মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে জমজমাট আয়োজনে চলছে বটতলা রঙ্গমেলা
২০ নভেম্বর ২০১৯ ১৫:২৩
দেশ-বিদেশের নাটকের দল, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়, প্রাণ-প্রকৃতির পক্ষের গানের দল এবং নাট্যাঙ্গনের ভিন্ন ভিন্ন বিভাগের সকল মানুষকে যুক্ত করে আগারগাঁওয়ের মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে চলছে বটতলা রঙ্গমেলা ২০১৯ আন্তর্জাতিক নাট্যোৎসব। মঙ্গলবার (১৯ নভেম্বর) ছিল এ আয়োজনের চর্তুথ দিন।
বটতলা এক খোলা হাওয়ার ডাক। সেই ডাকে সাড়া দিয়ে অস্ট্রেলিয়ার নৃত্যশিল্পী এরিকা জেইন গোল্ডস্মিথ এসেছিলেন নৃত্য পরিবেশন করতে। মঙ্গলবার বিকেল সাড়ে পাঁচটায় তার পরিবেশনা শুরু করেন। এরিকা তিনি মূলত ভারতীয় ক্ল্যাসিকাল ডান্সের ওপর গবেষণা করছেন। সন্ধ্যা ৬টায় বহিরাঙ্গনের নাদিম মঞ্চে সমগীত গানের দলের পরিবেশনা ছিল সত্যিই অসাধারণ। সমগীতের পরবিশেনা শেষে বটতলার পক্ষ থেকে তাদের হাতে উৎসব স্মারক তুলে দেন সাংবাদিক ও লেখক জাহিদ রেজা নূর।
অস্ট্রেলিয়ার নৃত্যশিল্পী এরিকা জেইন গোল্ডস্মিথ এসেছিলেন নৃত্য পরিবেশন করতে
এরপর রঙ্গমঞ্চে (জাদুঘরের মুল মিলনায়তন) সন্ধ্যা সাতটায় শুরু হয় বটতলা বিভাগীয় সম্মাননা প্রদান র্পব, যেখানে ঢাকা বিভাগের হরিপদ সূত্রধরের হাতে ‘বিভাগীয় সম্মাননা’ তুলে দেন অধ্যাপক আব্দুস সেলিম এবং সেইসঙ্গে তিনি রূপসজ্জাকর মো. আলী বাবুল-এর হাতে তুলে দেন ‘বটতলা অন্তরালের সম্মাননা ২০১৯’।
সম্মাননা পর্বের পরই শুরু হয় নেপাল থেকে আসা আরোহন থিয়েটারের নাটক ‘৪.৪৮ সাইকোসিস’। সারা কেইন-এর লেখা নাটকটি অনুবাদ করেছেন বিপ্লব প্রতীক এবং নির্দেশনা দিয়েছেন মরটেন ক্রো। নাটক শেষে অভিনয় শিল্পী ও কলাকুশলীদের হাতে স্মারক তুলে দেওয়ার পরপরই অধ্যাপক শফি আহমেদের সঞ্চালনায় শুরু হয় নির্দেশকের মুখোমুখি পর্বের রঙ্গআড্ডা।
বিভাগীয় সম্মাননা- ঢাকা বিভাগের হরিপদ সুত্রধর ও অন্তরালের সম্মাননা- রূপসজ্জাকর মো: আলী বাবুল
আজ (২০ নভেম্বর) পঞ্চম দিনের অনুষ্ঠানমালায় রয়েছে- সন্ধ্যা ছয়টায় মুকাভিনয় ‘তাহাদের গল্প’, রাত্রি সাতটায় বিভাগীয় সম্মাননায় রংপুরের ‘সবিতা সেনগুপ্তা’, রাত্রি সাড়ে সাতটায় ইরানের ‘ক্রেজি বডি গ্রুপ’র নাটক ‘মিস্টিরিয়াস গিফট’, রাত নয়টায় অন্তরালের সম্মাননায় ‘রূপসজ্জাকর শুভাশীষ দত্ত তন্ময়’ এবং সবশেষ রাত সাড়ে নয়টায় নির্দেশকের মুখোমুখিতে থাকবেন ইরানের নাট্য নির্দেশক ইয়াসের কাসেব।
