এবার সংসদে দাঁড়িয়ে ক্ষমা চাইলেন রাঙ্গাঁ
১৩ নভেম্বর ২০১৯ ১৮:৫৫
সংসদ ভবন থেকে: বিবৃতি দিয়ে বক্তব্য প্রত্যাহার ও নূর হোসেনের পরিবারের সদস্যদের কাছে ক্ষমা চাওয়ার পর এবার জাতীয় সংসদে দাঁড়িয়ে সবার কাছে ক্ষমা চাইলেন জাতীয় পার্টির (জাপা) মহাসচিব মশিউর রহমান রাঙ্গাঁ। তিনি বলেন, আমি ক্ষমা চাচ্ছি। আশা করি, আমার কলিগরা এটাকে ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।
বুধবার (১৩ নভেম্বর) রাতে সংসদ অধিবেশনে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে কার্যপ্রণালী বিধির ২৭৪ বিধিতে ব্যক্তিগত কৈফিয়ত সম্পর্কিত ধারায় তিনি এসব কথা বলেন।
নব্বইয়ের স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে শহিদ নূর হোসেনকে ‘ইয়াবাখোর ও ফেনসিডিলখোর’ অভিহিত করে দেশব্যাপী প্রবল সমালোচনার মুখে পড়েন জাপা মহাসচিব রাঙ্গাঁ। পরে মঙ্গলবার (১২ নভেম্বর) গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে তিনি ওই বক্তব্যের জন্য অনুতপ্ত হয়েছেন উল্লেখ করে ক্ষমাপ্রার্থনা করেন। নিজের বক্তব্য প্রত্যাহারও করেন তিনি বিবৃতিতে। তারপরও জাতীয় সংসদে সরকারি দলসহ নিজ দল জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্যদেরও তীব্র সমালোচনায় তুলোধোনা হন রাঙ্গাঁ। তবে ওই সময় তিনি সংসদে উপস্থিত ছিলেন না।
আজ বুধবার সংসদ অধিবেশন শুরু হলে তাতে যোগ দেন মশিউর রহমান রাঙ্গাঁ। পরে তিনি পয়েন্ট অব অর্ডারে দাঁড়িয়ে স্পিকারের উদ্দেশে বলেন, নূর হোসেনকে নিয়ে আমি যে কটূক্তি করেছি, তার জন্য বিবৃতি দিয়ে নূর হোসেনের পরিবারের কাছে আমি ক্ষমা চেয়েছি। আজ সংসদে দাঁড়িয়ে সবার কাছে ক্ষমা চাই।
মশিউর রহমান রাঙ্গাঁ বলেন, গত ১০ নভেম্বর জাতীয় পার্টির অভ্যন্তরীণ গণতন্ত্র দিবস পালন নিয়ে একটি সভা ছিল, ছোট্ট পরিসরে। মাইক বাইরে ছিল না, ভেতরে সাউন্ডবক্সের মধ্যে আমরা কথা বলেছি। নূর হোসেন দিবসও একই দিন ছিল। পুরান ঢাকা থেকে কিছু লোক আমাদের ওখানে গিয়েছিলেন। তারা বলেন, নূর হোসেন চত্বরে এরশাদ সাহেবকে গালাগালি করা হয়েছে। এরকম কিছু কথাবার্তা শোনার পর তারা আমাদের অফিসে এসে বিষয়টি জানান। আমি দলের মহাসচিব হিসেবে তাদের শান্ত থাকতে বলি। এসময় তারা হৈ চৈ করেন।
জাপা মহাসচিব বলেন, বিষয়টি নিয়ে আমাদের সিনিয়র মন্ত্রীরা আমার সম্পর্কে যেভাবে কথা বলেছেন, তাদের কথাগুলোতে আমি কিছু মনে করছি না। আমি মনে করি, আমি ভুল করেছি। সেজন্য তারা আমাকে শাসন করেছেন। রাঙ্গাঁ বলেন, ভুল করার জন্য নূর হোসেনের পরিবারের কাছে আমি ক্ষমাপ্রার্থনা করেছি এবং বিবৃতিও দিয়েছি।
রাঙ্গাঁ আরও বলেন, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নিয়েও যদি নিজের অজান্তেই কোনো কটূ কথা বলে থাকি, সেজন্য আপনাদের কাছে ক্ষমা চাই।
