‘রোহিঙ্গা সমস্যা সৃষ্টির পেছনে জিয়াউর রহমানের হাত ছিল’
১৩ নভেম্বর ২০১৯ ১৯:৪৮
ঢাকা: রোহিঙ্গা সমস্যা সৃষ্টির পেছনে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের হাত ছিল বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট জাতির পিতাকে হত্যার পর বাংলাদেশে হত্যা-ক্যুয়ের রাজনীতি শুরু হয়। এরপর ১৯৭৬-৭৭ সাল থেকে পার্বত্য চট্টগ্রামেও সমস্যা শুরু হয়। আর ১৯৭৮-৭৯ সালে এসে শুরু হয় রোহিঙ্গা সমস্যা। এটাই বাস্তবতা। এই রোহিঙ্গা সমস্যাটি সৃষ্টির পেছনে জিয়াউর রহমানের যে একটা হাত ছিল, এতে কোনো সন্দেহ নেই।
আরও পড়ুন- ‘মানুষের কল্যাণে প্রয়োজনে বাবার মতো জীবনটাও দিয়ে যাব’
বুধবার (১৩ নভেম্বর) বিকেলে একাদশ জাতীয় সংসদের পঞ্চম অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রীর জন্য নির্ধারিত প্রশ্নোত্তর পর্বে ক্ষমতাসীন জোটের সংসদ সদস্য শরিক তরিকত ফেডারেশনের সভাপতি চট্টগ্রাম-২ আসনের এমপি নজিবুল বশর মাইজভাণ্ডারীর এক সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।
সরকারি কর্মচারীসহ যেকোনো ব্যক্তির বিরুদ্ধে অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা
এসময় রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে সরকার সর্বাত্মক উদ্যোগ নিয়েছে বলেও জানান সংসদ নেতা শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, আমরা সবসময় শান্তিপূর্ণ সমাধানে বিশ্বাস করি। এরই মধ্যে আমি উদ্যোগও নিয়েছি।
‘সন্ত্রাসীদের স্থান বাংলাদেশের মাটিতে হবে না’
বাংলাদেশের মাটিতে প্রতিবেশী দেশের কোনো নাগরিকের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চলতে দেওয়া হবে না বলে হুঁশিয়ারি দেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, আমি স্পষ্ট করে বলতে চাই— বাংলাদেশের মাটিতে কোনো দেশের বা আমার প্রতিবেশী কোনো দেশের কেউ কোনো ধরনের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালায়, এটা কোনোভাবে হতে দেওয়া যাবে না। কোনো ধরনের সন্ত্রাসীর স্থান বাংলাদেশের মাটিতে হবে না— এ বিষয়টি আমরা নিশ্চিত করেছি।
তিনি আরও বলেন, নিজ দেশে কেউ সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করতে পারে। এটা তাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়। কিন্তু বাংলাদেশের মাটিকে আমরা কাউকে ব্যবহার করতে দেবো না। আমাদের দেশে থেকে অন্য দেশে কোনো ধরনের সমস্যা তৈরি করুক বা কোনো ধরনের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালাক— এমন কাউকে আমরা কখনো আমাদের দেশে স্থান দেইনি, দেবো না।
‘এমন যারা ছিল, তাদের আমরা আামাদের দেশ থেকে বিতাড়িত করেছি এবং বাংলাদেশ সবসময় শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখতে চায়। সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও সঙ্গে বৈরিতা নয়— এই নীতিতেই আমরা বিশ্বাস করি,’— বলেন শেখ হাসিনা।
‘রোহিঙ্গা ইস্যুতে চীন–ভারতের কাছ থেকে ভালো সাড়া পেয়েছি’
রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে প্রতিবেশী দুই দেশ চীন ও ভারতের সঙ্গে কী ধরনের কূটনৈতিক প্রক্রিয়া নেওয়া হয়েছে— সংসদের হুইপ শহীদুজ্জামান সরকারের এমন এক সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের দু’টি প্রতিবেশী দেশের (চীন ও ভারত) সঙ্গে আমরা এরই মধ্যে আলোচনা করেছি এবং এ বিষয়ে তাদের কাছ থেকে সক্রিয় ভূমিকা আশা করছি।
তিনি বলেন, শুধু ভারত ও চীন নয়, বাংলাদেশসহ মিয়ানমারের সঙ্গে যে কয়েকটি দেশের সীমান্ত আছে, তাদের সঙ্গেই আমরা যোগাযোগ করেছি। থাইল্যান্ড, লাওস— এরকম প্রতিটি দেশের সঙ্গেই মিয়ানমারের ছোট ছোট এথনিক গ্রুপের সমস্যা লেগেই আছে। কাজেই এই সমস্যাগুলো যেন একসঙ্গে সমাধান করা যায়, সে বিষয়ে আমাদের আলাপ-আলোচনা অব্যহত আছে।
রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে চীন ও ভারতের ইতিবাচক ভূমিকার কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, চীন সফরে আমি দেশটির প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতিকে বিষয়টি (রোহিঙ্গা সংকট) গুরুত্বের সঙ্গে দেখতে অনুরোধ করেছিলাম। চীনের রাষ্ট্রপতি আমাকে কথা দিয়েছেন, এই সমস্যা সমাধানে তারা যথাযথ ভূমিকা গ্রহণ করবেন। তারা এর মধ্যে প্রতিনিধিও পাঠিয়েছেন মিয়ানমারে। তারা আলোচনা করছেন এবং মিয়ানমারকে চাপ দিচ্ছেন। একইভাবে ভারত সফরে দেশটির প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গেও কথা হয়েছে। তাছাড়া জাতিসংঘে যখন দ্বিপাক্ষিক আলোচনা হয়, তখনো তার সঙ্গে এ বিষয়ে আলোচনা করেছি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি প্রত্যেকের কাছ থেকেই ভালো সাড়া পেয়েছি। এই সমস্যাটি যে সমাধান হওয়া উচিত, এখন এটা সবাই অনুধাবন করছে। তবে তাদের দৃষ্টিভঙ্গিটা হলো— মিয়ানমারের সঙ্গে এসব দেশের যে সম্পর্ক, সেই সম্পর্ক বজায় রেখেই তারা রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে প্রত্যাবাসন চান।
রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে ফেরত পাঠাতে মিয়ানমারকেই মূল ভূমিকা রাখতে হবে বলে উল্লেখ করেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, মিয়ানমারের সঙ্গে আমাদের চুক্তি হয়েছিল যে তারা রোহিঙ্গাদের ফেরত নেবে। একটি তালিকাও হয়েছিল, সময়ও ঠিক হয়েছিল। কিন্তু আমাদের এখানে যে রোহিঙ্গারা আছে, তাদের মধ্যে হঠাৎ বেশ আন্দোলনের মতো গড়ে উঠল যে তারা যাবেন না। তাদের আরও কিছু ডিমান্ড আছে এবং তারা নিরাপত্তা চায়। তারা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে।
শেখ হাসিনা বলেন, এখন এটা মিয়ানমারের ওপর নির্ভর করে। তারা তাদেরই নাগরিক, যারা আমাদের দেশে রয়েছে। তাদের মাঝে অন্তত একটা বিশ্বাস জাগাতে পারে যে তারা সেখানে ফিরে গেলে নিরাপদ থাকবে। তাহলেই সমস্যাটা সমাধান করা সম্ভব। আমি এইটুকু বলব, আন্তর্জাতিক পর্যায়ে এখন এমনকি আসিয়ান দেশগুলোও যথাযথ উদ্যোগ নিয়েছে এবং ওআইসি আমাদের সমর্থন দিয়েছে।