১১ দিনব্যাপী আন্তর্জাতিক এই নাট্যোৎসবে প্রতিদিন ‘মূল রঙ্গমঞ্চে’ রাত্রি সাড়ে সাতটা থেকে বটতলাসহ বাংলাদেশের দুটি ও বিদেশের আটটি দল তাদের নাটক পরিবেশন করছে। অংশগ্রহণকারী দেশগুলো হলো- বাংলাদেশ, ভারত, স্পেন, ইরান ও নেপাল। প্রতিদিন বহিরাঙ্গনে ‘নাদিম মঞ্চে’ থাকছে নাটক, গান, পারফরমেন্স আর্ট, কবিতা, মূকাভিনয়, নাচসহ বিভিন্ন আনন্দ আয়োজন, যা মূলত শুরু হয় সন্ধ্যা ছয়টায়। এবার বটতলার আয়োজনে ‘হৃদয়ঙ্গম ঋদ্ধ মঞ্চে’ শিশুদের প্রহর থাকছে দুদিন। ২২ ও ২৩ নভেম্বর। শিশুদের জন্য আয়োজন করা হয়েছে নাটক, পুতুল নাচ, আর্ট ক্যাম্প। নাটক পরিবেশন করবে বরিশালের শব্দাবলী ও চট্টগ্রামের ফুলকি।
এছাড়াও থাকছে আরেকটি ভিন্ন আয়োজন ‘মাস্টার ক্লাস’। ২১, ২২ ও ২৩ তারিখে বিকেল ৫টা থেকে সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টা পর্যন্ত চলবে এ আয়োজন। ক্লাস নেবেন নাট্যজন শিমুল ইউসুফ, চিত্রশিল্পী ঢালী আল-মামুন এবং ভারতের অভিনেতা, নৃত্যশিল্পী ও গায়ক শৈবাল বসু।
বহিরাঙ্গনের নাদিম মঞ্চে সমগীত গানের দলের পরিবেশনা
উৎসবের পাঁচদিন (২১, ২২, ২৩, ২৪ ও ২৬ নভেম্বর) থাকছে পাঁচটি তথ্যচিত্র প্রর্দশনী। এগুলো হলো- তাপস সেনের ওপর নির্মিত তথ্যচিত্র ‘লেট দেয়ার বি লাইট’; ফেরদৌসী মজুমদারের ওপর নির্মিত তথ্যচিত্র ‘ফেরদৌসী মজুমদার– জীবন ও অভিনয়; ‘বিহাইন্ড দ্য কার্টেন – এ জার্নি উইথ বিভাস চক্রবর্তী’; অধ্যাপক সৈয়দ জামিল আহমেদ-এর ওপর নির্মিত ‘দ্য কনজ্যুরর’ এবং নাট্যজন জনাব আতাউর রহমানের ওপর নির্মিত তথ্যচিত্র ‘মঞ্চসারথী’। আরও থাকছে উৎসবের শেষদিন বিভাস চক্রবর্তীর সাথে আলাপ – ‘বটতলা আলাপ ৫’।
মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর নাটকের ভেন্যু হিসেবে একদমই নতুন। আয়োজকদের প্রত্যাশা ছিল এই নাট্যোৎসবের মধ্যদিয়ে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরেও জমে উঠবে প্রাণের মেলা, শিল্প-সংস্কৃতির অঙ্গন হিসেবে মুখরিত হবে এর চারপাশ। সে প্রত্যাশা যেন অনেকটাই পূর্ণ হতে চলেছে। এরই মধ্যে দেখা যাচ্ছে সে সম্ভাবনা। প্রতিদিন অসংখ্য নাট্যর্কমী ও দর্শকদের পদচারণায় মুখরিত হয়ে উঠছে মিলনায়তন ও এর আশপাশ।