খালেদার মুক্তি নয়, চুক্তি নিয়ে বিএনপির চিঠি: মাঠ পর্যায়ে ক্ষোভ
২০ নভেম্বর ২০১৯ ০০:০৮
ঢাকা: দেড় মাস আগে ভারতের সঙ্গে সম্পাদিত চুক্তি ও সমঝোতার বিষয়টি জনসম্মুখে প্রকাশের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে চিঠি দিয়ে সমালোচনার মুখে পড়েছে রাজপথের প্রধান বিরোধীদল বিএনপি। ওই চিঠিতে খালেদা জিয়ার মুক্তির ‘ইস্যু’টি উল্লেখ না থাকায় দলটির মাঠ পর্যায়ের কর্মী-সমর্থকেরা খালেদা জিয়ার প্রতি বিএনপি নেতাদের কমিটমেন্ট বা আনুগত্য নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন।
বিএনপির মাঠ পর্যায়ের কর্মীরা বলছেন, ভারত সফরে গিয়ে গত ৫ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যেসব চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক সই করেছে, তা নিয়ে বিস্তারিত সংবাদ প্রকাশ হয়েছে দেশি-বিদেশি গণমাধ্যমে। দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সই করা চিঠিতে সে বিষয়টি পরিষ্কারভাবে উল্লেখ করা হয়েছে।
আরও পড়ুন- ভারতের সঙ্গে কী চুক্তি? প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে জানতে চায় বিএনপি
প্রধানমন্ত্রী বরাবর লেখা বিএনপির চিঠিতে বলা হয়েছে, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক মিডিয়ার সৌজন্যে আমরা জানতে পেরেছি যে আপনি সর্বশেষ ভারত সফরে ৫ অক্টোবর ভারতের সঙ্গে সাতটি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক সই করেছেন। এছাড়া একই সময়ে বাংলাদেশ থেকে ত্রিপুরায় এলপিজি রফতানিসহ তিনটি প্রকল্প উদ্বোধন করা হয়েছে মর্মেও প্রকাশ হয়েছে।
অর্থাৎ, প্রধানমন্ত্রীকে দেওয়া চিঠিতে বিএনপিই স্বীকার করছে, চুক্তির বিষয়টি এরই মধ্যে সংবাদমাধ্যমে প্রকাশ হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এ নিয়ে হৈ-চৈ হয়েছে। প্রতিবাদ করে প্রাণ হারিয়েছেন বুয়েটের একজন শিক্ষার্থী।
বিএনপির চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘ইতোমধ্যে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক মিডিয়া এবং সামাজিক যোগযোগ মাধ্যমে এসকল চুক্তিকে জনগণের স্বার্থের পরিপন্থি তথা বাংলাদেশবিরোধী চুক্তি হিসেবে সমালোচনার ঝড় উঠেছে। কিন্তু বাংলাদেশ সরকার এ বিষয়ে নির্বিকার। অপরদিকে স্বাক্ষরিত এসকল চুক্তিকে জাতীয় স্বার্থবিরোধী মর্মে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেওয়ায় বুয়েটের মেধাবী ছাত্র আবরার ফাহাদকে নৃশংসভাবে পিটিয়ে হত্যা করা হয়।’
বিএনপির কর্মী-সমর্থকরা বলছেন, ঘটনার দেড় মাস পর চিঠি কেন? তাছাড়া এ চিঠি ইমপ্যাক্টটাই বা কী? চিঠির তো কোনো প্রত্যুত্তরও আসেনি সরকারের পক্ষ থেকে। বরং চিঠিকে হাস্যকর ও অন্তঃসারশূন্য হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন ক্ষমতাসীন দলের নেতারা।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সম্প্রতি জাতীয় জীবনে যতগুলো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটেছে, তার সবগুলোর পেছনে ‘গণতন্ত্রহীন’ পরিবেশকে দায়ী করেছে বিএনপি। দলটির নেতারা প্রকাশ্যে বলেছেন, ‘দেশে গণতন্ত্র থাকলে’ এবং ‘গণতন্ত্রের মা’ খালেদা জিয়া বাইরে থাকলে নুসরাত হত্যাকাণ্ড হতো না, আবরারকে কেউ পিটিয়ে মারতে পারত না, ভারতের সঙ্গে ‘দেশবিরোধী’ চুক্তি করা সম্ভব হতো না, পেঁয়াজের দাম বাড়ত না, দ্রব্যমূল্য অসহনীয় পর্যায়ে যেত না।
