধারা অনুযায়ী বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের অনুমতি নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন তদন্তকারী কর্মকর্তা রাজেশ।
গ্রেফতারের পর বুধবার (১৩ নভেম্বর) দুপুরে খায়ের ও আনোয়ারকে নগরীর কোতোয়ালি থানায় দায়ের থাকা রোহিঙ্গাদের এনআইডি কেলেঙ্কারির মামলায় আদালতে হাজির করে ১০ দিনের রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন করেন তদন্তকারী কর্মকর্তা। শুনানি শেষে চট্টগ্রাম মহানগর হাকিম সরওয়ার জাহান তাদের সাত দিন রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের আদেশ দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন রাজেশ বড়ুয়া।
এর আগে, লাকী নামের এক নারী গত ১৮ আগস্ট স্মার্ট কার্ড তুলতে জেলা নির্বাচন কার্যালয়ে গেলে তার হাতে পুরনো এনআইডিতে ১৭ ডিজিটের নম্বর দেখে কর্মকর্তাদের সন্দেহ হয়। পরে জেরার মুখে লাকী নিজের প্রকৃত নাম রমজান বিবি এবং ২০১৪ সালে মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে আসার পর টেকনাফের মুচনী রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ছিলেন বলে স্বীকার করেন। ওই রোহিঙ্গা নারী ভুয়া ঠিকানা দিয়ে তৈরি করিয়েছেন ওই জাল এনআইডি। অথচ ওই ভুয়া পরিচয়পত্রের তথ্যও নির্বাচন কমিশনের তথ্যভাণ্ডারে সংরক্ষিত আছে।
এ ঘটনার পর রোহিঙ্গাদের ভোটার করা ও এনআইডি পাইয়ে দেওয়ার সঙ্গে জড়িতদের খুঁজতে অভিযান শুরু হয়। নির্বাচন কমিশন থেকেও একটি তদন্ত কমিটি করা হয়।
এরপর গত ১৬ সেপ্টেম্বর রাতে চট্টগ্রাম নগরীর ডবলমুরিং থানা নির্বাচন কার্যালয়ের অফিস সহায়ক জয়নাল আবেদিনসহ তিন জনকে আটক করে পুলিশের হাতে তুলে দেন জেলা নির্বাচন অফিসের কর্মকর্তারা। বাকি দু’জন হলেন— জয়নালের বন্ধু বিজয় দাশ ও তার বোন সীমা দাশ ওরফে সুমাইয়া। জয়নালের হেফাজতে থাকা নির্বাচন কমিশনের লাইসেন্সকৃত একটি ল্যাপটপও উদ্ধার করা হয়, যেটি বিজয় ও সীমার কাছে রেখেছিলেন জয়নাল। রাতেই ডবলমুরিং থানা নির্বাচন কর্মকর্তা পল্লবী চাকমা বাদি হয়ে কোতোয়ালি থানায় পাঁচ জনের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে একটি মামলা দায়ের করেন।
ওই মামলায় নির্বাচন কমিশনের এনআইডি উইংয়ের কর্মী শাহনূর মিয়া, অস্থায়ী কর্মী মোস্তফা ফারুক, মো. শাহীন, মো. জাহিদ হাসান এবং পাভেল বড়ুয়াকে গ্রেফতার করা হয়।
আবুল খায়ের ও আনোয়ারসহ এনআইডি কেলেঙ্কারির ঘটনায় মোট ১০ জনকে গ্রেফতার করল কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট।
আরও পড়ুন-
চট্টগ্রামে ‘ইসিপাড়ায়’ গ্রেফতার আতঙ্ক
দ্বন্দ্বে জালিয়াতি ফাঁস, নজরদারিতে ইসির ২৫ কর্মী
রোহিঙ্গাদের হাতে এনআইডি, গলদ নির্বাচন কমিশনেই
রোহিঙ্গাদের হাতে এনআইডির নেপথ্যে সেই ‘জকরিয়া চক্র’
রোহিঙ্গাদের হাতে এনআইডি: জয়নালের জবানবন্দিতে ফাঁসছেন ইসির অনেকেই
এনআইডি জালিয়াতি জাতীয় পরিচয়পত্র রোহিঙ্গাতের হাতে এনআইডি রোহিঙ্গাদের ভোটার করা