সংসদের এই বিরোধী দলীয় চিফ হুইপ আরও বলেন, গতকাল (মঙ্গলবার) যখন এখান থেকে সিনিয়র পার্লামেন্টারিয়ানরা কথা বলেছেন, সেটি পরামর্শই হোক আর যাই হোক, তারা আমার সিনিয়র মন্ত্রী ছিলেন। তারা যা বলেছেন, তা আমাকে শাসন করার মতো।
মশিউর রহমান রাঙ্গাঁ বলেন, আমি জাতির জনক সম্পর্কে মূলত এই সংসদে প্রথম দিন প্রথম পার্লামেন্টে ৩৭টি প্রশ্নের উত্তর দিয়েছিলাম। তখন সৈয়দ আশরাফ সাহেব ছিলেন তার পক্ষে। আমি তখন প্রতিমন্ত্রী হিসেবে এখানে দাঁড়িয়ে ৩৭টি প্রশ্নের উত্তর দিয়েছিলাম। আমি অজস্রবার জয়বাংলা বলেছি, অজস্রবার আমি জাতির পিতা সম্পর্কে বলেছি। সুতরাং জাতির পিতা নিয়ে যদি আমি ভুল কিছু বলে থাকি, সেজন্য ক্ষমা চাচ্ছি। নিঃশর্ত ক্ষমা চাচ্ছি।
এসময় পেছন থেকে সরকারি দলের সদস্য মজিবুর রহমান নিক্সন চৌধুরী উচ্চস্বরে বলেন, এই রাঙ্গাঁ চোরা, এই রাঙ্গাঁ চোরা।
রাঙ্গাঁ বলেন, আমরা মহাজোটের সঙ্গে নির্বাচন করেছি। ২০১৪ সালে শীতের মধ্যে আমি ও শাজাহান খান সাহেব, আমরা ১৮ দিন হেলিকপ্টারে দেশের বিভিন্ন জায়গা ঘুরেছি পরিবহন চালু রাখার জন্য। এই সরকারের জন্য কাজ করেছি। সেখানে আমি প্রধানমন্ত্রীকে সন্ত্রাসবাদ, দুর্নীতিবাজ এগুলো বলিনি। আমি বলেছি, বিশ্বজিৎও এই সময় হত্যা হয়েছে, ক্যসিনো নিয়েও বিচার হয়েছে। আমি বলেছি, ১৯৯০ সালের পর যখন খালেদা জিয়া ক্ষমতায় এসেছিলেন, সেসময় ১৮ জন কৃষককে হত্যা করা হয়েছিল, গ্রেনেড হামলা হয়েছিল। এই অস্ত্র বাইরের দেশ থেকে নিয়ে আসা হয়েছিল তৎকালীন বিরোধী দলের নেতাকে হত্যা করার জন্য। এই কথাগুলোর রেকর্ড আছে। তারপরও আমি নিঃশর্তভাবে ক্ষমা চাচ্ছি যদি ভুল করি। অবশ্যই আমি করজোরে তাদের কাছে ক্ষমা চাচ্ছি।
নিজের ক্যারিয়ারে প্রধানমন্ত্রীর ভূমিকা তুলে ধরে সাবেক এই প্রতিমন্ত্রী বলেন, আমি মনে করি, আমার দল ক্ষমতায় থাকলেও হয়তো মন্ত্রী হতে পারতাম না। প্রধানমন্ত্রী আমাকে মন্ত্রী বানিয়েছেন। অনেক স্নেহ করতেন, অনেক ভালোবাসতেন। সেই সম্পর্ক তার সঙ্গে ছিল বলেই তিনি আমাকে প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব দিয়েছিলেন।
ক্ষমা চেয়ে মশিউর রহমান রাঙ্গাঁ বলেন, আমি কাউকে কটাক্ষ করে কিছু বলতে চাচ্ছি না। আমি সব দোষ আমার ঘাড়ে নিচ্ছি। আমার হয়তো বলতে ভুলত্রুটি হতে পারে। আমি তিন দিন ধরে জ্বরে ভুগছি। সে কারণে সংসদে আসতে পারিনি। নূর হোসেন কিন্তু মৃত্যুবরণ করেছেন। আমরা গুলি করে বা এরশাদ সাহেব গুলি করে মারুক বা না মারুক, এটা সত্য যে তিনি মৃত্যুবরণ করেছেন। তার মায়ের কাছে ক্ষমা চেয়ে পত্র দিয়েছি। আমার ভুল-ত্রুটি হয়ে থাকলে ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।
এ সংক্রান্ত খবর—
রাঙ্গাঁকে ক্ষমা চাইতে হবে: নূর হোসেনের মা
বক্তব্য প্রত্যাহারে রাঙ্গাকে ২৪ ঘণ্টার আল্টিমেটাম
নূর হোসেনকে কটাক্ষ: আইনি নোটিশ পাচ্ছেন রাঙ্গাঁ
রাঙ্গাঁর বক্তব্য ব্যক্তিগত, দলের নয়: সংসদে জাপা এমপি
‘অনুতপ্ত’ রাঙ্গাঁর দুঃখপ্রকাশ, বক্তব্য প্রত্যাহার করে বিবৃতি