আরও পড়ুন- ‘রাজনৈতিক স্ট্যান্টবাজি করতেই প্রধানমন্ত্রী বরাবর বিএনপির চিঠি’
বিশ্লেষকেরা বলছেন, বিএনপি যেহেতু দাবি করছে খালেদা জিয়ার অনুপস্থিতির কারণেই দেশে সব রকম ‘অঘটন’ ঘটছে, সেহেতু ভারতের সঙ্গে করা চুক্তি জনসম্মুখে প্রকাশ করার জন্য প্রধানমন্ত্রীকে দেওয়া চিঠির প্রধান এজেন্ডা হওয়া উচিত ছিল খালেদা জিয়ার মুক্তি। কিন্তু পুরো চিঠিতে খালেদা জিয়ার মুক্তির বিষয়টি একবারের জন্যও আসেনি। সঙ্গত কারণেই প্রশ্ন উঠতে পারে, খালেদা জিয়ার মুক্তির ব্যাপারে বিএনপির দৃশ্যমান তৎপরতা ‘মায়াকান্না’ মাত্র!
কেউ কেউ বলছেন, ২০০৮ সালের নির্বাচনের পর টানা ১১ বছর ক্ষমতায় রয়েছে আওয়ামী লীগ। দলটির সভাপতি শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন পুরো সময়। এই ১১ বছরে অসংখ্যবার ইফতার মাহফিল, ঈদ, পহেলা বৈশাখসহ বিভিন্ন সামাজিক ও ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে চিঠি দিয়েছে বিএনপি। কিন্তু কোনো দাবি-দাওয়া আদায় বা কোনো বিষয়ে জানতে চেয়ে এই প্রথম প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি দিল দলটি।
কিন্তু সেই চিঠিতে দলীয় প্রধানের মুক্তির বিষয়টি উল্লেখ নেই। অথচ একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণের শর্তের মধ্যে প্রধানতম ছিল খালেদা জিয়ার মুক্তি। নুসরাত হত্যাকাণ্ডের বিচারের দাবিতে বিএনপির রাজপথের কর্মসূচিতে যুক্ত ছিল খালেদা জিয়ার মুক্তি। আবরার হত্যাকাণ্ডের বিচারের দাবিতে বিএনপির কর্মসূচিতেও যুক্ত ছিল খালেদা জিয়ার মুক্তি। দলের অসুস্থ নেতাদের রোগমুক্তি কামনায় বিএনপি আয়োজিত দোয়া-মাহফিলের সঙ্গে যুক্ত ছিল খালেদা জিয়ার রোগমুক্তি, অঙ্গ-সংগঠনের কারাবন্দি নেদাদের মুক্তির দাবিতে আয়োজিত কর্মসূচিতেও যুক্ত ছিল খালেদা জিয়ার মুক্তি।
কিন্তু মূল জায়গা অর্থাৎ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দেওয়া চিঠিতে খালেদা জিয়ার মুক্তির বিষয়টি স্থান পায়নি। সঙ্গত কারণেই প্রশ্ন উঠেছে, খালেদা জিয়ার মুক্তির চেয়ে ভারতের সঙ্গে করা চুক্তিই অগ্রাধিকার পাচ্ছে বিএনপির কাছে। অথচ দলটির নেতারা মুখে বলছেন, খালেদা জিয়ার মুক্তিই তাদের কাছে প্রধান এজেন্ডা।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে প্রধানমন্ত্রী দফতরে চিঠি পৌঁছে দেওয়া বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল পরে ফোন দিতে বলেন। পরবর্তী সময়ে তাকে ফোন দিলেও তিনি তা রিসিভি করেননি। বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকেও ফোনে পাওয়া যায়নি।
খালেদা জিয়ার মুক্তি নেতাদের আনুগত্য প্রধানমন্ত্রীকে বিএনপির চিঠি বিএনপির চিঠি